উম্মুল বানিন- এর সংক্ষিপ্ত জিবনি

তাঁর নাম ছিল ফাতেমা, উপনাম উম্মুল বানিন। তাঁর পিতার নাম হেযাম এবং মাতার নাম ছিল সামামা অথবা লাইলা। তাঁর স্বামির নাম ছিল আলি ইবনে আবি তালিব (আ.)। তিনি ছিলেন চার জন বীর সন্তানের জননি। তাঁর সন্তানরা ছিল যথাক্রমে হজরত আব্বাস (আ.), আব্দুল্লাহ, জাফর এবং উসমান।

উম্মুল বানিন- এর সংক্ষিপ্ত জিবনি

উম্মুল বানিন, হজরত আব্বাস, কারবালা, ইমাম হুসাইন, ইমামত, ফাতেমা,
এস, এ, এ

নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
তাঁর নাম ছিল ফাতেমা, উপনাম উম্মুল বানিন। তাঁর পিতার নাম হেযাম এবং মাতার নাম ছিল সামামা অথবা লাইলা। তাঁর স্বামির নাম ছিল আলি ইবনে আবি তালিব (আ.)। তিনি ছিলেন চার জন বীর সন্তানের জননি। তাঁর সন্তানরা ছিল যথাক্রমে হজরত আব্বাস (আ.), আব্দুল্লাহ, জাফর এবং উসমান। তাঁর এ চার বীর সন্তানকে তিনি ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দেন এবং তারা সকলেই ইমামতকে রক্ষার জন্য কারবালাতে শহিদ হয়ে যায়। উম্মুল বানিনকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।

উম্মুল বানিনের জন্ম:
ইতিহাসের বিশ্বস্ত গ্রন্থ সমূহে উম্মুল বানিনের জন্ম তারিখ সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়না। তবে হজরত আলি (আ.) এর সাথে উম্মুল বানিনের বিবাহ সংঘটিত হয় ১৯ বছর বয়সে এবং তাঁর জৈষ্ঠ সন্তান হজরত আব্বাস (আ.) জন্মগ্রহণ করেন ২৬ হিজরিতে । সুতরাং এ সূত্র অনুযায়ি তিনি পঞ্চম হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন।
ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যে, ইসলাম প্রচারের পূর্বে থেকে কালাব গোত্রের সাহসি ব্যাক্তিবর্গ ছিলেন হজরত উম্মুল বানিনের পূর্বপুরুষগণ। তাদের গোত্রের সে যুগের বিভিন্ন শাষকগণও তাদের কাছে নত স্বিকার করতে বাধ্যে হতো। আর এ কারণেই আকিল ইবনে আবি তালিব হজরত আলি (আ.) এর বিবাহের জন্য উক্ত গোত্রকে নির্বাচন করেন।

হজরত আলি (আ.) এর উপযুক্ত স্ত্রী উম্মুল বানিন:
হজরত আলি (আ.) এর প্রথম স্ত্রী হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) এর শাহাদতের পরে তিনি তাঁর ভাই আকিলকে বলেন: তিনি যেন তাঁর জন্য এমন এক গোত্রের নারিকে নির্বাচন করেন যেন সে গোত্রের লোকজন হয় অত্যান্ত সাহসি। যেহেতু আকিল ইবনে আবি তালিব আরবের বিভিন্ন বংশ সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখতো সেহেতু তিনি কালাব গোত্রকে যারা মক্কার দক্ষিণাঞ্চলে বসবাস করতো উক্ত গোত্রেকে তিনি নির্বাচন করেন। কেননা সে যুগে আরবে সাহসি হিসেবে উক্ত গোত্রটি খুব পরিচিত ছিল।

উম্মুল বানিনকে বিবাহের প্রস্তাব:
যখন আকিল ইবনে আবি তালিব কালাব গোত্রকে নির্বাচন করেন তখন হজরত আলি (আ.) আকিল ইবনে আবি তালিবকে উম্মুল বানিনের বাবার কাছে তাঁর বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে প্রেরণ করেন। যখন তাঁর পিতা উক্ত প্রস্তাবটির কথা তার কন্যার কাছে উস্থাপন করেন তখন তিনি উক্ত বিবাহে নিজের সম্মতির কথা জানান।
বিবাহের পরে হজরত আলি (আ.) তাঁর আচরণে সন্তুষ্ট হন এবং তাঁকে অন্তরের নিগুড় ভালবাসা দ্বারা এক আদর্শ মা এবং স্ত্রী রূপে গড়ে তোলেন।

বিবাহের প্রথম দিন:
প্রথম যেদিন উম্মুল বানিন হজরত আলি (আ.) এর ঘরে পদার্পণ করেন সেদিন ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) জ্বরের কারণে অসুস্থ ছিলেন। তাদের উক্ত অবস্থা দেখে তিনি তাদের শিয়রে বসে স্নেহময়ি মায়ের ন্যায় সারা রাত তাদের সেবা যত্ন করেন।
বিবাহের কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে তিনি হজরত আলি (আ.)কে অনুরোধ করেন তিনি যেন তাকে উম্মুল বানিন বলে সম্বোধন করেন। কেননা তিনি কখনও চাননি যে, ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) ফাতেমা নামটি শুনে যেন কষ্ট পায় এবং তাঁরা যেন কোনভাবেই এটা মনে না করেন যে তাঁরা তাদের মাকে হারিয়েছে।

হাসনাইন (আ.) এর খাদেম উম্মুল বানিন:
হজরত উম্মুল বানিনের সকল চেষ্টা ছিল যেন ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) তাঁদের মাকে হারানোর বেদনাকে ভুলে যায়। ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) ও উম্মুল বানিনের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সেবা যত্নের কারণে তাঁদের মাকে হারানোর ব্যাথাকে কম অনুভব করতেন।
উম্মুল বানিন সর্বদা ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.)কে তার সন্তানদের উপরে প্রাধান্যতা দান করতেন এবং সম্মান প্রদর্শন করতেন। আর উক্ত কাজটিকে তিনি নিজের ধর্মিয় এবং ঈমানি দ্বায়িত্ব বলে মনে করতেন।

উম্মুল বানিনের সন্তানগণ:
হজরত আলি (আ.) ও উম্মুল বানিনের ঔরষজাত সন্তান ছিলেন চার জন। হজরত আব্বাস (আ.), আব্দুল্লাহ, জাফর এবং উসমান। যেহেতু তিনি ছিলেন চার পুত্র সন্তানের জননি সেহেতু তিনি উম্মুল বানিন নামে ইতিহাসে পরিচিতি অর্জন করেন। তাঁর উক্ত চার বীর সন্তান কারবালাতে ইমাম হুসাইন (আ.) এর জিবন রক্ষার্থে শাহাদত বরণ করেন।

ইমামতের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা:
তিনি ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) কে তার নিজের সন্তাদের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন। আরএ কারণেই তিনি নিজের চার সন্তানকে ইমাম হুসাইন (আ.) এর জিবন রক্ষার জন্য আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দেন।
যখন বাশির মদিনায় কারবালার শহিদদের শাহাদতের খবর নিয়ে আসে তখন তিনি সর্বপ্রথমে ইমাম হুসাইন (আ.) এর খবর নেন। যখন তিনি বাশিরকে দেখেন যে সে কারবালার শহিদদের খবর প্রচার করে বেড়াচ্ছে তখন তিনি বাশিরকে জিজ্ঞাসা করনে হে বাশির! ইমাম হুসাইনের খবর বল। তখন বাশির তাঁকে বলে: হে উম্মুল বানিন! আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য দান করুন। কেননা কারবালাতে আপনার চারজন সন্তান মারা গেছে। তখন তিনি বাশিরকে বলেন: হে বাশির! আগে তুমি ইমাম হুসাইন (আ.) এর খবর বল। আবারও বাশির তাঁকে বলে: হে উম্মুল বানিন! আপনার চারজন সন্তান শাহাদত বরণ করেছেন। তখন তিনি বলেন: আমার সন্তানরা হুসাইন (আ.) এর জন্য উৎসর্গিত হোক আমি হুসাইন (আ.) এর খবর শুনতে চাই। যখন বাশির তাঁকে ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের খবর শুনে তখন তিনি আর আবেগপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলেন: তুমি এ খবরের মাধ্যমে আমার কলিজার রগকে ছিড়ে ফেলেছো। এ দ্বারাই স্পষ্ট হয় যে তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)কে কতটা বেশি ভালবাসতেন।

কারবালার ঘটনাকে জিবন্ত করে রাখার চেষ্টায় উম্মুল বানিন:
উম্মুল বানিন ক্রন্দন এবং শোঁকগাথা দ্বারা কারবালার ঘটনাকে চীরন্তন করে রাখার চেষ্টা করতেন। যেন উক্ত ক্রন্দন এবং শোঁকগাথা দ্বারা ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের ঘটনাটি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌছে যায়। তিনি প্রত্যেকদিন হজরত আব্বাস (আ.) এর সন্তান আব্দুল্লাহ যে কারবালাতে উপস্থিত ছিল তাকে নিয়ে জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং সেখানে ক্রন্দন করতেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন শ্লোগাণের মাধ্যমে সে যুগে বণি উমাইয়ার হুকুমতের বিরোধিতা করতেন। আর এভাবে তিনি বণি উমাইয়ার কুকর্ম এবং তাদের বাস্তব চেহারাকে সে যুগের লোকজনদের কাছে স্পষ্ট করতেন।

আহলে বাইত (আ.) দৃষ্টিতে উম্মুল বানিন:
উম্মুল বানিন এমনভাবে রাসুল (সা.) এর আহলে বাইত (আ.) ভালবাসতেন যে, আহলে বাইত (আ.) এর কাছেও তাঁর একটি বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে। আর তাই বিভিন্ন রেওয়ায়েতে দেখতে পাই যে, হজরত জয়নাব (সা.আ.) কারবালা থেকে ফিরে আসার পরে সর্বপ্রথম উম্মুল বানিনকে তাঁর সন্তানদের শাহাদতের জন্য সমবেদনা জানিয়ে ছিলেন।
এছাড়া হজরত জয়নাব (সা.আ.) তাকে বিভিন্ন ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তার সমিপে উপস্থিত হতেন।

উম্মুল বানিনের মৃত্যু:
তিনি বিভিন্ন কষ্ট ও ব্যাথা সহ্য করে হজরত জয়নাব (সা.আ.) এর ওফাতের পরে ইহলোক ত্যাগ করেন। ইতিহাসে উম্মুল বানিনের মৃত্যুর সঠিক তারিখ সম্পর্কে তেমন সঠিক কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইতিহাসে তার মৃত্যু সম্পর্কিত দুটি মত বর্ণিত হয়েছে। প্রথম: কারো মত অনুযায়ি তিনি সন ৭০ হিজরিতে মারা যান। দ্বিতিয়: কারো মতে তিনি ১৩ই জামাদিউস সানি ৬৪ হিজরিতে মারা যান। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে দ্বিতিয় মতটি। মৃত্যুর পরে তাকে জান্নাতুল বাকিতে ইমাম হাসান, ফাতেমা বিনতে আসাদের কবরের কাছে দাফন করা হয়। তিনি সাধারণ মৃত্যুতে মারা গেলেও আজও তিনি ‍মুমিনদের অন্তরে অমর হয়ে রয়েছেন।

সূত্র:
১- সাইয়েদাতুন নেসাইল আরাব, পৃষ্ঠা ১০।
২- উম্মুল বানিন নোমাদে আয খুদগুযাশতেগি, পৃষ্ঠা ৩৪।
৩- আলামুন নেসাইল মুমিনাত।
৪- উম্মুল বানিন।
৫- শুরুয়ে মারসিয়ে আশুরা।
৬- মাজমুয়ে আসার শহিদ মোতাহহারি, খন্ড ১৭, পৃষ্ঠা ২৪২।
৭- সিতারে দারাখশানে মাদিনা হজরত উম্মুল বানিন।
৮- মাদারে ফার্যান্দে যাহরা।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন