ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী-৯ম পর্ব

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী-৯ম পর্ব

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী-৯ম পর্ব

ইমাম, হুসাইন, ইমাম হুসাইন, কারবালা, মাবিয়া, এজিদ, আমির মাবিয়া, ইমাম হাসান, ইমাম আলি, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী, ইমাম হুসাইন (আ.),

লেখক: মো. মুনীর হোসেন খান

আমীরে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের শাসনের ১০ বছর পূর্তি হলে ইমাম হাসান (আ.)-কে বিষ পান করিয়ে শহীদ করা হয়। আর এ ভয়ানক কাজটি আমীরে মুয়াবিয়ার নির্দেশেই সংঘটিত হয়েছিল। তিনি এ দীর্ঘ দশ বছরে নানা কৌশল,ধোঁকাবাজি,শক্তি প্রয়োগ এবং সীমা লঙ্ঘন করার মাধ্যমে বনি উমাইয়্যার গোত্রতান্ত্রিক ও রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি তাঁর সম্প্রসারণবাদী রাজনৈতিক লক্ষ্য চরিতার্থ করার জন্য মুসলিম উম্মাহর বাইতুল মাল হিসাব-নিকাশ ছাড়াই ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছেন।১ আর যারা তাঁর বিরোধী ছিল,হয় তাদের অনেককে হত্যা,ভীতি প্রদর্শন ও কারারুদ্ধ করার মাধ্যমে ময়দান থেকে সরিয়ে দিয়েছেন নতুবা তাদের মধ্য থেকে কোন কোন ব্যক্তিকে অর্থ (উৎকোচ) এবং উচ্চ রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা প্রদান করে নিজের বশীভূত করেছেন।

একদল লোক এবং একটি পরিবার যাঁরা আসলেই সঠিক ইসলামী চরিত্র,তাকওয়া- পরহেজগারী এবং মহানবী (সা.)-এর আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন কেবল তাঁরাই আমীরে মুয়াবিয়ার সকল হুমকি,অন্যায়-অত্যাচার,বৈষম্য এবং প্রলোভনের সামনে মাথা নত তো করেন নি,বরং মুয়াবিয়া ও বনি উমাইয়্যা এবং তাদের অনুসারীদের যাবতীয় অপরাধের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন এবং প্রতিরোধ করেছেন। তাঁরা হলেন মহানবী (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইত এবং তাদের একনিষ্ঠ অনুসারীবৃন্দ। ইমাম হাসানের শাহাদতের পর ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।এর কারণও অত্যন্ত স্পষ্ট। কারণ,মুয়াবিয়া যে একনায়কতন্ত্র ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন সে কারণে সত্য প্রকাশ করার সৎ সাহস তখনকার আপামর সাধারণ মুসলিম উম্মাহর ছিল না। তবে ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর মুষ্টিমেয় অনুসারী ও সঙ্গী-সাথী সত্যকে সংরক্ষণ এবং সত্য প্রকাশ করার জন্য এমনকি শাহাদাত বরণ করতেও প্রস্তুত ছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁরা কোন কিছু পরোয়া করতেন না। মুয়াবিয়ার প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন এবং আমরা ইতোমধ্যে যা বলেছি তার স্বপক্ষে প্রমাণ হিসাবে মুয়াবিয়ার কতিপয় ইসলামী শরীয়তবিরোধী কার্যকলাপ নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক সূত্র থেকে এখানে উদ্ধৃত করব :

আহলে সুন্নাতের ঐতিহাসিক সূত্রসমূহে আমীরে মুয়াবিয়ার ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ ও অপরাধসমূহের কতিপয় ঘটনা :

আহলে সুন্নাতের গৃহীত নীতিমালার আলোকে আমীরে মুয়াবিয়ার খিলাফত যে বৈধ ছিল না তা ইতিহাসের দৃষ্টিতে অকাট্য ও সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত। তিনি নিজেই এ বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন এভাবে২ : “মহান আল্লাহর শপথ,আমি তোমাদের বিরুদ্ধে এজন্য যুদ্ধ করি নি যে,তোমরা নামায পড়,রোযা রাখ,হজ্ব কর এবং যাকাত দাও। তোমরা তো এসব কাজ করেই থাক। কিন্তু আমি তোমাদের বিরুদ্ধে এজন্য যুদ্ধ করছি যাতে করে আমি তোমাদের ওপর শাসন ও রাজত্ব করতে পারি। আর মহান আল্লাহ্ তোমাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তা আমাকে দিয়েছেন৩।”

এরপর তিনি বেপরোয়াভাবে বলেই ফেলেন : “তোমরা জেনে নাও যে,আমি হাসান ইবনে আলীকে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সেগুলো আমার এ দুই পদতলে রয়েছে,তা আমি কখনই পূর্ণ করব না।”

ইবনে আবীল হাদীদ মুয়াবিয়ার এ উক্তির পরপরই আবু ইসহাক সারীয়ী থেকে উদ্ধৃত করেছেন: মুয়াবিয়া সম্পর্কে আবু ইসহাক বলেছেন : মহান আল্লাহর শপথ,আসলেই তিনি মহা খিয়ানতকারী ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী ছিলেন।

আবদুর রহমান ইবনে শরীফ নাখ্য়ী কুফী বলেছেন : “মহান আল্লাহর শপথ,আসলে এটাই হচ্ছে অবাধ্যতা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করা।”

এ সব উক্তি আসলে ইবনে হাজার প্রমুখ ব্যক্তির প্রতি সমুচিত জবাব যাঁরা আমীরে মুয়াবিয়ার পক্ষে পুস্তক রচনা করেছেন বা করছেন এবং তাঁকে ন্যায়পরায়ণ মুসলমান বলে বিশ্বাস করেন।

তাদেরকে বলা উচিত : প্রকাশ্যে ন্যাক্কারজনকভাবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা কি একজন মুমিন-মুসলমানের কর্মপন্থা হতে পারে? যে ব্যক্তি এভাবে ইসলামের অলঙ্ঘনীয় বিধান লঙ্ঘন করে তাকে কি ‘মুসলিম,‘ন্যায়পরায়ণ’বলে আখ্যায়িত করা যায়? যাঁর স্বভাব-চরিত্র এমন তাঁকে কি করে মহানবী (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণ সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত বলা যেতে পারে?

প্রায় সকল ঐতিহাসিক লিখেছেন যে,মুয়াবিয়া উপরিউক্ত কথাগুলো বলার পর খালিদ ইবনে আরফাতাহকে সামনে নিয়ে এবং হাবীব ইবনে হিমারের কাঁধে পতাকা দিয়ে কুফায় প্রবেশ করে সরাসরি মিম্বারে দাঁড়িয়ে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর উপস্থিতিতেই হযরত আলী (আ.)-কে গালি-গালাজ করতে লাগলেন এবং এরপর তিনি ইমাম হাসান (আ.)-এর নাম উল্লেখ করে তাঁকেও অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ করেছিলেন। ঐ সময় ইমাম হুসাইন (আ.) মুয়াবিয়াকে তাঁর কথার জবাব দেয়ার জন্য দাঁড়ালে ইমাম হাসান (আ.) হাত ধরে তাঁকে বসিয়ে দেন এবং নিজে দাঁড়িয়ে বলেন : “হে আলীর গালমন্দকারী! আমি হাসান ইবনে আলী। আর তুমি মুয়াবিয়া,তোমার পিতা সাখর (আবূ সুফিয়ানের নাম)। আমার মা ফাতিমা,আর তোমার মা হিন্দ। আমার নানা রাসূলুল্লাহ্ (সা.),আর তোমার দাদা হারব্। আমার নানী খাদীজাহ্,আর তোমার দাদী ফাতীলাহ্;অতঃপর মহান আল্লাহ্ আমাদের মধ্য থেকে দু’ব্যক্তিকে অভিশপ্ত করুন অর্থাৎ ঐ ব্যক্তিকে যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বংশজাত এবং ঐ ব্যক্তিকে যে অতীতে ও বর্তমানে (সবসময়) সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং কুফর ও নিফাকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রাচীন। এ সময় মসজিদের মধ্যে উপস্থিত একদল জনতা ‘আমীন’বলছিল।

আবুল ফারাজ বলেন : “এ হাদীসের রাবী যাঁর নাম ইয়াহ্ইয়া ইবনে মুঈন,তিনিও বলেছেন : আর আমিও বলছি : আমীন।”

কতিপয় ঐতিহাসিক বর্ণনা

আহমাদ ইবনে হাম্বল ‘মুসনাদ’গ্রন্থে তাঁর নিজস্ব সূত্রে আবদুল্লাহ্ ইবনে বুরাইদার থেকে বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ্ ইবনে বুরাইদাহ্ বলেছেন :

دخلت أنا و أبي على معاوية فأجلسنا على الفراش ثمّ أتينا بالطّعام فأكلنا ثمّ أتينا بالشّراب فشرب معاوية ثمّ ناول أبي ثمّ قال ما شربته منذ حرّمه رسول الله صلى الله عليه و سلّم ثمّ قال معاوية كنت أجمل شباب قريش و أجوده ثغرا و ما شيء كنت أجد له لدة كما كنت أجده و أنا شابّ غير اللبن أو إنسان حسن الحديث يحدثني

“আমি এবং আমার পিতা মুয়াবিয়ার কাছে গেলে তিনি আমাদেকে কার্পেটের ওপর বসালেন। অতঃপর আমাদের সামনে খাবার আনা হলে আমরা তা খেলাম। এরপর আমাদের সামনে পানীয় (মদ) পরিবেশন করা হলে মুয়াবিয়া তা পান করলেন;অতঃপর আমার পিতাও তা পান করে বললেন : রাসূলুল্লাহ্ (সা.) যখন থেকে তা হারাম করেছেন তখন থেকে আমি তা আর পান করি নি। এরপর মুয়াবিয়া বললেন : আমি ছিলাম কুরাইশের সবচেয়ে সুদর্শন যুবক এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর পরিপাটি দাঁত ও সুশ্রী মুখমণ্ডলের অধিকারী। যৌবনকালে আমি দুধ পান করে যে তৃপ্তি পেতাম অন্য কোন জিনিস (খাদ্য বা পানীয়) থেকে সেই তৃপ্তি পাই নি এবং আমার সাথে কথা বলার মতো কোন সুভাষী মানুষকেও আমি খুঁজে পাই নি।”৪

ইবনে আসাকির তাঁর ‘ইতিহাস’গ্রন্থে,ইবনে সুফিয়ান স্বীয় ‘মুসনাদ’গ্রন্থে,ইবনে কানে এবং ইবনে মান্দাহ্ মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কারাযীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন : হযরত উসমানের শাসনামলে আবদুর রহমান ইবনে সাহল আল আনসারী যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। আর তখন মুয়াবিয়া শামের আমীর ছিলেন। অতঃপর তাঁর পাশ দিয়ে মুয়াবিয়ার জন্য মদের পাত্র বহন করে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি ওগুলোর সামনে বর্শা হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিটা পাত্র ভেঙ্গে ফেলেন। গোলামরা তাঁকে আক্রমণ করে। অবশেষে এ ঘটনা মুয়াবিয়ার কানে পৌঁছলে তিনি বলেছিলেন : “তাঁকে ছেড়ে দাও। কারণ সে বৃদ্ধ এবং তাঁর বিচার-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে।”তখন আবদুর রহমান ইবনে সাহল বলেছিলেন : “কখনই না (অর্থাৎ আমার বিচার-বুদ্ধি কখনই লোপ পায়নি);তবে মহানবী (সা.) আমাদেরকে তা (মদ) উদরে প্রবেশ করাতে নিষেধ করেছেন,আর তুমি কিনা আমাদেরকে মদ্যপান করিয়েছ।”এরপর তিনি মহান আল্লাহর নামে শপথ করে বলেছিলেন,“আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে যা শুনেছি তা মুয়াবিয়ার সাথে দেখা পর্যন্ত যদি আমি বেঁচে থাকি,তাহলে হয় আমি অবশ্যই তার পেট চিরে ফেলব অথবা আমি তাঁর সামনে অবশ্যই মৃত্যুবরণ করব।”

অনেকে হয়তো মনে করে যে,পাপিষ্ঠ ইয়াযীদই মুসলিম বিশ্বে প্রকাশ্যে নিয়মিত মদপান শুরু করেছিল এবং তার প্রসার ঘটিয়েছিল। কিন্তু তাদের অবশ্যই জানা থাকা উচিত যে,ইয়াযীদ নয়,বরং তার পিতাই এ পাপের প্রসারকারী। কারণ আমীরে মুয়াবিয়ার মদপান এবং প্রকাশ্যে তাঁর জন্য উটের পিঠে অথবা গাধার পিঠে করে মদ বহন করে আনার অনেক রেওয়ায়েত ইতিহাস ও হাদীসের গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে। আর তিনি এসব পিতা আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছিলেন। ‘শাজারাতুল খাবীসাহ্’অর্থাৎ বিষবৃক্ষ তুল্য ইসলামের চিরশত্রুআবু সুফিয়ানের বংশ ও বনি উমাইয়্যাহ্ মুসলিম উম্মাহকে এর চেয়ে আর কী বা দিতে পারে? স্মর্তব্য যে,মুয়াবিয়া এবং তাঁর পিতা সারাজীবন মহানবী (সা.) এবং মুসলমানদের সাথে প্রকাশ্য শত্রুতায় লিপ্ত থেকে এবং বড় বড় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে অবশেষে প্রাণে বাঁচার জন্য মক্কা বিজয়ের দিন বাহ্যত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা ছিলেন তুলাকা ও মুআল্লাফাতুল কুলূবের (সাধারণ ক্ষমাপ্রাপ্ত) অন্তর্ভুক্ত। আর আমীরে মুয়াবিয়ার এসব কার্যকলাপ এবং তাঁর মদ্যপান সংক্রান্ত দলিল-প্রমাণ হচ্ছে মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বলের ঐ রেওয়ায়েতটি যা আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি এবং মদীনায় ফিরে এসে খলীফা হযরত উসমানের সামনে তাঁর সম্পর্কে প্রবীণ সাহাবী উবাদাহ ইবনে সামেতের ঐতিহাসিক উক্তি। মুয়াবিয়ার অনুরোধে হযরত উসমান প্রবীণ সাহাবী উবাদাহ্ ইবনে সামেতকে দামেশক থেকে মদীনায় ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসা করেছিলেন : “হে উবাদাহ্!  আমাদের সাথে আপনার কী কাজ?’’তখন উবাদাহ্ উপস্থিত জনতার সামনে বলেছিলেন: “নিশ্চয়ই আমি আবুল কাসিম রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের শাসন কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে যারা যে বিষয় বা কাজকে তোমরা জঘন্য (মুনকার) বিবেচনা কর সেটাকে ভালো (মারূফ) মনে করবে। আর তোমরা যে সব বিষয় ও কাজকে ভালো মনে কর তারা সেগুলোকে জঘন্য মনে করবে। তাই যে পাপ করবে ও মহান আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হবে তার আনুগত্য করা যাবে না। তাই তোমাদের প্রভুর শপথ,(এদের আনুগত্য করে) তোমরাও বিচ্যুত হয়ো না (অথবা এসব বিচ্যুত ব্যক্তি ও শাসকবর্গকে আনুগত্য করার অজুহাত খুঁজে বের করো না)। সুতরাং উবাদার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর শপথ,নিশ্চয়ই অমুকও (মুয়াবিয়া) এদেরই অন্তর্ভ্ক্তু।৫

ইমাম মালিক,নাসাঈ এবং অন্যান্য হাদীস সংকলকগণ তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেছেন : “মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান স্বর্ণ কিংবা চাঁদির একটি পান পাত্র (সিকায়াহ্) ক্রয় করেছিলেন এর চেয়ে অধিক ওজনের (স্বর্ণ বা চাঁদির) বিনিময়ে। আবু দারদা তাঁকে (উদ্দেশ্য করে) বললেন : আমি রাসূলুল্লাহকে এমন কাজ নিষেধ করতে শুনেছি। কিন্তু যদি সমান সমান হয় (তবে বৈধ হবে)। মুয়াবিয়া বললেন : আমি এরূপ কাজে কোন দোষ মনে করি না। আবু দারদা বললেন : (মুয়াবিয়ার ব্যাপারে) আমাকে কে সাহায্য করবে? আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ থেকে হাদীসের সংবাদ দিচ্ছি,আর তিনি আমার কাছে তাঁর নিজ মত বর্ণনা করছেন। (হে মুয়াবিয়া!) তুমি যে স্থানে বসবাস কর,সে স্থানে আমি তোমার সাথে বসবাস করব না। অতঃপর আবু দারদা হযরত উমর ইবনে খাত্তাবের নিকট আগমন করলেন এবং তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলেন। অতঃপর হযরত উমর মুয়াবিয়ার কাছে লিখলেন : এরূপ ক্রয়-বিক্রয় করবেন না। কিন্তু যদি সমান সমান এবং একই পরিমাণের হয় (তবে বিক্রয় করা বৈধ হবে)।”৬

ইমাম মুসলিম এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস আবুল আশআসের সূত্রে বর্ণনা করেছেন : আবুল আশআস বলেছেন : আমরা মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর আমরা অনেক মালে গনিমত অর্জন করি। ঐসব মালে গনিমতের মধ্যে একটি রৌপ্য নির্মিত পাত্রও ছিল। মুয়াবিয়া এক ব্যক্তিকে তা বিক্রি করার নির্দেশ দিলে উপস্থিত জনতা এ ব্যাপারে দ্রুত ছুটে আসতে লাগল। এ বিষয়টা উবাদাহ্ ইবনে সামেতের গোচরীভূত হলে তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং বলেন : নিশ্চয়ই আমি মহানবী (সা.)-কে স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ,রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য,গমের বিনিময়ে গম,যবের বিনিময়ে যব,খেজুরের বিনিময়ে খেজুর যদি সমান সমান এবং একই পরিমাণের না হয় তাহলে তা বিক্রি করার ব্যাপারে নিষেধ করতে শুনেছি। তাই যে বৃদ্ধি করবে,সে সুদ গ্রহণ করে থাকবে। অতঃপর জনতা যেসব জিনিস নিয়েছিল সেগুলো ফেরত দিল। এ কথা আমীরে মুয়াবিয়ার কাছে পৌঁছলে তিনি ভাষণ দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন : “লোকদের হয়েছে কী? তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে হাদীস বর্ণনা করছে অথচ আমরাও তাঁর সাথে ছিলাম এবং তাঁকে সাহচর্য দিয়েছি;আমরা তো এসব কথা তাঁর কাছ থেকে শুনি নি?”অতঃপর উবাদাহ্ ইবনে সামেত দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা পুনরাবৃত্তি করে বললেন : মুয়াবিয়ার পছন্দ না হলেও আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নিকট থেকে যা শুনেছি তা অবশ্যই বলব।”অথবা তিনি বললেন : “এমনকি তিনি অপছন্দ করলেও তাঁর সাথে তাঁর সেনাদলে কেবল এক রাত অতিবাহিত না করার জন্য আমার কিছুই আসে যায় না।”৭

পবিত্র কোরআন,সুন্নাহ্ ও ইজমার দৃষ্টিকোণ থেকে দীনে ইসলামের অন্যতম অকাট্য ও জরুরী বিধান হলো সুদ হারাম। নিঃসন্দেহে সুদ কবীরা গুনাহ্। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বলেছেন : “হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের মধ্যে সুদের যে অবশিষ্ট আশা বা চি‎হ্ন বিদ্যমান রয়েছে তা বর্জন কর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। আর যদি তোমরা তা না কর,তাহলে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে তোমরা যুদ্ধের ঘোষণা দাও।”৮

সুদ না খাওয়া এবং তা বর্জন করা এ আয়াত মোতাবেক মুমিন হওয়ারই পরিচায়ক। আর সুদ হারাম হওয়ার বিষয় অস্বীকার করা এবং তা জায়েয মনে করা আসলে কুফরীর লক্ষণ। যিনি সুদকে হালাল মনে করতেন তাঁর সম্পর্কে পাঠকবর্গ নিজেরাই তাঁদের বিবেক দিয়ে ফয়সালা করবেন।

আবু সুফিয়ানের অবৈধ সন্তানকে বৈধ সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দান

যিয়াদ ইবনে আবীদ অথবা যিয়াদ ইবনে আবীহি (নিজ পিতার সন্তান) অথবা যিয়াদ ইবনে সুমাইয়াকে৯ আমীরে মুয়াবিয়া কর্তৃক আবু সুফিয়ানের সন্তান বলে ঘোষণা দানের ঘটনা তাঁর শরীয়তবিরোধী জঘন্য কার্যকলাপসমূহের অন্তর্ভুক্ত যা ইতিহাসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। যিয়াদ জাহেলিয়াতের যুগের প্রসিদ্ধ চিকিৎসক হারিস ইবনে কালদাহ্ সাকীফার গোলাম আবীদের স্ত্রী সুমাইয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিল। আসলে আবীদের স্ত্রী সুমাইয়ার সাথে আবু সুফিয়ানের ঔরসজাত অবৈধ সন্তান এই যিয়াদ।

প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক,যেমন ইয়াকুবী তাঁর ‘ইতিহাস’গ্রন্থে (২য় খণ্ড,পৃ. ২১৭-২১),আল্লামা মাসউদী তাঁর ‘মুরুজুয্ যাহাব’গ্রন্থে (৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪-১৫),ইবনে আসাকির তাঁর ‘ইতিহাস’গ্রন্থে (৫ম খণ্ড,পৃ. ৪০৯),ইবনে আবীল হাদীদ তাঁর ‘শারহে নাহজিল বালাগাহ্’গ্রন্থে (৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৭০),ইবনে আসীর তাঁর ‘আল কামিল ফীত তারিখ’গ্রন্থে (৩য় খণ্ড,পৃ. ১৯২) এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক বর্ণনার সামান্য পার্থক্য সহকারে লিখেছেন যে,আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পর থেকে আমীরে মুয়াবিয়া ফার্স প্রদেশের শাসনকর্তা যিয়াদ ইবনে আবীদের ক্ষমতা ও শক্তির ব্যাপারে সবসময় শংঙ্কা বোধ করতেন। তিনি তার নিকট কয়েকবার চিঠি প্রেরণ করেন। সর্বশেষ চিঠিতে তিনি তাকে নিজের ‘ভ্রাতা’বলে সম্বোধন করেন এবং মুগীরাহ্ ইবনে শুবাহ্ চাটুকারিতার মাধ্যমে তাকে দামেশকে মুয়াবিয়ার কাছে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। মুয়াবিয়া তাকে নিজ বংশের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শামের মসজিদে একটি সভার আয়োজন করে জনগণকে তাতে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানান। তিনি মিম্বারে আরোহণ করেন এবং যিয়াদকে মিম্বারের নিচের ধাপে বসিয়ে রাখেন। তিনি উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন : “যিয়াদ যে আমার ভাই এবং আবু সুফিয়ানের সন্তান-এ ব্যাপারে যে সব সাক্ষী আছে তারা উঠে সাক্ষ্য দিক।”তখন একদল লোক দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দেয়। তাদের মধ্যে তায়েফের অধিবাসী মদবিক্রেতা আবু মারয়াম সালূলীও ছিল যে উপস্থিত জনতার সামনে যিয়াদের মা সুমাইয়া ও মুয়াবিয়ার পিতার ব্যভিচার ও যিয়াদের জন্মকাহিনী বর্ণনা করে-যা অত্যন্ত অশ্লীল বিধায় এখানে বর্ণনা করা সম্ভব হলো না। এরপর যিয়াদ উঠে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে বলেছিল : “হে লোকসকল! মুয়াবিয়া ও সাক্ষীরা যা বলেছেন তা আপনার শুনেছেন। আমি জানি না যে,কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা। মুয়াবিয়া ও সাক্ষীরা যা বলেছেন সে ব্যাপারে তাঁরা অধিক জ্ঞাত। তবে (আমি এতটুকু জানি যে,)আবীদ একজন ভালো পিতা ছিলেন।”

যাহোক,মুয়াবিয়া মহানবী (সা.)-এর স্পষ্ট নির্দেশ লঙ্ঘন করেছেন। কারণ,মহানবী (সা.) বলেছেন : “সন্তান (বৈধ) শয্যা অর্থাৎ বৈধ যৌন মিলনের সাথে সম্পর্কিত;আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। সাবধান! যে কেউ তার নিজ পিতা ব্যতীত অন্য কারো সাথে রক্তসম্পর্কের দাবী করবে অথবা রক্তসম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে যারা আত্মীয় নয় তাদেরকে ভালবাসবে (অর্থাৎ তাদের সাথে রক্তসম্পর্ক আছে বলে দাবী করবে) মহান আল্লাহ্,সকল ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিশাপ তার ওপর বর্ষিত হবে এবং তার কাছ থেকে কোন দান ও ন্যায়বিচার অর্থাৎ কোন সৎ কাজই গ্রহণ করা হবে না।”১০

হাসান বসরী থেকে বর্ণিত হয়েছে : “মুয়াবিয়ার মধ্যে চারটি চারিত্রিক ত্রুটি ছিল যেগুলোর মধ্য থেকে যে কোন একটি কোন মানুষকে ফাসেক ও পাপী সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট। আর উক্ত চারটি চারিত্রিক ত্রুটির মধ্যে একটি ছিল : ‘সন্তান শয্যা অর্থাৎ বৈধ যৌন মিলনের সাথে সম্পর্কিত;আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর’-মহানবী (সা.)-এর সুস্পষ্ট এ বক্তব্যের বিপক্ষে মুয়াবিয়া কর্তৃক যিয়াদকে নিজ গোত্রভুক্ত করা এবং নিজের ভাই বলে দাবী করা।”১১

ইসলামী দণ্ডবিধি (হদ্দ) কার্যকর না করা

মাওয়ার্দী এবং অন্যান্য হাদীসবেত্তা বর্ণনা করেছেন যে,এক চোরকে মুয়াবিয়ার কাছে আনা হলে মুয়াবিয়া চুরি করার অপরাধে তার হাত কর্তন করার নির্দেশ দেন। তখন ঐ চোরের মা মুয়াবিয়াকে বলে : “হে আমীরুল মুমিনীন! ওর পাপটা আপনি আপনার ঐ পাপসমূহের সাথে যোগ করে নিন যেগুলোর ব্যাপারে আপনি পরে তওবা করে নেবেন।”অতঃপর মুয়াবিয়া ঐ চোরকে ছেড়ে দেন।১২

এখন প্রশ্ন হলো মহান আল্লাহর বিধান কি এক রমণীর আবেদনের ভিত্তিতে স্থগিত করা উচিত? অথচ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : এগুলো হচ্ছে মহান আল্লাহর সীমা। অতএব,তোমরা এগুলো লঙ্ঘন করো না। আর যারা মহান আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে তারাই হচ্ছে জালেম।১৩

পবিত্র কোরআনে সূরা নিসার ১৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে :

و من يعص الله و رسوله و يتعدّ حدوده يُدخله نارا خالدا فيها

“আর যে কেউ মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে,তিনি (আল্লাহ্) তাকে নরকাগ্নিতে প্রবেশ করাবেন যেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।”

و من لم يحكم بما أنزل الله فأولئك هم الكافرون

“যারা মহান আল্লাহ্ কর্তৃক নাযিলকৃত বিধান অনুসারে ফয়সালা করে না তারাই কাফির।”১৪

و من لم يحكم بما أنزل الله فأولئك هم الظّالمون

“যারা মহান আল্লাহ্ কর্তৃক নাযিলকৃত বিধান অনুসারে ফয়সালা করে না তারাই জালিম।”১৫

অযৌক্তিক রায় প্রদান

আল্লামা মাসউদী ‘মুরুজুয যাহাব’গ্রন্থের ৩য় খণ্ডে (পৃ. ৪১) লিখেছেন : সিফ্ফীনের যুদ্ধের পর কুফার এক ব্যক্তি নিজ উটের পৃষ্ঠে সওয়ার হয়ে দামেশকে প্রবেশ করলে ঐ শহরের এক ব্যক্তি তাকে ধরে বলল : “এ মাদী উটটি আমার যা তুমি সিফ্ফীনে আমার নিকট থেকে কেড়ে নিয়েছিলে।”কিন্তু ঐ লোকটি তা অস্বীকার করে। অবশেষে আমীরে মুয়াবিয়ার কাছে এ মামলা নিয়ে যাওয়া হলে তিনি শামের অধিবাসীর দাবী এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তার অনুকূলে রায় দেন এবং কুফার লোকটিকে তার কাছে তা হস্তান্তর করতে বাধ্য করে। কুফার লোকটি তখন বলেছিল : মহান আল্লাহ্ আপনাকে সংশোধন করুন। আসলে এটা মাদী উট নয়,বরং এটা একটা পুরুষ উট। মুয়াবিয়া বললেন : যে হুকুম দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই বলবৎ করতে হবে।

এ ঘটনার পর লোকজন চলে গেলে আমীরে মুয়াবিয়া কুফার অধিবাসীকে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে উটের মূল্য জিজ্ঞাসা করলেন এবং উটের মূল্যের দ্বিগুণ তাকে প্রদান করে বললেন : “আলীর কাছে গিয়ে তাকে জানিও যে,আমি এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে তাকে মোকাবিলা করতে আসব যারা পুরুষ উট আর মাদী উটের মধ্যে কোন প্রভেদ করে না।

বুধবারে জুমার নামায আদায়

আমীরে মুয়াবিয়ার প্রতি শামবাসীরা (সিরিয়াবাসীরা) এতটা আনুগত্য পোষণ করত যে,তিনি তাদেরকে সিফ্ফীনের যুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে বুধবার জুমার নামায আদায় করেন।১৬

আমীরে মুয়াবিয়ার ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক রীতি ও আচার সম্পর্কিত এ সকল ঐতিহাসিক দলিল আমাদের জন্য পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ,বিশেষ করে ইসলামের প্রথম যুগেই ইয়াযীদের মতো শাসকের ক্ষমতায় আরোহণ এবং ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের মতো মহাঘটনা সংঘটনের পটভূমি বুঝতে সহায়ক হবে।

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও টীকা

 

১. এ প্রসঙ্গে প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক আল্লামা মাসউদী তাঁর মুরুজুয্ যাহাব গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৫২ পৃষ্ঠায় (দারুল মারেফাহ্ বৈরুত থেকে প্রকাশিত) লিখেছেন : ইবরাহীম ইবনে আকীল আল বাসরী বলেছেন : সাসাআহ্ ইবনে সাওহান হযরত আলীর চিঠি নিয়ে মুয়াবিয়ার কাছে গেলে একদিন আমীরে মুয়াবিয়া তাঁর এবং আরো গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে বলেন : সমগ্র পৃথিবী মহান আল্লাহর এবং আমি মহান আল্লাহর খলীফা। আমি আল্লাহর সম্পদ থেকে যা নেব তা হবে আমার। আর তা থেকে যা আমি নেব না সেটাও আমার জন্য জায়েয হবে। তখন সাসাআহ্ বলেছিলেন : “ তোমার প্রবৃত্তি তোমাকে যা হবার নয়,সে ব্যাপারে লালায়িত ও আশাবাদী করছে। হে মুয়াবিয়া! মূর্খতাবশত পাপ করো না।

২.ইবনে আবীল হাদীদ প্রণীত শারহু নাহজিল বালাগাহ্,১৬তম খণ্ড,পৃ. ৪৬,বৈরুত থেকে প্রকাশিত।

৩.এটাও আসলে আমীরে মুয়াবিয়ার কুটকৌশল ও জনগণকে বোকা বানানোর একটি পদ্ধতি ছিল। বরং সকল অত্যাচারী শাসকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঠিক এরকমই। তারা যে কোন অন্যায় করেই তা মহান আল্লাহর সাথে জুড়ে দেয় এবং তারা প্রচার করে যে,তা আসলে মহান আল্লাহ্ প্রদত্ত এবং তাঁর ইচ্ছায়ই সংঘটিত হয়েছে। এরা যেন পবিত্র কোরআন কখনই অধ্যয়ন করে দেখে নি যে,মহান আল্লাহ্ রাসূলে পাক (সা.)-এর বাণী উল্লেখ করতঃ তা সত্যায়ন করে বলেছেন :

و ما كنت مُتّخذ المُضلّين عضُدا

“আর আপনি পথভ্রষ্টদেরকে বাহু (সাহায্যকারী) হিসাবে গ্রহণ করেন নি।”

৪.মুসনাদে আহমাদ ইবন হাম্বল,৫ম খণ্ড,পৃ. ৩৪৭,দারু সাদির,বৈরুত থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

৫.মুসনাদে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল,৫ম খণ্ড,পৃ ৩২৫ এবং তারীখে ইবনে আসাকির,৭ম খণ্ড,পৃ. ২১২।

৬.মুয়াত্তা ইমাম মালিক,২য় খণ্ড,রেওয়ায়েত ৩৩,পৃ. ২৭০,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত।

৭.সহীহ মুসলিম,৫ম খণ্ড,পৃ. ৪৩;সুনানে বায়হাকী,৫ম খণ্ড,পৃ. ২৭৭;তাফসীরে কুরতুবী,৩য় খণ্ড,পৃ. ৩৪৯।

৮.সূরা বাকারাহ্ : ২৭৯।

৯.একই ব্যক্তি যিয়াদের কুনিয়াত।

১০.সহীহ বুখারী,২য় খণ্ড,পৃ. ১৯৯,ফারায়েয অধ্যায়;সহীহ মুসলিম,১ম খণ্ড,পৃ. ৪৭১,রেযায়াত অর্থাৎ দুধপান অধ্যায়;সহীহ তিরমিযী,১ম খণ্ড,পৃ. ১৫০।

১১.তারীখে ইবনে আসাকির,৫ম খণ্ড,পৃ. ৩৮১;তারীখে তাবারী,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ১৫৭;ইবনে আসীরের আল কামিল ফীত তারিখ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ২০৯।

১২.তারীখে ইবনে কাসীর,৮ম খণ্ড,পৃ. ১৩৬;আহ্কামুস্ সুলতানীয়াহ্,পৃ. ২১৯।

১৩.সূরা বাকারাহ্ : ২২৯।

১৪.সূরা মায়েদাহ্ : ৪৪।

১৫.সূরা মায়েদাহ্ : ৪৫।

১৬.আল্লামা মাসউদী প্রণীত মুরুজুয্ যাহাব,৩য় খণ্ড,পৃ. ৪১;দারুল মারেফাহ্ বৈরুত থেকে প্রকাশিত।

(সূত্র: জ্যোতি পত্রিকা)

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন