ইমাম মূসা কাযিম (আ.) এর হাদীস- ২

لَا دِينَ‏ لِمَنْ‏ لَا مُرُوَّةَ لَهُ‏ وَ لَا مُرُوَّةَ لِمَنْ لَا عَقْلَ لَهُ وَ إِنَّ أَعْظَمَ النَّاسِ قَدْراً الَّذِي لَا يَرَى الدُّنْيَا لِنَفْسِهِ خَطَراً أَمَا إِنَّ أَبْدَانَكُمْ لَيْسَ لَهَا ثَمَنٌ إِلَّا الْجَنَّةُ فَلَا تَبِيعُوهَا بِغَيْرِهَا

ইমাম মূসা কাযিম (আ.) এর হাদীস- ২
لَا دِينَ‏ لِمَنْ‏ لَا مُرُوَّةَ لَهُ‏ وَ لَا مُرُوَّةَ لِمَنْ لَا عَقْلَ لَهُ وَ إِنَّ أَعْظَمَ النَّاسِ قَدْراً الَّذِي لَا يَرَى الدُّنْيَا لِنَفْسِهِ خَطَراً أَمَا إِنَّ أَبْدَانَكُمْ لَيْسَ لَهَا ثَمَنٌ إِلَّا الْجَنَّةُ فَلَا تَبِيعُوهَا بِغَيْرِهَا
ইমাম কাযিম (আ.) বলেছেনঃ যার ব্যাক্তিত্ব নাই তার দ্বীন নাই, যার আক্বল নাই তার ব্যাক্তিত্ব নাই, সর্বত্তোম ব্যাক্তি হচ্ছে সে যে দুনিয়াকে নিজের জন্য সব কিছু মনে করে না। জেনে রাখ তোমাদের প্রকৃত মূল্য হচ্ছে বেহেস্ত, সুতরাং নিজেকে অন্য কিছুর বিনিময়ে বিক্রয় করো না। (তোহফুল উকুল, পৃষ্ঠা ৪০৭)
উক্ত হাদীসে মুরুওয়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে এবং বিভিন্ন হাদীসে মুরুওয়াতকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
১- মুরুওয়াত চারটি জিনীষের মধ্যে রয়েছেঃ রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার সময় নম্রতা বজায় রাখা, ক্ষমতায় থাকালিন ক্ষমাশীল হওয়া, শত্রুতার সময় নসিহত করা, কারো চাওয়ার পূর্বে তাকে দান কর। (আস সাআদাতুল আবাদিয়া, পৃষ্ঠা ৮৩)
২- মুরুওয়াত হচ্ছে এমন এক পোষাকের নাম যাতে সকল ফযিলত এবং ভাল দিক রয়েছে। (তাসনিফুল গুরুরুল হাকাম, পৃষ্ঠা ২৫৮)
৩- প্রত্যেক মানুষের আক্বল এবং চিন্তাধারা অনুযায়ি তার মধ্যে মুরুওয়াত পরিলক্ষিত হয়। (তাসনিফু গুরারিল হেকাম, পৃষ্ঠা ২৫৮)
৪- মানুষের মূল্যায়ন হয় তার আক্বলের মাধ্যমে এবং তার সৌন্দর্যের মূল্যায়ন হয় তার মুরুওয়াত অনুযায়ি। (তাসনিফু গুরারিল হেকাম, পৃষ্ঠা ২৫৮)
৫- মুরুওয়াত মানুষকে সর্বচ্চো গুণে গুনান্বিত করে। (তাসনিফু গুরারিল হেকাম, পৃষ্ঠা ২৫৮)
৬- মুরুওয়াত মানুষকে সব ধরণের খারাপদিকে ধাবিত হওয়া থেকে বাধা দেয়। (মিযানুল হিকমা, খন্ড ৯, পৃষ্ঠা ১১০)
৭- রাসুল (সা.) বলেছেনঃ আমার আহলে বাইতের মুরুওয়াত হচ্ছে যদি কেউ তাদের প্রতি অত্যাচার করে বা যদি কেউ তাদেরকে বঞ্চিত করে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৪১)
৮- ইমাম সাদিক্ব (আ.) কে জিজ্ঞাসা করা হয় মুরুওয়াত কি? তিনি বলেনঃ খোদা যে সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন তা না করা আর যে সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন তা সম্পাদন করা। (তোহফুল উকুল, পৃষ্ঠা ২৬৪)
৯- ইমাম আলী (আ.) বলেছেনঃ মুরুওয়াতের পরিসীমা হচ্ছে যে কাজ তুমি প্রকাশ্যভাবে করতে ইতস্ত বোধ কর সে কাজ গোপনে করো না। (মিযানুল হিকমা, খন্ড ৯, পৃষ্ঠা ১১৪)
১০- মুরুওয়াতের মানদন্ড হচ্ছে, সত্যবাদিতা এবং সৎ কর্ম। (তাসনিফু গুরারিল হেকাম, পৃষ্ঠা ২৫৯)
১১- ইমাম বাকের (আ.) বলেছেনঃ মুরুওয়াত হচ্ছে কোন কিছুকে এত বেশী পছন্দ করো না যার কারণে তোমাকে লাঞ্ছিত এবং অপমানিত হতে হয় এবং কারো কাছে কিছু চেয় না যেন তোমাকে ছোট হতে হয় এবং কৃপণতা করো না যেন তোমাকে অবাঞ্চিত কথা শুনতে হয় এবং নাদানী করো না যেন তোমার শত্রু তৈরী হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৭৮, পৃষ্ঠা ১৭২)
১২- ইমাম আলী (আ.) বলেছেনঃ মুরুওয়াতের শর্ত হচ্ছে হারাম থেকে নিজেকে বিরত রাখা। (তাসনিফু গুরারিল হেকাম, পৃষ্ঠা ২৫৯)
১৩- ইমাম আলী (আ.) বলেছেনঃ যার মুরুওয়াত নাই তার সাহস নাই। (তাসনিফু গুরারিল হেকাম, পৃষ্ঠা ২৫৯)
১৪- ইমাম আলী (আ.) বলেছেনঃ যার আত্মভরসা কম তার মুরুওয়াত হচ্ছে মূল্যহীন। (মিযানুল হিকমা, খন্ড ৯, পৃষ্ঠা ১১৭ )
উপরে উল্লেখিত হাদীস সমূহ থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তা হচ্ছে মানুষের ভালদিক বা ভালকর্ম সমূহের সমষ্টিকে মুরুওয়াত বলা হয়।
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, আকলের সাথে দ্বীনের সম্পর্ক রয়েছে। সতরাং বুদ্ধিমান ব্যাক্তি হচ্ছে দ্বীনদার উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি যে যদি কোন বাচ্চা বলে যে, আপনি যেখানে দাড়িয়ে আছেন সেখান থেকে কিছুক্ষণ আগে একটি সাপ ছিল। যদি উক্ত কথার ভিত্তিতে ধরেও নিই যে কথাটা একটি বাচ্চা বলেছে, ইয়ার্কি করেছে বা না বুঝে বলেছে। কিন্তু যদি বুদ্ধিমান ব্যাক্তি হয় তাহলে সে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখবে, কেননা যদি কথাটি মিথ্যা হয় তাহলে তার কোন ক্ষতি হবে না আর যদি সত্যি হয় তাহলে তার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সে তখনই সে সাপ সম্পর্কে সতর্ক হয়ে যাবে
এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী এসেছেন এবং বলেছেন জান্নাত ও জাহান্নাম রয়েছে। যদি কারো মধ্যে মুরুওয়াত থাকে তাহলে সে অবশ্যই চিন্তা করবে যে ভাল কাজ করি কেননা যদি জান্নাত বা জাহান্নাম থাকে তাহলে এর পরিণাম আমাকে ভোগ করতে হবে আর যদি না থাকে তাহলেও আমার তেমন কোন ক্ষতি হবে না।
সুতরাং একজন মুমিনের উচিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের জীবনকে পরিচালিত করা যেন পরে তাকে আফসোস করতে না হয়।

 

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন