হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর পূর্বপুরুষদের বিরূদ্ধে  ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র

ইয়াহুদীরা রাসুল (সা.) এর নূরের কথা অনেক আগে থেকেই জানতো। তাই তারা এ চেষ্টাই ছিল যে কিভাবে রাসুল (সা.) এ পবিত্র নূরকে দুনিয়ার বুক থেকে মিটিয়ে দেয়া যায়। তাই তারা একের পর এক রাসুল (সা.) এর পূর্ব পুরুষদের উপরে নজরদারী করতো এবং তাদের একের পর এক হত্যা করতো

হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর পূর্বপুরুষদের বিরূদ্ধে  ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র
এস, এ, এ

ইয়াহুদীরা রাসুল (সা.) এর নূরের কথা অনেক আগে থেকেই জানতো। তাই তারা এ চেষ্টাই ছিল যে কিভাবে রাসুল (সা.) এ পবিত্র নূরকে দুনিয়ার বুক থেকে মিটিয়ে দেয়া যায়। তাই তারা একের পর এক রাসুল (সা.) এর পূর্ব পুরুষদের উপরে নজরদারী করতো এবং তাদের একের পর এক হত্যা করতো বা হত্যার চেষ্টা চালাতো। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

১- হজরত হাশিমঃ
হজরত হাশিম ছিলেন রাসুল (সা.) এর পূর্ব পুরুষ তিনি ছিলেন মক্কাবাসী। কিন্তু তাঁর কবর হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা নামক স্থানে! একদা তিনি মক্কা থেকে ব্যাবসার জন্য শামের দিকে রওনা হন। পথিমধ্যে তিনি ইয়াসরাবে অবস্থান করেন এবং সেখানে আমরু বিন যায়দ লাবিদ খাযরাজি যিনি ছিলেন এক গোত্রের প্রধান তার বাড়িতে মেহমান হয়ে আসেন এবং হাশিম আমরুর কন্যা সালমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং বিবাহের পর হাশিম তার স্ত্রীকে মক্কায় নিয়ে আসেন। যখন সালমা গর্ভবতি হয় তখন বিবাহের শর্ত অনুযায়ি তাকে তার পরিবারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। হাশিম তাকে মদীনাতে তার আত্মীয় স্বজনের কাছে তাকে রেখে শামে ব্যাবসার কাজে চলে যান এবং যাবার সময় তিনি তার স্ত্রীকে বলেন যে হয়তো আমি আর এ সফর থেকে ফিরে আসব না। খোদা তোমাকে একটি পুত্র সন্তান দান করবেন। তুমি তাকে সাবধানতার সহিত রক্ষনাবেক্ষণ করবে।
হাশিম ব্যাবসার করার জন্য গাজাতে চলে যায় এবং ফেরার রাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি তাঁর সঙ্গিদের বলেনঃ তোমরা মক্কায় ফিরে যাও এবং যাওয়ার পথে মদীনাতে যখন পৌছাবে, তখন আমার স্ত্রীকে আমার সালাম পৌছাবে এবং তাকে বলবে আমার আগত সন্তানের জন্য আমি খুবই চিন্তিত। তারপর তিনি কাগজ ও কলম চান এবং ওসিয়ত নামা লিখেন। যার বিষয়বস্তু ছিল তার সন্তানের রক্ষণাবেক্ষন সম্পর্কে। ( বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৫, ৫১, ৫৩)

হজরত মূসা (আ.) তার উম্মতকে রাসুল (সা.) এর আগমণের খবর দিয়েছিল। তখন থেকে ইয়াহুদীরা রাসুল (সা.) এর পূর্বপুরুষ এবং বংশ সম্পর্কে অবগত ছিল। কেননা তারা চেহারা শনাক্তকরণে বিশিষজ্ঞ ছিল যা তাদের পূর্বপুরুষেরা হজরত মূসা (আ.) থেকে শিখেছিল। সুতরাং হাশিম তাদের তাদের কাছে একটি পরিচিত চেহারা ছিল এবং তারা জানতো যে হজরত মোহাম্মাদ (সা.) তার বংশ থেকেই আসবে। কিন্তু তারা হাশিমকে হত্যা করতে দেরী করে ফেলে কেননা তাঁর মৃত্যুর আগেই তার সন্তান তার স্ত্রীর গর্ভে লালিতপালিত হচ্ছিল।

২- আব্দুল মোত্তালেবঃ
হাশিমের সন্তান মোত্তালেব মদীনাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার নামকরণ করা হয় শাইবা। হাশিমের মা তার বাবার দেয়া ওসিয়ত অনুযায়ি তার রক্ষণাবেক্ষন করতে থাকেন এবং তিনি পরে আর বিবাহ করেননি।
একদা বণী আব্দে মানাফের একজন লোক ইয়াসরাবে ব্যাবসার কাজে যাওয়ার সময় দেখে যে, এক বাচ্চা খেলছে আর বলছে সে হচ্ছে হাশিমের সন্তান। সে উক্ত কথাটি মোত্তালিবকে অবজ্ঞত করে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৪, ১২২) তখন মোত্তালিব শাইবাকে গোপনে মক্কাতে নিয়ে যায়।(বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৫, ১৫৮)

অন্য বর্ণনামতে মোত্তালিব তার মায়ের সাথে আলোচনার মাধ্যমে উক্ত কাজটি করে। (আল জাযারি, খন্ড ২, ৬) যখন মোত্তালিব ও শাইবা আবার যখন ফিরে আসে তখন ইয়াহুদীরা তাদেরকে চিনে ফেলে এবং তাদের উপরে হামলা করে। তখন তারা অলৌকিকভাবে শত্রুদের আক্রমন থেকে বেচে যায়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৫, ৬০) যখন মোত্তালিব তাকে মক্কাতে নিয়ে আসে তখন জনগণ তাকে দেখে মনে করে যে সে হচ্ছে মোত্তালিবে গোলাম এবং তারা তাকে আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের গোলাম) বলে ডাকে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি আব্দুল মোত্তালিব নামেই ইতিহাসে পরিচিত হন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৫, ১২৩)

৩- আব্দুল্লাহঃ
ইয়াহুদীরা আব্দুল মোত্তালিবকে হত্যা করতে না পারলে আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। আব্দুল্লাহ মদীনাতে জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু তার কবর আছে অন্য স্থানে। ইয়াহুদীরা অনেকবার আব্দুল্লাহকে হত্যার চেষ্টা করেছে কিন্তু তারা প্রত্যেকবার বিফল হয়েছিল। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৫, ১১০, ৯০)

একদা ওহাব বিন আব্দে মানাফ মক্কার একজন ব্যাবসিকের সাথে আব্দুল্লাহকে দেখে তখন তার বয়স ছিল ২৫ বছর। সে দেখে যে ইয়াহুদীরা চাচ্ছিল তাকে ঘিরে ফেলে হত্যা করবে। ওহাব ভয় পেয়ে বণী হাশিমদের মাঝে যায় এবং সাহায্যের করার জন্য চিৎকার করে বলতে থাকে আব্দুল্লাহকে শত্রুরা মেরে ফেললো, তোমরা তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসো। কিন্তু আব্দুল্লাহ লাঠির মজেযায় বেচে যায় এবং ওহাব তার সেই লাঠির মজেযার সাক্ষি ছিল। সে আব্দুল্লাহর চেহারায় নবুওয়াতের নূরের প্রভাবকে অবলোকন করে। সে আব্দুল্লাহর সাথে তার কন্য আমেনার বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাদের বিবাহ সংঘটিত হয়।

বর্ণিত হয়েছে যে,ইয়াহুদীরা একজন ইয়াহুদী নারী ধর্মজাজককে ঠিক করে যেন আব্দুল্লাহর সাথে বিবাহ করতে পারে এবং যার ফলে রাসুল (সা.) যেন এই নারী থেকে জন্মলাভ করে। সূতরাং উক্ত নারীটি প্রত্যেকদিন আব্দুল্লাহর কাছে আসতো এবং তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিত। কিন্তু আব্দুল্লাহর সাথে আমেনার বিবাহ হয়ে গেলে সে তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিত না। আব্দুল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করে কেন তুমি আমার বিবাহের পরে আর আমাকে কিছু বলছো না? সে উত্তরে বলে যে নূর আমি তোমার চেহারায় দেখতে তা আর আমি দেখতে পাই না। (ইবনে শাহর আশুব, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৬)

আমিনা যখন গর্ভবতি ছিলেন তখন আব্দুল্লাহ শাম থেকে ব্যাবসা করে ফিরে আসার পথে তিনি মারা যান। (তাবারী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৯৮) আব্দুল্লাহকে এমন ভাবে মেরে ফেলা হয় যে ইতিহাসের কোথাও বর্ণিত হয়নি যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

৪- হজরত মোহাম্মাদ (সা.):
একজন ইয়াহুদী আলেম এসে দারুন নাদওয়াতে জিজ্ঞাসা করে যে, গতকাল কি তোমাদের মধ্যে কারো সন্তান জন্মলাভ করেছে, যার নাম হচ্ছে আহমাদ যার মাধ্যমেই ইয়াহুদী জাতী ধ্বংস হবে? সবাই বলে না তখন সে বলে যে, তাহলে মনে হয় ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেছে। অতপর লোকজন অনুসন্ধান করে দেখে যে, আব্দুল্লাহর সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। তখন তারা উক্ত লোকটিকে খবর দেয় যে হ্যাঁ আমাদেরে এখানে একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করেছে! ইয়াহুদী লোকটি তাদেরকে বলে যে তারা যেন তাকে উক্ত নবজাতকের কাছে তাকে নিয়ে যায়। তারা তাকে উক্ত নবজাতকের কাছে নিয়ে আসে। সে বাচ্চাটিকে দেখে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং জ্ঞান আসার পরে বলেঃ খোদার শপথ! কেয়ামত পর্যন্ত বণী ইসরাইল থেকে নবী নির্বাচন করা হতো। কিন্তু এ বাচ্চাটি হচ্ছে সেই বাচ্চা যে বণী ইসরাইলকে ধ্বংস করবে। কুরাইশের লোকেরা উক্ত কথা শোনার পরে আনন্দিত হয়। উক্ত ব্যাক্তিটি বলে যে, সে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব লোকেরা তার কথা স্মরণ করবে। (কুলাইনী, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩০০)

অতপর রাসুল (সা.) তাঁর জন্মের পর থেকেই সবার মাঝে পরিচিত হয়ে যান। অবশেষে রাসুল (সা.) ইয়াহুদীদের সকল বাধা পেরিয়ে এ ধরায় আসেন। তারপরও  ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি বরং তারা আরো কঠোরভাবে রাসুল (সা.) ও ইসলামের সাথে শত্রুতা করতে থাকে।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন