সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৮৯-৯৪

সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৮৯-৯৪

সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৮৯-৯৪
সূরা আম্বিয়ার ৮৯ ও ৯০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَزَكَرِيَّا إِذْ نَادَى رَبَّهُ رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنْتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ (89) فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَوَهَبْنَا لَهُ يَحْيَى وَأَصْلَحْنَا لَهُ زَوْجَهُ إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ (90)
“এবং জাকারিয়ার কথা স্মরণ করুন, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করেছিল; হে আমার পালনকর্তা আমাকে একা রেখ না। তুমি তো সর্বোত্তম ওয়ারিশ।” (২১:৮৯)
“অতঃপর আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তাকে দান করেছিলাম ইয়াহিয়াকে এবং তার জন্য তার স্ত্রীকে প্রসবযোগ্য করেছিলাম। তারা সৎকর্মে নিয়োজিত হতো, আশা ও ভীতিসহ আমাকে ডাকত এবং সারাক্ষণ তারা ছিল আমার কাছে বিনীত।” (২১:৯০)

গত পর্বে আসরে আল্লাহর নবী হযরত আইয়ুব, ইদ্রিস ও ইউনুস (আ.)এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। আর দুই আয়াতে আল্লাহর আরো দুই নবী হযরত জাকারিয়া ও তার সন্তান হযরত ইয়াহিয়া (আ.)’র ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআনের অন্য কয়েকটি আয়াতেও যেমনটি আল্লাহ বলেছেন: হযরত জাকারিয়া বৃদ্ধ হয়ে গেলেও কোন সন্তানের পিতা হতে পারেননি। কারণ, তার স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা। সেজন্য আল্লাহর কাছে তিনি সন্তান দাবী করে বললেন: হে আল্লাহ আমাকে এমন একটি সন্তান দান কর যে তোমার পথে চলবে এবং তোমার দ্বীন প্রচার করবে।

আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তার স্ত্রীকে সন্তান ধারণের ক্ষমতা দান করেন। তাকে একটি সন্তান দান করেন এবং জাকারিয়া তার নাম রাখেন ইয়াহিয়া। এ আয়াতের পরবর্তী অংশে এ নবী বংশের গুণাবলী বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন: তারা সুখে-দুঃখে সব অবস্থায় আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়ে পড়তেন। তারা সব সময় ভালো কাজ করতেন; বিশেষ করে বঞ্চিত ও অবহেলিতদের সাহায্যে ছুটে যেতেন।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. আল্লাহর রহমত থেকে কখনোই নিরাশ হওয়া উচিত নয়। আমাদের কর্তব্য হল আল্লাহর কাছে আবেদন-নিবেদন ও দোয়া করা। আল্লাহ ভালো মনে করলে আমাদের ডাকে তিনি সাড়া দেবেন।
২. উত্তম পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে ভালো কাজে অংশগ্রহণ করেন, তারা কখনই বঞ্চিতদের কথা ভুলে যান না।
৩. আল্লাহর কাছে দোয়া করার সময় নিজের চাহিদাগুলোকে তুলে ধরার পাশাপাশি নিজের অপরাধের জন্য আল্লাহর ক্ষমাও চাইতে হবে।

সূরা আম্বিয়ার ৯১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَالَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهَا مِنْ رُوحِنَا وَجَعَلْنَاهَا وَابْنَهَا آَيَةً لِلْعَالَمِينَ (91)
“এবং সেই নারীর কথা স্মরণ করুন, যে তার কামপ্রবৃত্তিকে বশে রেখেছিল, অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার রুহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলাম।” (২১:৯১)
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আগে হযরত ঈসা (আ.) ছিলেন সর্বশেষ নবী। এ আয়াতে হযরত ঈসার জন্মের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে: পুত-পবিত্র হযরত মারিয়াম নিজের কামপ্রবৃত্তিকে বশে রেখেছিলেন বলে আল্লাহর কুদরতে তার গর্ভে ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন।

সূরা আম্বিয়ার এ আয়াতের শেষে হযরত মারিয়ামের পবিত্রতা ও মহত্তের কথা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন: এটি এজন্য দেখানো হয়েছে যাতে মানুষের মধ্যে এ ভুল ধারণা সৃষ্টি না হয় যে, কেবলমাত্র পুরুষই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে- নারী নয়। বরং বাস্তবতা হলো- পুরুষের পাশাপাশি নারীও আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে পারে। নবীদের পাশাপাশি তাদের নামও বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার জন্য নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য নেই। যে কেউ আল্লাহর কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদা পেতে পারে।
২. মায়ের পবিত্রতা সন্তানের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে যথেষ্ট সহায়ক।

সূরা আম্বিয়ার ৯২ ও ৯৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ (92) وَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ كُلٌّ إِلَيْنَا رَاجِعُونَ (93)
“(হে মানুষ) নিঃসন্দেহে তোমাদের জাতি তো একই জাতি এবং আমি তোমাদের একমাত্র প্রতিপালক, সুতরাং আমার ইবাদত কর।” (২১:৯২)
“কিন্তু মানুষ নিজেদের কার্যকলাপ দিয়ে মতাদর্শের বিষয়ে পরস্পর বিভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের সবাই অবশেষে আমার কাছে ফিরে আসবে।” (২১:৯৩)

আগের আয়াতগুলোতে কয়েকজন নবীর ঘটনাবলী উল্লেখের পর এ আয়াতে আল্লাহ বলেন: সব নবী ছিলেন এক আল্লাহর উম্মত এবং সবাই একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছেন। যদিও তারা স্থান ও সময়ের চাহিদা অনুযায়ী নিজ নিজ গোত্রের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন। সব নবীই মানুষকে একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন এবং শিরক ও জুলুম থেকে দূরে থাকার আহবান জানিয়েছেন। তারা সবাই এক আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাকে ছাড়া অন্য সব উপাস্যকে প্রত্যাখ্যান করতে বলেছেন। তারপরও বহু মানুষ আল্লাহর এ পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে বিভেদ-বিসংবাদে লিপ্ত হয়েছে। তারা একত্ববাদের পথ ত্যাগ করে শিরকের পথ বেছে নিয়ে পথভ্রষ্ট হয়েছে।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
১. আল্লাহর সব নবীর ধর্ম ছিল এক। সবাই একই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছেন।
২. সব ধর্মের বানী হল একত্ববাদ। আর সব ধর্মকে একত্ববাদের দিকে আহবান করেছে ইসলাম। কিন্তু অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের জন্য আলাদা আলাদা পথ বেছে নিয়েছে।

সূরা আম্বিয়ার ৯৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
فَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِ وَإِنَّا لَهُ كَاتِبُونَ (94)
“অতঃপর যে বিশ্বাসী অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, তার প্রচেষ্টা অকৃতজ্ঞচিত্তে অগ্রাহ্য করা হবে না এবং আমি তা লিখে রাখি।” (২১:৯৪)

আল্লাহর একটি নীতি হল সৎ কাজের পুরষ্কার দেয়া। মজার ব্যাপার হল- আল্লাহ সৎ ব্যক্তিদের সামনে নিজেকে কৃতজ্ঞ হিসেবে তুলে ধরে বলেন: তোমরা মনে কর না তোমাদের সৎ কাজ আমি ভুলে যাব এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এর প্রতিদান দিব না। বরং আমি তোমাদের সব ভাল কাজ দেখছি ও হিসাব করে রাখছি। সময়মত তার পুরষ্কার আমি দেব।

সৎ কর্মের প্রতিদান দেয়ার ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আল্লাহর উপর ঈমান থাকাকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ বলেন: যদি মুমিন কিছু ভাল কাজ করে এবং তা আল্লাহর পছন্দনীয় হয় তাহলে তিনি তা তাদের আমলনামায় লিখে রাখবেন।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় কয়েকটি দিক হলো:
১. ইসলাম ধর্মে পরোপকার ও সৎ কাজ সব সময় প্রশংসনীয়। তবে সেজন্য পুরস্কার পাওয়ার শর্ত হচ্ছে, সৎ কাজ করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে।
২. আল্লাহর তৈরি ব্যবস্থায় কোনো ভালো কাজই প্রতিদানবিহীন থাকবে না। এই ভালো কাজ অন্য কেউ দেখলো নাকি দেখলো না তা বিবেচ্য বিষয় নয়।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন