আয়েম্মাদের (আ.) প্রত্যাবর্তনের পরে তাদের হুকুমতের অবস্থা

আয়েম্মাদের (আ.) প্রত্যাবর্তনের পরে তাদের হুকুমতের অবস্থা

আয়েম্মাদের (আ.) প্রত্যাবর্তনের পরে তাদের হুকুমতের অবস্থা

এস, এ, এ

আয়েম্মাদের (আ.) (রাজআত) প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি হচ্ছে একটি নিশ্চিত বিষয়। কিন্তু তাদের প্রত্যাবর্তন এবং এবং তাদের হুকুমতের ধরণ সম্পর্কে তেমন কিছুই বর্ণিত হয়নি, শুধুমাত্র ইমাম হুসাইন (আ.) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি দুনিয়ার বুকে আবার হুকুমত প্রতিষ্ঠা করবেন। বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম মাহদী (আ.) এর হুকুমতের ১৯ বছর পরে ইমাম হুসাইন (আ.) এর প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে অন্যান্য ইমামদের প্রত্যাবর্তন শুরু হবে। তারপরে হজরত আলী এবং রাসুল (সা.) প্রত্যাবর্তন করবেন। তবে ইমাম মাহদী (আ.) এর যুগেই কি সকল ইমামের প্রত্যাবর্তন ঘটবে কিনা এ বিষয়টি এখন উহ্য রয়েছে এবং তাদের হুকুমত সম্পর্কেও তেমন বিস্তারিতভাবে কিছুই বলা হয়নি। তবে একটি সার্বিক আলোচনা ইমাম আলী (আ.) করা হয়েছে তা নিন্মে উল্লেখ করা হলোঃ
১- ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.) থেকে বর্ণিতঃ ইমাম মাহদী (আ.) এর ১৯ বছর হুকুমতের পরে ইমাম হুসাইন (আ.) প্রত্যাবর্তন করবেন এবং তিনি তার নিজের, সাহাবী এবং সন্তান সন্তানাদীর রক্তের বদলা নিবেন এবং তার শত্রুদের হত্যা করবেন অথবা বন্দি করবেন তারপর হজরত আলী (আ.) প্রত্যাবর্তন করবেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১০৩-১০৪)
২- ইমাম হুসাইন (আ.) সর্বপ্রথম প্রত্যাবর্তন করবেন। ((বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫৩, পৃষ্ঠা ৬৪)
৩- মোফাযযাল এর প্রসিদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন ইমাম মাহদী (আ.) তার হুকুমতকে কায়েম করবেন তখন ইমাম হুসাইন (আ.) ১২ হাজার সঙ্গী সাথী নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবেন। তারপরে সিদ্দীকে আকবর প্রত্যাবর্তন করবেন এবং সাইয়েদে আকবর রাসুল (সা.) আনসার ও মুহাজির এবং যারা বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল তারাও তাঁর সাথে প্রত্যাবর্তন করবেন।(হাককুল ইয়াক্বীন, পৃষ্ঠা ৬৬৮)
৪- হজরত আলী (আ.) এর হুকুমত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সমস্ত আম্বিয়া এবং মুমিনিনরা তাঁর হুকুমতকালে প্রত্যাবর্তন করবেন এবং রাসুল (সা.) তাঁকে ইসলামের পতাকা দান করবেন এবং সমস্ত সৃষ্টিকূলকে তার অধিনে দান করা হবে এবং তিনি হবেন তাদের সকলের ইমাম।(বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫৩, পৃষ্ঠা ৭০)
উপরোল্লেখিত রেওয়ায়েত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, হজরত আলী (আ.) এর যুগেই সকল আয়েম্মা এবং মুমিনিনদের প্রত্যাবর্তন হবে এবং ইমাম মাহদী (আ.) এর বিশ্বব্যাপী শাসন ব্যাবস্থাকে তাঁরাই অব্যাহত রাখবেন। আল্লামা মাজলিসি এ সম্পর্কে বলেছেনঃ উক্ত প্রত্যাবর্তন সমূহের বৈশিষ্ট সমূহ সম্পর্কে তেমন কিছুই বলা হয়নি যে, তাদের এই প্রত্যাবর্তন কি ইমাম মাহদী (আ.) এর যুগেই হবে নাকি তার পরে? আবার বলা হয়েছে তাদের প্রত্যাবর্তনটি ইমামতের ধারাবাহিকতা অনুযায়ি হবে।
শেইখ হাসান বিন সুলাইমান বলেছেনঃ প্রত্যেকটিই ইমাম ধারাবাহিকভাবে তাদের ইমামতের যুগ অতিবাহিত করবেন এবং যখন তা ইমাম মাহদী (আ.) পর্যন্ত পৌছাবে, তখন তিনিও আবার প্রত্যাবর্তন করবেন। (হাক্বুল ইয়াক্বীন, পৃষ্ঠা ২৬১-২৬২)
সুতরাং আল্লামা মাজলিসীর বর্ণনানুযায়ি আমাদের এসব বিষয় থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ এবং শুধুমাত্র এতটুকু বিশ্বাস রাখা উচিত যে, রাসুল, ইমাম এবং আম্বিয়ারা আবার প্রত্যাবর্তন করবেন।
এখানে একটি প্রশ্নের উত্থাপন হতে পারে যে,
প্রশ্নঃ আয়েম্মা (আ.) গণ প্রত্যাবর্তনের পরে কত বছর তারা জিবীত থাকবেন? এবং কিভাবে তারা আবার কিয়ামতে উপস্থিত হবেন?
উত্তরঃ আমরা বলতে পারি না যে, তারা কত বছর জিবীত থাকবেন এবং কত বছর তারা হুকুমত করবেন এ সম্পর্কে তেমন কিছুই উল্লেখ করা হয়নি শুধুমাত্র একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যা হজরত ইবনে আব্দুল্লাহ বিন হুসাইন (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তারা এত বছর হুকুমত করবেন যে তাদের মাথার চুল এবং ভ্রু সাদা হয়ে যাবে। (হাক্বুল ইয়াক্বীন, পৃষ্ঠা ২৫২)
আবার অনেক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক ইমাম (আ.) এর যুগের অত্যাচারী শাসকেরাও তাদের সাথে প্রত্যাবর্তন করবেন। আল্লামা মাজলিসী বলেনঃ কিছু মুমিন, কাফের, নাসেবী (আহলে বাইতের প্রতি হিংসা পোষণকারী) এবং ইমামদের বিরোধিরাও প্রত্যাবর্তন করবে এবং উক্ত বিষয়গুলোতে সন্দেহ করা ঠিক না। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬১)
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, মুমিনরা তাদের শত্রুদের কাছ থেকে বদলা নিবে এবং তাদেরকে হত্যা করবে যেমনঃ
• সাআদ বিন আব্দুল্লাহ ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেক ইমামের যুগের মুমিন এবং অত্যাচারীরা প্রত্যাবর্তন করবে যেন খোদায়ী বিচার তাদের মাঝে কায়েম হতে পারে এবং মুমিনরা তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬১, খন্ড ৫৩, পৃষ্ঠা ৪২)
• ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.) থেকে বর্ণিত
إِنْ نَشَأْ نُنَزِّلْ عَلَيْهِمْ مِنَ السَّماءِ آيَةً فَظَلَّتْ أَعْناقُهُمْ لَها خاضِعين
আমি যদি ইচ্ছা করি তাহলে আকাশ থেকে তাদের কাছে কোন নিদর্শন নাযিল করতে পারি। অতঃপর তারা এর সামনে নত হয়ে যাবে। (সূরা শোআরা- ৪)
তিনি বলেনঃ উক্ত আয়াতটি হজরত আলী (আ.) এর শানে নাযিল হয়েছে তাঁর সামনে বণি উমাইয়ার মাথা লজ্জায় বা অপমানে নত হয়ে যাবে এবং হজরত আলী (আ.) যাওয়ালের (যোহরের নামাজের প্রথম সময়) সময় তিনি প্রত্যাবর্তন করবেন যেন লোকেরা তাঁকে চিনতে পারে। তারপর তিনি বণী উমাইয়ার জালিম ব্যাক্তিদেরকে হত্যা করবেন যদি তারা গাছের ভিতরেও যেয়ে লুকায়। তখন গাছ বলবে যে বণী উমাইয়ার একজন জালিম আমার মাঝে লুকিয়ে আছে তাকে হত্যা কর। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫৩, পৃষ্ঠা ১০৯-১১০)
৩- মোফাযযাল থেকে বর্ণিত তার প্রসিদ্ধ হাদীসে মোফাযযাল নামক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে এবং শেইখ হাসান বিন সুলাইমান তার বাসায়ের নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ ইমাম মাহদী (আ.) প্রথমে মক্কায় আবির্ভূত হবেন এবং তারপরে কুফাতে তিনি আসবেন তখন মোফাযযাল তাকে জিজ্ঞাসা করেন হে ইমাম তারপর তিনি কোথায় যাবেন? তখন তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাদের পূর্বপুরুষ হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর কবরে যাবেন তখন আহলে বাইত (আ.) এর শত্রুদের আবার প্রত্যাবর্তিত করা হবে এবং তিনি তাদের কাছ থেকে কেসাস গ্রহণ করবেন।
তারপর ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর সঙ্গি সাথী সহ ১২ হাজার অনুসারী প্রত্যাবর্তন করবে। তখন সিদ্দীকে আকবর হজরত আলী (আ.) ও প্রত্যাবর্তন করবেন এবং তারপর সাইয়েদে আকবর হজরত মোহাম্মাদ (সা.) ও প্রত্যাবর্তন করবেন, তখন রাসুল (সা.) এর আনসার এবং মুহাজির এবং যারা তার সাথে থেকে যুদ্ধে শহীদ হয় তারাও প্রত্যাবর্তন করবেন এবং যারা তাকে মিথ্যাবাদি বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল, তার সাথে যুদ্ধ করেছিল, সন্দেহ পোষণ করেছিল সবাইকে তার কর্ম অনুযায়ি শাস্তি দেয়া হবে। অনুরূপভাবে একের পর এক ইমাম (আ.) গণ প্রত্যাবর্তন করবেন এবং যারা তাদের সঙ্গি ছিল তারা আনন্দিত হবে এবং যারা তাদের সাথে শত্রুতা করতো তারা দুঃখিত হবে।(হাক্বুল ইয়াক্বিন, পৃষ্ঠা ২৬৬-২৬৮)
উপরোক্ত রেওয়ায়েত থেকে আমরা তিনটি বিষয় বুঝতে পারিঃ
একঃ কাফের, বিরোধি, অত্যাচারীরা আবার এই দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করবে।
দুইঃ ঐ সমস্ত লোক যারা আহলে বাইত (আ.) দেরকে তাদের প্রাপ্য ক্ষমতা দেয়নি তারা সেদিন অপমানিত, লজ্জিত, অনুশোচনা, এবং দুঃখিত হবে।
তিনঃ অত্যাচারীরা তাদের কৃত অত্যাচার যা তারা আহলে বাইত (আ.) এবং মুমিনদের সাথে করেছিল পরিণামে তাদেরকে হত্যা করার মাধ্যমে তাদের রূহ কবজ করা হবে। (মাহদী মওউদ, তরজুমা, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৩, আসরে যুহুর, আলী কুরানী)
সুতরাং রাজআত হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তাই এ বিষয়ে দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে এ সম্পর্কে আমাদের গবেষণা এবং আলোচনা করা উচিত যেন আমরা এর প্রকৃত সত্যতা পর্যন্ত পৌছাতে পারি।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন