ইয়াজিদকে নিদোর্ষ প্রমাণের প্রচেষ্টা ?

হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদাতের পর পুরো মুসলিম বিশ্বের উপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে ইয়াজিদ। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রতি সাধারণ মানুষের আবেগ বুঝতে পারে ধূর্ত ইয়াজিদ। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে সব কিছুই কৌশলে ম্যানেজ করতে হয়। সেই পথেই এগুলো ইয়াজিদ।

ইয়াজিদকে নিদোর্ষ প্রমাণের প্রচেষ্টা ?
হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদাতের পর পুরো মুসলিম বিশ্বের উপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে ইয়াজিদ। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রতি সাধারণ মানুষের আবেগ বুঝতে পারে ধূর্ত ইয়াজিদ। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে সব কিছুই কৌশলে ম্যানেজ করতে হয়। সেই পথেই এগুলো ইয়াজিদ। ভাবখানা এমন যে ইমাম হুসাইন (আ.) কে সে হত্যার স্পষ্ট নির্দেশ দেয়নি। তার পক্ষে জনমত গঠনে নানা প্রচেষ্টায় লিপ্ত হলো সে অত্যন্ত ধূর্তামীর সাথে। তার সাথী হলো কিছু দরবারী আলেম। সাহাবাদের নানাভাবে কোনঠাসা করা হলো। কারবালার যুদ্ধে ইয়াজিদ দায়ী হলে, ইমাম হুসাইন (আ.) এর যুদ্ধ বৈধতা পায়। মানুষ রাজতন্ত্রকে ঘৃনা করবে এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে। কাজেই সেটা যাতে হতে না পারে সে দায়িত্ব পালন করছেন এইসব দরবারী আলেমরা। কিছু তথাকথিত আলেমদের দিয়ে নানা কল্পকাহিনী ফেঁদে কারবালার ইতিহাস পাল্টে দেয়ার অপচেষ্টা অতীতেও হয়েছে এবং এখনো ঠিক সমভাবেই হচ্ছে। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) কেন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গেলেন, মদিনা থেকে কেন বের হলেন নানাভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে তার জন্য ইমাম হুসাইনকে ক্ষমতালোভী আখ্যায়িত করে প্রকারান্তে তাকেই দোষী সাব্যস্থ্য করার অপচেষ্টাও কম হয়নি। তারা বলেন কুফায় যাওয়ার কারণেই ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন (আ.) কে শহীদ করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা বুঝাতে চান, অন্যায়ের বিরোধিতা করে হুসাইন (আ.) ঠিক কাজ করেননি। ইয়াজিদের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে হুসাইনই (আ.) অন্যায় কাজ করেছেন। তারা বলতে চান, মুসলিমরা ইয়াজিদের শাসনের উপর ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। হুসাইন এসে সেই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। আবার কিছু সুবিধাবাদী আলেম বলেছেন, ইয়াজিদকে ভালও বলা যাবে না, আবার খারাপও বলা যাবে না। গোঁজামিলটা খেয়াল করুন। নবীর দৌহিত্রের হত্যাকারী জালিম শাসককে নাকি ভাল খারাপ কোনটাই বলা যাবে না। এই না বলার অর্থ কিন্তু ইয়াজিদকে সমর্থণ করাই। অনেকে কারবালার যুদ্ধকে হক ও বাতিলের যুদ্ধ নয় বলে অভিমত দিতেও কুন্ঠিত হলেন না। প্রকারান্তরে তারা বলতে চান, হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) হকের পক্ষে ছিলেন না (নাউজুবিল্লাহ)।
ইয়াজিদের সমর্থনে কিছু জাল হাদীসও যুগে যুগে মানুষকে গেলানোর অপচেষ্টা হয়েছে। তার একটা হলো
من وسع على عياله يوم عاشوراء وسع الله عليه سائر السنة. قال الإمام أحمد : لا يصح هذا الحديث
“যে ব্যক্তি আশুরার দিনে তার পরিবারবর্গের লোকদের জন্য সচ্ছলতার (ভাল খাবার) ব্যবস্থা করবে আল্লাহ সারা বছর তাকে সচ্ছল রাখবেন।”
এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেছেন; হাদীসটি সহীহ নয়। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইবনে কায়্যিম জাওযী রহ. এ হাদীস সম্পর্কে বলেছেনঃ
رواه الطبراني عن أنس مرفوعا، وفي إسناده الهيصم بن شداخ وهو مجهول، ورواه العقيلي عن أبي هريرة وقال: سليمان بن أبي عبد الله مجهول، والحديث غير محفوظ، وكل طرقه واهية ضعيفة لا تثبت
“তাবারানী হাদীসটি আনাস রা. সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রে হাইছাম ইবনে শাদ্দাখ নামের ব্যক্তি অপরিচিত। এবং উকায়লী বর্ণনা করেছেন আবু হুরাইরা রা. থেকে। এবং তিনি বলেছেনঃ এ সূত্রে সুলাইমান বিন আবি আব্দুল্লাহ নামের ব্যক্তি অপরিচিত। হাদীসটি সংরক্ষিত নয় আর এ হাদীসের প্রত্যেকটি সূত্র একেবারে বাজে ও খুবই দূর্বল।(আল-মানারুল মুনীফ ফিসসহীহ ওয়াজ যয়ীফ : ইবনে কায়্যিম জাওযী -রহ.)
ইয়াজিদ আর রাজতন্ত্রকে বৈধতা দেবার কি প্রাণান্তর অপচেষ্টা হয়েছে,এসব ঘটনাই তার প্রমাণ। না জানি আরো কত জাল হাদীস তারা সৃষ্টি করে রেখেছে।
অতীতের সেই ইয়াজিদের প্রেতাত্মারা এখনো মুসলিম বিশ্বের মজলুম মানুষের বুকে চেপে বসে আছে। ইসলামী ছদ্মবেশ গায়ে মাখিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানাবার সেই পুরোনো কৌশলকে নানাভাবে বিস্তৃত করেছে তারা। তাদের কারনেই মুসলমানের প্রথম কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাস আজ ইহুদীদের বুটের তলায় পিষ্ট হয়ে লাঞ্চিত, দলিত, অপমাণিত। মুসলমানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় কেবলা মক্কা মদীনা শাসন করছে তারাই, যারা মুসলিম জাহানের বড় গাদ্দার এবং পশ্চিমাদের পদলেহী সেবাদাস। বংশানুক্রমে এরা ক্ষমতা আঁকড়ে আছে আর এই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বংশানুক্রমে পশ্চিমাদের দাসত্ব করে আসছে। অথচ মক্কা-মদীনার অবস্থান হওয়ার কারনে এই দেশটি মুসলিম বিশ্বের হৃদপিন্ড হিসাবে গোটা মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারতো।পারতো মুসলমানদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে। কিন্তু তারা নিজেরাই পশ্চিমা পুঁজারী, জাতীয়তাবাদ পুঁজারী। ইসলামে নিষিদ্ধ আরব জাতীয়তাবাদের পুঁজারী এই সব শাসকেরা ইসলামের বিকৃত ইতিহাস মুসলমানদের গেলানোর নানা প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে সঙ্গত কারনেই। তাদের দান খয়রাতের অর্থে পরিচালিত বিভিন্ন মুসলিম দেশের কিছু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসাগুলোতে ইয়াজিদের পক্ষে বড়ই চাতুর্যে্যর সাথে শিক্ষা দেয়া হয়। ধুর্তামীতে পরিপূর্ণ এই সব লেখার শিরোনাম দেখে মনে হবে ইমাম হুসাইন (আ.) এর পক্ষে লেখা। কিন্তু অত্যন্ত সচেতনভাবে ও সুকৌশলে তাতে ইয়াজিদের পক্ষে প্রচারনা চালানো হয়।
সূত্রঃ ইন্টারনেট

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন