জান্নাতুল বাকী’র যায়েরদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে

জান্নাতুল বাকী’র যায়েরদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে

জান্নাতুল বাকী’র যায়েরদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে

 ফজরের নামাযের পর পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানের দরজা আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। মসজিদে নববী (স.)-এ ফজরের নামায আদায়ের পর হাজার হাজার যায়ের (যেয়ারতকারী) সারিবদ্ধভাবে বিশেষ সম্মানের সাথে জান্নাতুল বাক্বীতে উপস্থিত হন।
ফারস নিউজের প্রতিবেদকের বর্ণনা অনুযায়ী, নবী (স.) এর আহলে বাইত (আ.) এর হেরেম শরিফ যেয়ারতের জন্য তাঁদের সম্মানে অনেক যায়ের নিজেদের জুতা খুলে খালি পায়ে যেয়ারত করতে যান।
এ সময় যায়েররা অশ্রু সজল চোখে দোয়া, দরুদ ও যেয়ারত পাঠ করতে করতে জান্নাতুল বাক্বীতে শায়িত ইমাম (আ.) গণের মাজারের দিকে রওনা হয়। যাতায়াতের রাস্তা সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ হওয়ায় যায়েরদের বিরাট ভীড় খুবই ধীরে ধীরে সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকেন।
গলায় ঝুলন্ত পরিচয় পত্র নিয়ে (যাতে তাদের নাম ও পরিচয় লেখা রয়েছে) ওয়াহাবী মুবাল্লিগদের দেখা যায়, তারা আরবি, ফার্সি, ইংরেজী, উর্দু, হিন্দি, বাংলা, আফগানী, মালায়ু, ইন্দোনেশিয়ান ইত্যাদি ভাষায় সর্বক্ষণিক চিত্কার করে বলছে : মৃতদেরকে চিহ্নিত করো না, আল্লাহর নিকট চাও মৃতদের নিকট কিছু প্রার্থনা কর না! কিন্তু তাদের এটা হয়ত জানা নেই যে, যায়েররা ঐ স্থানে শায়িতদের প্রতি পূর্ণ পরিচিতি নিয়েই এখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন।
আজ এক আফগানী যায়ের সেখানে উপস্থিত ওয়াহাবী যুবকের ওয়াজ শোনার পর বললেন : যে কথা বলছে সে হচ্ছে মানুষরূপী শয়তান। ঐ মোবাল্লিগও রেকর্ডেড ক্যাসেটের মত তার সেই কথাগুলো বারংবার রিপিট করেই যাচ্ছে।
মজার বিষয় হল, বাক্বীতে শুধুমাত্র শিয়া যায়েররা উপস্থিত হয় না, বরং সুন্নি মাযহাবের অনুসারী আহলে বাইত (আ.) এর অনেক ভক্তই শিয়াদের পাশপাশি বাক্বীতে শায়িত নির্যাতিত ইমাম (আ.) গণের মাজার যেয়ারতের জন্য উপস্থিত হন।
মহানবী (স.) এর হেরেম শরিফ হতে প্রত্যাবর্তনের সময় মসজিদুল হারামের সম্মুখে অবস্থিত হোটেলে অবস্থানরত ২ জন বিরজান্দি (ইরানের একটি শহরে নাম) যায়েরকে দেখলাম, তার বলছিল : গত বৃহস্পতিবার মদিনায় ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতার হজ্ব বিষয়ক ক্যাম্পে এসে দোয়ায়ে কুমাইলের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ঐ স্থানটি ছিল একমাত্র স্থান যেখানে মন খুলে ক্রন্দন করতে পেরেছিলাম। ঐ দোয়ার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর আমাদের মনটা হাল্কা হয়ে গেছে। কেননা ওয়াহাবীরা মহানবী (স.) এর মসজিদ ও বাক্বী কবরস্থানে ক্রন্দনের অনুমতি দেয় না এবং দোয়ার বইও হাতে নিতে দেয় না।
বিরজান্দি যায়েরদের একজন বললো : যেহেতু ওয়াহাবীরা বাক্বী কবরস্থানে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সে কারণে আমাদের কাফেলার নারী যায়েররা হোটেলের ছাদ থেকে জান্নাতুল বাক্বী’র যেয়ারত পাঠ করেছে এবং সেখানে তাদের মোনাজাত করেছে। একদিন জান্নাতুল বাক্বী যেয়ারতের উপর আরোপিত সীমাবদ্ধতা তুলে নেয়া হবে বলে আমি আশাবাদী।
মধ্য বয়স্ক কলপকৃত দাড়ীর অধিকারী এক পাকিস্তানি যায়েরকে দেখলাম যে, মসজিদে নববী’র বাবুল বাক্বী নামক দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে অপর তিন-চার জনের সাথে দাড়িয়ে ক্রন্দন শুরু করেছে। হঠাৎ এক ওয়াহাবী মুবাল্লিগ যুবক তাদের ক্রন্দনের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং তাদের প্রতি অসম্মান পূর্বক তাদের হাত ধরে টান দিয়ে ঐ স্থান হতে সরিয়ে দেয়।
অতঃপর অভদ্র ঐ উগ্র ওয়াহাবী মুবাল্লিগ নামাযরত একদল মালয়েশিয়ান ও চাইনিজ বৃদ্ধকে বাবুল বাক্বী হতে সরিয়ে দেয়, সে মহানবী (স.) এর যায়ের ঐ বৃদ্ধদেরকে নামায শেষ করার সুযোগ পর্যন্ত দেয় নি।
আজ মসজিদে নববী (স.) পরিচ্ছন্ন করার সময় বাবুস সালাম নামক দরজা –যায়েরদের মসজিদে নববী (স.)তে প্রবেশ পথ- সম্মুখ হতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্লিপার –যা সাধারণত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও আফ্রিকার লোকজন পায়ে দিয়ে থাকে- একত্রিত করে বেশ কয়কেটি কালো পলিথিনে ভরে গাড়ীতে তুলে অন্যত্র নিয়ে চলে গেল ওয়াহাবী কর্মীরা। আমি জানি না যে, হাক্বুন নাসের (অন্যের অধিকার) কি হবে, বেচার যায়ের খালি পায়েই তাদের অবস্থানস্থলে ফিরে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারামকে প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর সকাল ৭:৩০ মিনিটে পরিচ্ছন্ন ও জীবানু মুক্ত করা হয়। সূত্রঃ ইন্টারনেট
 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন