মাসুমগণ (আ.) এর বানীতে ইমাম হোসাইন (আ.)

হযরত মহানবী (স.): নি:সন্দেহে হোসেনের(আ.) শাহাদত মুমিনদের অন্তরে এমন এক উত্তাপ ও আবেগের সৃষ্টি করে যা কখনও শীতল হবে না। ১। হাদীসে কুদসী: হোসাইনকে (আ.)ওহীভান্ডারের রক্ষক মনোনীত করা হয়েছে এবং আমি শাহাদতের মাধ্যমে সম্মান প্রদান করেছি। আর তার শেষ পরিণতিকে চরম

মাসুমগণ (আ.) এর বানীতে ইমাম হোসাইন (আ.)
হযরত মহানবী (স.): নি:সন্দেহে হোসেনের(আ.) শাহাদত মুমিনদের অন্তরে এমন এক উত্তাপ ও আবেগের সৃষ্টি করে যা কখনও শীতল হবে না।
১। হাদীসে কুদসী: হোসাইনকে (আ.)ওহীভান্ডারের রক্ষক মনোনীত করা হয়েছে এবং আমি শাহাদতের মাধ্যমে সম্মান প্রদান করেছি। আর তার শেষ পরিণতিকে চরম সাফল্যমন্ডিত করেছি। তাই সে -ই হল শহীদদের শিরোমণি এবং সকলের শীর্ষে তার অবস্থান। আমি আমার পূর্ণ কালিমাকে তার সাথে রেখেছি এবং আমার পূর্ণনিদর্শনকেও তার কাছেই রেখেছি। আর তার বংশধারার নির্ভর করছে প্রত্যেকের প্রতিদান ও শাস্তি।(১)
২। হযরত মহানবী (স.): নি:সন্দেহে হোসেনের (আ.) শাহাদত মুমিনদের অন্তরে এমন এক উত্তাপ ও আবেগের সৃষ্টি করে যা কখনও শীতল হবে না।(২)
৩। হযরত আমিরুল মুমেনিন আলী (আ.): ইমাম আলী (আ.) নিজ সন্তানের দিকে তাকিয়ে বললেন: এ এমন এক ব্যক্তি যার স্মৃতি ও নাম স্মরণ মুমিনদের চোখে অশ্রু ঝরাতে থাকবে। হোসেন (আ.) বললেন: আপনি কি আমাকেই সম্বোধন করে বলছেন ? তিনি উত্তরে বললেন: জ্বী, আমার সন্তান।(৩)
৪। হযরত ফাতেমা জাহরা (আ.): আমার গর্ভাবস্থায় যখন হোসাইন (আ.)ছয় মাসে উত্তীর্ণ হল, তখন থেকে রাতের আঁধারে আর আমার প্রদীপের প্রয়োজন হয়নি আর ইবাদতের সময় ও প্রভুর সান্নিধ্য লাভের জন্য যখন নির্জনতা অবলম্বন করতাম তখন তাঁর তাসবিহ ও তাকদীস পাঠের আওয়াজ শুনতে পেতাম।(৪)
৫। ইমাম হাসান (আ.): আমাকে বিষ পানে শহীদ করা হবে কিন্তু হে আবা আবদিল্লাহ্ ! তোমার মুসিবতের দিনটির ন্যায় আর কোন মুসিবতের দিন আসবে না।(৫)
৬। হযরত ইমাম হোসাইন (আ.): আমার হত্যা ক্রোন্দনে এক মহাধারার সৃষ্টি করবে। আর কোন মুমিন ব্যক্তিই দু:খ ও অশ্রুসিক্ত চোখ না নিয়ে আমাকে স্মরণ করবে না।(৬)
৭। হযরত সাইয়েদুস সাজেদিন হোসাইন বিন আলী (আ.): আমি এক ব্যক্তির সন্তান যার জন্য আসমানের ফেরেস্তাগণ এবং ভূ -পৃষ্ঠে জ্বীনেরা ও পাখিরা বাতাসে শোকে শোকাহত হয়ে ক্রোন্দন করেছিল।(৭)
৮। হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আ.): ইয়াহিয়া ইবনে জাকারিয়ার মৃত্যুর পর আর কোন ব্যক্তির মৃত্যুতে আসমানকে কাঁদতে দেখা যায়নি একমাত্র হোসাইন ইবনে আলীর (আ.) শাহাদত ব্যতীত। তাঁর শাহাদতে চল্লিশ দিন ধরে শোকে ক্রোন্দনরত ছিল।(৮)
৯। হযরত জাফর সাদিক (আ.): মুসিবতের সময় আহাজারি ও ফরিয়াদ করে কান্নাকাটি অপছন্দনীয় তবে কেবল হোসাইন (আ.) এর শোকে ক্রোন্দন ব্যতীত। হোসাইনের (আ.) শোকে ক্রোন্দন ও আহাজারির জন্য প্রতিদান দেয়া হবে।(৯)
১০। হযরত মুসা ইবনে জাফর (আ.) ইমাম রেজার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:মহররম মাস যখন শুরু হত তখন আমার পিতার মুখে আর হাসি -খুশী দেখা যেত না। তিনি যেন দু:খ ও বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়তেন। এভাবে আশুরার দিন পর্যন্ত যেদিন, শোক ও দু:খে ক্রোন্দন করতেন। আর বলতেন এমন একটি দিনে হোসেনকে হত্যা করা হয়েছিল।(১০)
১১। হযরত ইমাম আলী ইবনে মুসা (আ.): হোসেনের (আ.) মুসিবত আমাদের অন্তরকে আহত ও চক্ষুকে ব্যথিত করে তোলেছে। এ মুসিবত আমাদের অশ্রু ঝরিয়েছে আমাদের আপনজনদেরকে ঐ দুরদেশে লাঞ্ছিত ও অসহায় করেছে। সেদিনের দু:খ বেদনা এতই গভীর যে আমাদেরকে চিরদিনের জন্য শোকাহত ও ব্যথিত করেছে।(১১)
১২। হযরত ইমাম ত্বাকী (আ.): কোন ব্যক্তি যদি ২৩ রমজানে (যে রাতটি কদরের রাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে) ইমাম হোসেনকে (আ.) জিয়ারত করে তাহলে ২৪ হাজার ফেরেস্তা ও এবং স্বয়ং মহানবীও (স.) তার সাক্ষাত করেন। এরা ঐ দল যারা এই রাতে ইমাম হোসেনকে (আ.) জিয়ারত করার জন্য আল্লাহর কাছে অনুমতি আবেদন করেন।(১২)
১৩। হযরত ইমাম আলী নকী (আ.): যে ব্যক্তি ইমাম হোসেনকে (আ.)জিয়ারতের জন্য নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে ফুরাতের নদে স্নান করবে। খোদা তার নাম সফল ব্যক্তিদের লিস্টে লিখে দিবেন। আর যখন সে ঐ হোসেনকে সালাম করবে, তখন তাকে সফলতা লাভকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিগণনা করেন। তারপর যখন সে জিয়ারতের নামাজ শেষ করে, তখন একজন ফেরেস্তা তাকে বলেন: আল্লাহর রাসুল (স.) তোমার প্রতি দরুদ পাঠিয়েছেন এবং তোমাকে বলেন: তোমার গোনাহ্ সমূহ ক্ষমা করা হয়েছে। অতঃপর তখন তুমি আবার প্রথম অবস্থায় ফিরে গেছো।(১৩)
১৪। হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.): হে আল্লাহ্ আমি তাঁর (ইমাম হোসেনের (আ.)) ওসিলা দিয়ে তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, যে এমন একটি দিনে (৩রা শাবান) জন্ম গ্রহণ করেছিল। যার জন্মের পূর্বে তাঁর শাহাদতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। যার শোকে আসমান ও আসমানবাসীরা, আর ভূ -পৃষ্ঠ ও তার অধিবাসীগণ ক্রোন্দন করছে। এটা এমন এক অবস্থায় যখন সে পৃথিবীতেই পা রাখেনি।(১৪)
১৫। হযরত ইমাম মাহদী (আ.): যদিও সময় আমাকে পিছায়ে দিয়েছে পরিণতি আপনাকে সাহায্য করা থেকে বিরত রেখেছে ফলে আপনার সাথী হয়ে দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারিনি। তবে প্রতিটি সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কাঁদছি আর আপনার স্মৃতিচারণ করে বুক ফাটা কান্নায় আর্তনাদ করছি।(১৫)
 
 
সূত্রসমূহ:
১। উসুল আল কাফী, ২য় খন্ড, ৪৭২ পৃ. মা জাআ ফি ইসনা আশার ওয়ান নাস্ আলাইহা, অধ্যায় ৩ নম্বর হাদীস।
২। মুস্তাদরাকুল ওসাইল ১০ম খন্ড, ৩১৮ পৃ. ৪৯তম আববাবুল মাজার,মাজার অধ্যায় ১৩ নম্বর হাদীস।
৩। বিহারুল আনোয়ার ৪৪তম খন্ড, ২৮০ পৃ. ওয়া ফাজলু যিয়ারাতুল হোসায়েন (আ.) ৩৮ পৃ.।
৪। বিহারুল আনোয়ার ৪৩তম খন্ড, ২৭৩ পৃ.। আওয়ালেম গ্রন্থ ১৭তম খন্ড, ১১ পৃ.। আদ্দামায়াস সাকিবাহ্ ২৫৯ পৃ. এবং খাসাইসুল হোসাইনীয়া ৩১ পৃ.।
৫। ‌আমালী -ই শেখ সাদুক, ১১৬ পৃ.। বিহারুল আনোয়ার ৪৫তম খন্ড,২১৮ পৃ.। মাসিরুল আহজান, ৯ পৃ.। আল আওয়ালেম, ১৭তম খন্ড, ১৫৪ পৃ. এবং লুহুফ ২৫ পৃ.।
৬। ‌আমালী -ই শেখ সাদুক, ১৩৭ পৃ.। কামিলুজ জিয়ারাত, ১০৮ পৃ,। বিহারুল আনোয়ার ৪৪তম খন্ড, ২৮৪ পৃ.। আল আওয়ালেম, ১৭তম খন্ড,৫৩৬ পৃ. এবং ইসবাতুল হিদাইয়া ২য় খন্ড, ৫৮৪ পৃ.।
৭। বিহারুল আনোয়ার ৪৫তম খন্ড, ১৭৪ পৃ. এবং আওয়ালেম গ্রন্থ,১৭তম খন্ড ৪৮৫ পৃ.।
৮। কামিলুজ জিয়ারাত, ৯০ পৃ.। বিহারুল আনোয়ার ৪৫তম খন্ড, ২১১ পৃ.। আল আওয়ালেম, ১৭তম খন্ড. ৪৬৯ পৃ.।
৯। কামিলুজ জিয়ারাত, ১০০ পৃ.। বিহারুল আনোয়ার ৪৪তম খন্ড, ২৯১ পৃ.। আল আওয়ালেম, ১৭তম খন্ড, ৫৩৩ পৃ.।
১০। ‌আমালী -ই শেখ সাদুক, ১২৮ পৃ.। বিহারুল আনোয়ার ৪৪তমখন্ড, ২৮৪ পৃ.। আল আওয়ালেম, ১৭তম খন্ড, ৫৩৮ পৃ.।
১১। ‌আমালী -ই শেখ সাদুক, ১২৮ পৃ.। বিহারুল আনোয়ার ৪৪তমখন্ড, ২৮৪ পৃ.। আল আওয়ালেম, ১৭তম খন্ড, ৫৩৮ পৃ.।
১২। ওসাইলুশ শীয়া, ১০ম খন্ড, ১৭০ পৃ. ৫৩ নম্বর অধ্যায়, আল আববাসুল মাজার, ৫ নম্বর হাদীস।
১৩। ওসাইলুশ শীয়া, ১০ম খন্ড, ৩৮০ পৃ. ৫৯ নম্বর অধ্যায়, আববাসুল মাজার, ১০ নম্বর হাদীস। কামিলুজ জিয়ারাত, ১৮৫ -১৮৬ পৃ.।
১৪। মিসবাহুল মুতাহাজ্জিদ, ৭৫৮ পৃ. বিহারুল আনোয়ার ৯তম খন্ড,৩৪৭ পৃ. মাফাতিহুল জিনান, মহরমের তৃতীয় দিনের আমল।
১৫। বিহারুল আনোয়ার, ৯৮তম খন্ড, ৩২ পৃ.।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন