ইসলাম পুনরুজ্জীবিত হয় প্রত্যেক কারবালার পর

যেকোন নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ নওরোজে আনন্দ-উৎসব পালনের রেওয়াজ থাকলেও আরবী নববর্ষের ক্ষেত্রে তা ঘটেনা। পহেলা মহররম এলেই বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের মনে ১০ই মহররমের কারাবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার কথা নতুন করে ভেসে ওঠে, নেমে আসে শোকের ছায়া। হ্যাঁ মহররমের ১০ ত

ইসলাম পুনরুজ্জীবিত হয় প্রত্যেক কারবালার পর
যেকোন নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ নওরোজে আনন্দ-উৎসব পালনের রেওয়াজ থাকলেও আরবী নববর্ষের ক্ষেত্রে তা ঘটেনা। পহেলা মহররম এলেই বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের মনে ১০ই মহররমের কারাবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার কথা নতুন করে ভেসে ওঠে, নেমে আসে শোকের ছায়া। হ্যাঁ মহররমের ১০ তারিখেই এজিদ বাহিনী, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-র প্রিয় দৌহিত্র ও বেহেশতে যুবকদের সর্দার ইমাম হোসেন(আঃ)-কে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এ ঘটনা শুধু ইসলামী ইতিহাসেরই করুণ ঘটনা নয়, বিশ্ব ইতিহাসেরও সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা। সেদিন ইমাম হোসেনের সাথে শহীদ হয়েছিলেন তার আত্মত্যাগী অনুসারীদের প্রত্যেকেই। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মুসলমানরাই রাসুলে খোদার প্রাণপ্রিয় দৌহিত্রের শাহাদাতের ঐ ঘটনা আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। মহররম মাস এলে সে স্মরণের মাত্রা আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ, ভারত ও ইরানসহ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা মহররম মাসের শুরু থেকে দশ দিন, এবং অনেকেই চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিয়ে-শাদীসহ আনন্দঘন অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরত থাকেন। কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার শিক্ষা সবার মাঝে জাগরুক রাখার জন্য ইরানে দশ দিনব্যাপী বিভিন্ন শোকানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইমাম হোসেন(আঃ) ও তার সঙ্গীরা শাহাদাতের মাধ্যমে যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন,এসব শোকানুষ্ঠানে তা তুলে ধরা হয়। ইরানিরা আশুরার শোককে শক্তিতে পরিণত করার মাধ্যমেই এ দেশে ইসলামী বিপ্লবকে বিজয়ী করতে সক্ষম হয়েছে। আসলে ইরানের ইসলামী বিপ্লব হচ্ছে ইমাম হোসাইন ( আঃ) এর আন্দোলনের অব্যাহত ধারা ।
ইমাম হোসেন(আঃ)কে হত্যার মাধ্যমে আপাত দৃষ্টিতে ইসলামের শত্রুরা বিজয় অর্জন করলেও আসলে বিজয় পেয়েছে ইমাম হোসেন ও তার আত্ম নিবেদিত সঙ্গীরা। ইমাম হোসেন (আঃ)-র শাহাদাত বরণের মধ্য দিয়ে মিথ্যার বিরুদ্ধে নতুন করে সত্যের বিজয় সূচিত হয়েছিল। তাই সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত যেখানেই সম্মান,মর্যাদা,বীরত্ব ও প্রতিরোধের কথা ওঠেছে, সেখানেই ইমাম হোসেন ও তার সংগীদের সংগ্রামের কথা চলে এসেছে। মহররম মাসকে এজন্যেই বীরত্ব, সংগ্রাম ও প্রতিরোধের মাস হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)-র কলিজার টুকরো ইমাম হোসেন(আঃ)-র আত্মত্যাগের কারণেই আজ আমরা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে পাচ্ছি। মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের আন্দোলন করার সাহস পাচ্ছি। তিনি শহীদ হয়ে ইসলামকে পুণরুজ্জীবিত করেছেন,সত্যের বিজয় কেতন উড়িয়েছেন, অন্যদিকে এজিদ সেদিন বেঁচে থেকেও পরাজিত হয়েছিল। যেমনটি মাওলানা মোহাম্মদ আলী জাওহার বলেছেন,
কাতলে হোসেন আসল মে মার্গে ইয়াযিদ হে
ইসলাম যেন্দা হোতা হায় হার কারবালা কে বাদ
অর্থাৎ হোসেনের মৃত্যু আসলে এজিদেরই মৃত্যু
ইসলাম পুনরুজ্জীবীত হয় প্রত্যেক কারবালার পর ।
ইমাম হোসাইন ( আঃ) এর শাহাদতের বিশেষ তাৎপর্য ও এর সুদুর প্রসারী প্রভাবের কারণেই হয়তো ইরানের ইসলামী বিপ-বের রুপকার ইমাম খোমেনী(রহঃ) বলেছেন,
কুল্লু আরদিন কারবালা-কুল্লু ইয়াউমিন আশুরা ।
অর্থাৎ,প্রত্যেক ভূখন্ডই কারবালা আর প্রত্যেক দিনই আশুরা।
ইমাম হোসেন(আঃ)কে হত্যার মাধ্যমে আপাত দৃষ্টিতে ইসলামের শত্রুরা বিজয় অর্জন করলেও আসলে যে সেদিন ইমাম হোসেন(আঃ)ই বিজয় অর্জন করেছিলেন-তা আজ আর কারো কাছেই অস্পষ্ট নয়। ইমাম হোসেন(আঃ)-র শাহাদাতের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদী ইসলাম পর্যুদস্ত হয়ে গেছে বলে যারা ভেবেছিলো তারা পরে দেখতে পেল, তাদের সে আত্মতুষ্টি স্থায়ী হয়নি। ইমাম হোসেন (আঃ)-র শাহাদাতের মধ্য দিয়ে ইসলামের পতন ঘটার পরিবর্তে ইসলামের নব উত্থানের পথই প্রশস্ত হয়েছে। বর্তমান যুগের এজিদ চক্রের বিরুদ্ধে যে অন্তহীন লড়াই চলছে, সেটাও প্রমাণ করে , কারবালায় ইম্মা হোসেনের ত্যাগ ব্যর্থ হয়নি। তার আদর্শকে ভিত্তি করে সত্য-মিথ্যার লড়াই অব্যাহত রয়েছে ।
সূত্রঃ ইন্টারনেট

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন