তাহাউয়িয়্যাহ ফেরকা

তাহাউয়িয়্যাহ ফেরকা

তাহাউয়িয়্যাহ ফেরকা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা বিশ্বাসে সংস্কারবাদী আন্দোলন চতুর্থ শতাব্দীতে তিন ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে আরম্ভ হয়, আবু জাফার তাহাউয়ি তাদের মধ্যে ছিলেন একজন। তিনি হচ্ছেন আহমাদ ইবনে মোহাম্মদ ইবনে সালামাতুল আযদি আল হাজারি, যার উপাধি ছিল আবু জাফার ও পদবী বা খেতাব ছিল তাহাউয়ি।
মিশরের গ্রামগুলোর মধ্যে তাহা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তারাজেমের লেখকগণ তাঁর জন্ম সনকে ২২৯, ২৩০, ২৩৮ ও ২৩৯ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ৩২১ হিজরী সনে মৃত্যু বরণ করেন।
তাহাউয়ি এলমে হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রকে বেশী পছন্দ করতেন এবং সেই সময়কার বিখ্যাত মুহাদ্দেসগণ ও ফকিহদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। প্রথমে তিনি হানাফি মাযহাবের অনুসারি ছিলেন। তাঁর হানাফি মাযহাবের অনুসারি হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন রকম কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কারণটি হচ্ছে এই যে, শাফেয়ী মাযহাবের তুলনায় আবু হানিফার মাযহাবে তিনি তার সমালোচনামূলক প্রশ্নের জবাব পেতেন।(১)
তার বিভিন্ন রচনাবলি রয়েছে। যার মধ্যে নিম্নের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য:
১। শরহে মাআনি আল আছার।
২। শরহে মুশকিললে আহাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা.)।
৩। আহকামুল কোরান।
৪। ইখতেলাফুল ফুকাহা।
৫। আন নাওয়াদেরুল ফেকহিয়্যাহ।
৬। আশ শুরুতুল কাবীর।
৭। আশ শুরুতুল আওসাত।
৮। শরহে আল জামেউস সাগীর।
৯। শরহে আল জামেউল কাবীর।
১০। আল মুখতাসারুস সাগীর।
১১। আল মুখতাসারুল কাবীর।
১২। মানাকিবু আবু হানিফা।
১৩। তারিখুল কাবীর।
১৪। আর রাদ আলা কেতাবুল মোদাল্লেসাইন।
১৫। কেতাবুল ফারায়েদ।
১৬। কেতাবুল ওয়াসায়া।
১৭। হুকমে আরদিয়ে মাক্কে।
১৮। কেতাবুল আকিদাহ।(২)
তাহাউয়ি কালাম শাস্ত্রে “বায়ানুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ” নামে একটি ছোট চটি বই রচনা করেছেন, যা তাহাউয়ির আকিদা বিশ্বাস নামে পরিচিত। আর তার ভূমিকাতে উল্লেখ করেন: “এই পুস্তিকাটি আবু হানিফা, আবু ইউসুফ ও মোহাম্মদ শাইবানির মতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা বিশ্বাসের বর্ণনা করবে”।
তাহাউয়ির উদ্দেশ্য আবু হানিফার আকিদা বিশ্বাসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা বর্ণনা করা বা কালাম শাস্ত্রের পুরানো বিষয়সমূহকে নতুন আঙ্গিকে দলিল প্রমাণ সহকারে বর্ণনা করা ছিল না। বরং শুধুমাত্র তার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, আবু হানিফার দৃষ্টিভঙ্গিকে সংক্ষিপ্ত করা ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বর্ণনাকৃত হাদীসসমূহের দৃষ্টিভঙ্গির সম্মতি নেওয়া।
তাহাউয়ি ও বস্তুবাদীদের মধ্যে মতপার্থক্য (যার দুটোরই মূল উৎস ছিল হানাফি ফিকাহ) পুরোপুরি পরিস্কার। তাহাউয়ি যিনি ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সত্যিকার সাথীদের একজন, ঈমানের মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে বুদ্ধিবৃত্তিক বা তত্ত্বগত চিন্তার বিষয়ে একমত ছিলেন না। বরং কোন তর্ক বিতর্ক ছাড়াই সেইসব মৌলিক বিষয়ে বিশ্বাস করারকে প্রাধান্য দিতেন এবং সেইসবকে মেনে নিতেন। তার আকিদা বিশ্বাসে সমালোচনার পদ্ধতির পর্যালোচনা, সূত্রসমূহ ও মারেফতের কারণসমূহ বা তার কালাম শাস্ত্রের মূল ভিত্তির প্রতি কোন ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। অতএব বলা যেতে পারে যে, তার ধ্যানের ব্যবস্থা ছিল দৃঢ় ও অটল। কিন্তু বস্তুবাদীদের চিন্তাভাবনা হচ্ছে সমালোচনা ভিত্তিক। তিনি এলমে হাদীসে সমালোচনা ভিত্তিক যে কর্ম পদ্ধতি অবলম্বন করেন, কালাম শাস্ত্রে তা চোখে পড়েনি। এমতাবস্থায় তাহাউয়ি ও বস্তুবাদীরা যদিও একই মতাদর্শের সাথে সম্পৃক্ত এবং একনিষ্ঠতার সাথে নিজেদের শিক্ষকের মতামতের অনুসরণ করে, তবুও তাদের মধ্যে চিন্তাগত দিক দিয়ে দুজনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
মোট কথা তাহাউয়ি কালাম শাস্ত্রে নতুন আইন বা পদ্ধতির উদ্ভাবক নয়। বরং সত্যতা ও আমানতদারের মত নিজের ভাষাতে কালাম শাস্ত্রে নিজের শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গির সার সংক্ষেপ করেছেন মাত্র।
আসলে “তাহাউয়িয়্যাহ” ইসলামী কালাম শাস্ত্রে নতুন কোন মতাদর্শ নয়। বরং অন্য কথায় সেই আবু হানিফার কালাম শাস্ত্রই। তাহাউয়ির দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব হচ্ছে এই যে, তার শিক্ষকের অবস্থানকে সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করে থাকেন। বস্তুবাদীদের মত তাহাউয়িও সন্দেহ, দ্বিধা সংকোচ দুর ও আবু হানিফার অবস্থানকে পরিস্কার করার প্রতি সুন্দর ভূমিকা পালন করেছেন। কালাম শাস্ত্রে তাহাউয়ির প্রভাব সম্পর্কে জানতে হলে তার আকিদা বিশ্বাসের উপর লিখিত বিভিন্ন মুখবন্ধ ও রচনাবলী যথেষ্ঠ।(৩)

সূত্রসমূহ:
১। তারিখে ফালসাফে দার জাহানে ইসলামী, ১ ‘ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩৪৭।
২। ফেহেরেস্তে ইবনে নাদীম, পৃষ্ঠা: ২৯২।
৩। তারিখে ফালসাফে দার ইসলাম, ১ ‘ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩৪৮, ৩৪৯, ৩৬০, ৩৬১।
মূল: ফেরাক ওয়া মাযাহেবে কালামি, পৃষ্ঠা: ২৪২।

সূত্রঃ ইন্টারনেট

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন