মহরম মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

১লা মহরম: শেয়াবে আবু তালিব: শেয়াবে আবু তালিবের ঘটনাটি উক্ত তারিখে সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পরে কুরাইশের কাফেরগণ একত্রিত হয়ে একটি চুক্তিনামা লিখে। তাতে উল্লেখ করা হয় যে, বণি হাশিমের লোকজনদের সাথে কোন প্রকারের কথা, একত্রে আহার, তাদের সা

মহরম মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

মহরম মাস, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি, মহরম,

এস, এ, এ

১লা মহরম:

শেয়াবে আবু তালিব:

শেয়াবে আবু তালিবের ঘটনাটি উক্ত তারিখে সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পরে কুরাইশের কাফেরগণ একত্রিত হয়ে একটি চুক্তিনামা লিখে। তাতে উল্লেখ করা হয় যে, বণি হাশিমের লোকজনদের সাথে কোন প্রকারের কথা, একত্রে আহার, তাদের সাথে ব্যাবসা করা যাবে না। তারা ভেবেছিল বণি হাশিমকে এভাবে চাপের মুখে রাখলে তারা হয়তো রাসুল (সা.)কে তাদের কাছে সমর্পণ করবে এবং তারা এ সুযোগে রাসুল (সা.)কে হত্যা করবে। হজরত আবু তালিব প্রত্যেক রাতে রাসুল (সা.) এর বিছানাকে পরিবর্তন করতেন এবং তাঁর বিছানায় নিজের সন্তানদের ঘুম পাড়াতেন।

কিন্তু দুই বছর কয়েক মাস পরে আল্লাহর নির্দেশে উঁই পোকারা শুধুমাত্র আল্লাহর নাম ছাড়া উক্ত চুক্তিনামাকে খেয়ে ফেলে। যখন কাফেরদের কে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবগত করা হয় এবং তারা বিষয়টিকে যাচাই করার জন্য যখন চুক্তিনামাটিকে খুলে তখন তারা দেখে যে, শুধুমাত্র আল্লাহর নাম ছাড়া আর কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই। অতঃপর তারা উক্ত অবরোধকে বাতিল করে দেয়। (সিরাতুন নাবাভি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৩- ৫০)

 

যাতুর রাকাআ যুদ্ধ সংঘটিত হয়:

সন ৪ হিজরিতে কুরাইশের কাফেরদের প্ররোচণার কারণে মদিনা আশেপাশের বিভিন্ন গোত্রের লোকজন মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয় এবং তারা মদিনার চারিপাশে অবরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। রাসুল (সা.) তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রায় ৪০০ জন অথবা ৭৯০ জন সাহাবিদেরকে সাথে নিয়ে মদিনার বাহিরে আসেন। তিনি তাঁর সাহাবিদের নিয়ে সেখানে “নামাজে খউফ” (ভয় ভিতির নামাজ) আদায় করেন। উক্ত যুদ্ধটি তিনদিন ধরে চলতে থাকে। (ওকায়েউশ শুহুর, পৃষ্ঠা ৯৮)

 

জাকাত সংগ্রহ:

উক্ত তারিখে রাসুল (সা.) তার সাহাবিদেরকে প্রথমবার জাকাত ও সাদকা আদায়ের জন্য মদিনার আশেপাশের এলাকায় প্রেরণ করেন। (মাকাতিবুর রাসুল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৮)

 

কারবালার পথে ইমাম হুসাইন (আ.):

সন ৬১ হিজরি রোজ বুধবার ইমাম হুসাইন (আ.) কাসরে মাকাতিল নামক স্থানে অবস্থান করেন। ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত স্থানে ইমাম হুসাইন (আ.)এর সাথে উবাইদুল্লাহ বিন হুর জাআফির সাক্ষাত হয় এবং তাকে সাহায্যে করার আহবান জানান। কিন্তু সে ইমাম (আ.)কে সহায়তা করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে। পরে সে তার উক্ত কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়। (নাফসুল মাহমুম, পৃষ্ঠা ১৯৬- ১৯৭)

 

২য় মহরম:

ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালাতে পৌছান:

সন ৬১ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালাতে পৌছান। উক্ত স্থানে পৌছানোর পরে ইমাম হুসাইন (আ.) এর ঘোড়া আর অগ্রসর হচ্ছিল না। তখন তিনি লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে উক্ত স্থানের নাম কি? যখন তাঁকে বলা হয় যে, উক্ত স্থানের নাম হচ্ছে কারবালা। তখন তিনি ক্রন্দন করে বলেন: মহান আল্লাহর শপথ এখানেই আমাদের পুরুষদেরকে শহিদ করা হবে, আমাদের নারি ও বাচ্চাদেরকে বন্দি করা হবে।(লাহুফ, পৃষ্ঠা ১৩৯)

 

কুফাবাসিদের উদ্দেশ্যে ইমাম হুসাইন (আ.)এর চিঠি:

ইমাম হুসাইন (আ.) কুফাবাসিদের উদ্দেশ্যে কাইস ইবনে মুসাহহারের মাধ্যমে পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে তাকে আটক করা হয়। যখন সে এজিদ এবং ইবনে যিয়াদের বিরূদ্ধে কথা বলে তখন তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়। (নাফসুল মাহমুম, পৃষ্ঠা ২১২)

 

৩রা মহরম:

কারবালাতে ওমরে সাআদের আগমণ:

সন ৬১ হিজরির উক্ত তারিখে উমর ইবনে সাআদ ৪, ৬, অথবা ৯ হাজার সৈন্য নিয়ে ইমাম হুসাইন (আ.)এর বিরূদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কারবালাতে আসে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড মহরম ও সফর, পৃষ্ঠা ৪৮)

 

৪র্থ মহরম:

ইমাম হুসাইন (আ.)কে হত্যা করার ফতোয়া:

সন ৬১ হিজরি ইবনে যিয়াদ কুফার প্রসিদ্ধ বিচারক সারিহ বিন হারিসকে ইমাম হুসাইন (আ.)কে হত্যা করার জন্য ফতোয়া দিতে বলে। যখন সে ফতোয়া দেয়। তখন ইবনে যিয়াদ কুফার মসজিদে মেম্বারে আরোহন করে ইমাম হুসাইন (আ.) কে হত্যা করার ফতুয়া প্রচার করে। (ওকায়ে ওয়াল হাওয়াদেস, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২৪)

 

৫ই মহরম

কারবালাতে হাসিন বিন নুমাইরের আগমণ:

সন ৬১ হিজরির উক্ত দিনে হাসিন বিন নুমাইর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের নির্দেশে চার হাজার অশ্বারোহির বাহিনি নিয়ে কারবালাতে প্রবেশ করে। (ওয়াসিলাতুদ দারাইন ফি আনসারিল হুসাইন (আ.), পৃষ্ঠা ৭৭)

 

৬ষ্ঠ মহরম:

বণি আসাদ গোত্রের কাছে হাবিব ইবনে মাযাহির (রা.) সাহায্যে প্রার্থনা:

সন ৬১ হিজরি ছয় অথবা সাত তারিখের রাতে হাবিব ইবনে মাযাহির (রা.) ইমাম হুসাইন (আ.) এর অনুমতিক্রমে বণি আসাদ গোত্রের কাছে যায়। বণি আসাদ গোত্রের লোকজন ইমাম হুসাইন (আ.)কে সাহায্যে করতে রাজি হয়। কিন্তু গুপ্তচররা উমর ইবনে সাআদকে উক্ত খবরটি সম্পর্কে অবগত করে। সে কিছু সৈন্যকে প্রেরণ করে যারা বণি আসাদের সহায়তার কাজে বাধা হয়ে দাড়ায়। তখণ বণি আসাদ এবং উমরে আসের প্রেরিত সৈন্যর মধ্যে দ্বন্দ শুরু হয়। উক্ত দ্বন্দে বণি আসাদের কিছু লোক শহিদ, কিছু আহত এবং অবশিষ্ট ব্যাক্তিরা পলায়ণ করে। অবশেষে হাবিব ইবনে মাযাহির ইমাম হুসাইন (আ.) এর কাছে এসে সম্পূর্ণ ঘটনার বিবরণ দেন। (ওকায়ে ওয়াল হাওয়াদেস, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৪৯)

 

কারবালা এজিদের সৈন্যদের দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়:

সন ৬১ হিজরি ইমাম হুসাইন (আ.) এর বিরূদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইবনে যিয়াদ ও এজিদের পক্ষে দলে দলে লোকজন যোগদান করে। (মাআলিউস সিবতাইন, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩১২)

 

৭ই মহরম:

ইমাম হুসাইন (আ.)এর সাথে ইবনে সাআদের সাক্ষাত:

৭ই মহরমের রাতে ইমাম হুসাইন (আ.) উমরে সাআদের সাথে সাক্ষাত করেন। খুলি বিন ইয়াযিদ যেহেতু ইমাম (আ.) এর প্রতি অতিরিক্ত বিদ্বেষ পোষণ করতো সেহেতু সে, ইবনে যিয়াদকে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবগত করে। তখন ইবনে যিয়াদ উমরে সাআদের উদ্দেশ্যে পত্র প্রেরণ করে এবং হুসাইনি কাফেলার জন্য পানি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। (আল ওয়াকায়া ওয়াল হাওয়াদেস, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫০)

 

ইমাম হুসাইন (আ.)এর শিবিরে পানি বন্ধের নির্দেশ:

সন ৬১ হিজরির উক্ত তারিখে ইবনে যিয়াদ পত্র প্রেরণ করে যার বিষয়বস্তু ছিল এরপর যেন এক বিন্দু পানি হুসাইনি শিবিরে না পৌছায়। উমর ইবনে হেজাজ চার হাজার তিরন্দাজ বাহিনি নিয়ে ফুরাতকুলে পাহারা দেয় যেন কোনভাবেই পানি হুসাইনি শিবিরে না পৌছায়। (ফেয়যুল আলাম, পৃষ্ঠা ১৪৬)

 

৮ই মহরম:

ইমাম হুসাইন (আ.)এর তাবুতে পানি শেষ হয়ে যায়:

সন ৬১ হিজরির উক্ত তারিখে হুসাইনি কাফেলায় পানি শেষ হয়ে যায়। ছোট ছোট বাচ্চারা পানির তৃষ্ণায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে। (লাহুফ, পৃষ্ঠা ১৪৫)

 

৯ই মহরম:

ইমাম হুসাইন (আ.)এর তাবুগুলোকে অবরোধ করা হয়:

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন: নয়ই মহরমের রাতে এজিদি বাহিনি ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর সাহিবিদেরকে ঘিরে ফেলে এবং তাঁদেরকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। (ইমাম হুসাইন (আ.) ফি আহাদিসিল ফেরকাইন, পৃষ্ঠা ২১)

 

উম্মুল বানিনের সন্তানদের জন্য রক্ষাপত্র প্রেরণ:

সন  ৬১ হিজরির উক্ত তারিখে শিমার হজরত আব্বাস এবং তাঁর ভাইদের জন্য রক্ষাপত্র নিয়ে আসে। সে হুসাইনি তাবুর কাছে এসে চিৎকার করে বলতে থাকে আমার বোনের ছেলেরা কোথায়? কিন্তু তাঁরা কেউ তার জবাব দেয় না। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) হজরত আব্বাস (আ.)কে তাদের জবাব দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। তখন হজরত আব্বাস (আ.) বলেন: তুমি কি চাও? তখন শিমার বলে আমি আমিরের কাছ থেকে তোমাদের জন্য রক্ষাপত্র নিয়ে এসেছি। তোমরা হুসাইনের জন্য নিজেকে কেন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছ? তখন হজরত আব্বাস (আ.) বলেন: তুমি রাসুলের সন্তানের জন্য রক্ষাপত্র না এনে আমাদের জন্য রক্ষাপত্র এনেছ এজন্য তোমার এবং তোমার আমিরের উপরে আল্লাহর অভিশম্পাত বর্ষিত হোক । (আমালি সাদুক, পৃষ্ঠা ২২০)

 

এক রাতের যুদ্ধ বিরতির আহবান:

ইমাম হুসাইন (আ.) ৯ মহরমের বিকালে আরো এক রাতের যুদ্ধ বিরতির জন্য আহবান জানান। ইমাম হুসাইন (আ.) হজরত আব্বাস (আ.)কে প্রেরণ করেন যেন সে এজিদি বাহিনির কাছ থেকে এক রাতের যুদ্ধ বিরতির অনুমতি নিয়ে আসে। প্রথমে তারা উক্ত প্রস্তাবে রাজি হয়নি। কিন্তু পরে এক রাত যুদ্ধ বিরতি দিতে রাজি হয়। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ১৯০)

 

কারবালাতে আরো সৈন্য বৃদ্ধি:

সন ৬১ হিজরির উক্ত তারিখে ইবনে যিয়াদের নির্দেশে কুফা থেকে আরো সৈন্য কারবালাতে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আসে এবং শিমার ইবনে যিয়াদের চিঠি নিয়ে আসে। (তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩১৫)

 

সাহাবিদের উদ্দেশ্যে ইমাম হুসাইন (আ.)এর বক্তৃতা:

ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর সাহাবিদের ঈমানের দৃঢ়তা পরিক্ষা করার জন ৯ মহরমের বিকালবেলা এবং অন্যমতে রাতের বেলা বক্তৃতা দেন। সাহাবিরা তাদের ঈমানের দৃঢ়তার উক্ত পরিক্ষায় সফল হন। (মানাকেবে আলে আবি তালিব (আ.), খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১০৭)

 

১০ মহরমের রাত:

ইমাম হুসাইন (আ.) তার পরিবার ও সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। ইমাম হুসাইন (আ.)এর সাথে হজরত জয়নাব (সা.আ.) এর বিভিন্নবিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয়।

 

১০ মহরমের দিন:

১০ই মহরমে কারবালার উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি:

ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সাহাবি এবং পরিবার পরিজন শাহাদত বরণ করেন।

ইমাম হুসাইন (আ.) এবং আহলে বাইত (আ.)দের জিনিষপত্র লুন্ঠন করা হয়।

শহিদদের শরির থেকে মাথাকে পৃথক করা হয়।

হুসাইনি তাবুগুলোতে আগুন লাগানো হয়।

 

পাপি ইবনে যিয়াদের মৃত্যু:

সন ৬৭ হিজরি আমির মোখতারের নেতৃত্বে আশুরার দিন ইবনে যিয়াদকে হত্যা করা হয়। এছাড়া হাসিন ইবনে নুমাইর সহ অন্যান্যদেরকেও উক্ত দিনে হত্যা করা হয়। মালিকে আশতারের পুত্র ইব্রাহিম ইবনে আশতার ইবনে যিয়াদকে হত্যা করে। ইব্রাহিম ইবনে আশতার ইবনে যিয়াদের মাথাকে আমির মোখতারের কাছে প্রেরণ করে এবং তিনি ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) এর কাছে মাথাটি প্রেরণ করেন। ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.)উক্ত মাথাটি দেখে শুকরানা সিজদা আদায় করেন। (আমালি তুসি, পৃষ্ঠা ২৪৩)

 

ইমাম মাহদি (আ.) এর কিয়াম :

রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম মাহদি (আ.) উক্ত দিনে কিয়াম করবেন। (তাহযিবুল আহকাম, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩২৩)

 

উম্মে সালামা (রা.)এর মৃত্যু দিবস:

সন ৬২ অথবা অন্যমতে ৬৩ হিজরির উক্ত তারিখে রাসুল (সা.)এর স্ত্রী উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর নাম ছিল হিন্দ। তাঁর পিতার নাম ছিল আবি উমাইয়া এবং মাতার নাম আতিকা বিনতে আব্দুল মোত্তালিব। তার স্বামির নাম ছিল আবু সালামা বিন আব্দুল আসাদ বিন মুগাইরা এবং তিনি ছিলেন উম্মে সালামা (রা.) এর খালাতো ভাই। ইসলাম গ্রহণের পরে তিনি তাঁর স্বামির সাথে হাবাশায় হিজরত করেন। আবু সালামা সেখানে এক যুদ্ধে আহত হন। মদিনায় ফিরে আসার পরে তিনি উক্ত আঘাতের কারণে চরমভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। আবু সালামার চারজন সন্তান ছিল সালামা, উমর, জয়নাব এবং দুররা। উম্মে সালামা ৮৪ বছর বয়সে কারবালার ঘটনার পরে এজিদের হুকুমতকালে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর তার দেহকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। (তারিখে দামেস্ক, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২১১)

 

 

১১ই মহরম

শামে গারিবান:

কারবালায় আহলে বাইত (আ.)দের জন্য সবচেয়ে কষ্টের রাত ছিল শামে গারিবান। কেননা উক্ত রাতে আহলে বাইত (আ.) এর তাবুগুলোতে আগুন জালিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং তাদের মালামালগুলোকে লুন্ঠন করা হয়। তাদের শহিদদের লাশকে ঘোড়ার পায়ে পিষ্ঠ করা হয়।

 

ইমাম হুসাইন (আ.)এর মাথাকে তন্দুরের মধ্যে রাখা হয়:

উক্ত তারিখের রাতে ইমাম হুসাইন (আ.) এর মাথাকে ইবনে যিয়াদের প্রাসাদের নিয়ে যাওয়া হয়। যেহেতু অনেক রাত হয়ে যায় সেহেতু প্রসাদের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন খোলি বিন ইয়াযিদে আসবাহি তার বাড়িতে ইমাম হুসাইন (আ.) এর পবিত্র মাথাকে তন্দুরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল।(ফেইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ১৫৫- ১৫৬)

 

নবি পরিবারকে বন্দি করা হয়:

উমরে সাআদ যোহরের সময় পর্যন্ত কারবালাতে অবস্থান করে। কারবালায় এজিদি বাহিনির লাশের উপরে জানাযার নামাজ পড়ে এবং তাদেরকে দাফন করে দেয়। দিনের অবশিষ্ট অংশে সে নবিপুরিকে বন্দি করে কারবালা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। নবি পরিবারের মেয়েদেরকে পর্দা বিহিন উটের উপরে বসিয়ে কারবালার শহিদদের লাশের পাশ দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। (তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৪৮)

 

কুফার পথে বন্দি নবি পরিবার:

আসরের সময় আহলে বাইত (আ.)কে বন্দি করে কুফার দিকে রওনা করা হয়। উক্ত বন্দি কাফেলাটি রাতে কুফাতে পৌছায়। সেহেতু কুফার দরজা বন্ধ ছিল সেহেতু সকাল পর্যন্ত তাদেরকে দরজার কাছে অপেক্ষারত অবস্থায় রাখা হয়। উমরে আস তার উক্ত কাজের জন্য খুবই আনন্দিত ছিল। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড মহরম ওয়া সফর, পৃষ্ঠা ২০৪)

 

১২ই মহরম:

কারবালার শহিদদের দাফন করা হয়:

সন  ৬১ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর সাহাবিদের পবিত্র লাশকে ইমাম জয়নুল আবেদিন  (আ.) এবং বণি আসাদের কিছু লোকজনের সাহায্যে দাফন করা হয়। তবে ইতিহাসে ১৩ই মহরমের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। (তাযকেরাতুশ শোহাদা, পৃষ্ঠা ৪৪৫)

 

আহলে বাইত (আ.)এর বন্দিরা কুফাতে পৌছায়:

 উক্ত তারিখে আহলে বাইত (আ.)এর বন্দিরা কুফাতে পৌছায়। ইবনে যিয়াদ আদেশ জারি করে কেউ অস্ত্র হাতে ঘরের বাইরে আসতে পারবে না। সে ১০ হাজার পদাতিক বাহিনিকে শহরের বিভিন্ন রাস্তা ও গলিরও মুখে পাহারা দেয়ার নির্দেশ দেয় যেন কেউ কোন প্রকারের অতর্কিত হামলা না করতে পারে। ইবনে যিয়াদ শহিদদের মাথাকে আহলে বাইত (আ.)দের সম্মুখে রেখে তাদেরকে কুফার অলিগলিতে ঘুরানোর নির্দেশ দেয়। (মাসিরুল আহযান, পৃষ্ঠা ৬৬)

 

১৩ই মহরম:

ইবনে যিয়াদের দরবারে বন্দি নবি পরিবার:

কুফার অলিগলিতে শহিদদের মাথাকে  ঘুরানোর পরে ইবনে যিয়াদ ইমাম হুসাইন (আ.)এর মাথাকে তার সম্মুখে রাখার নির্দেশ দেয়। অতঃপর ইমাম জয়নুল আবেদনি (আ.) সহ নবি পরিবারের নারি ও শিশুদেরকে দড়িতে বাঁধা অবস্থায় দরবারে উপস্থিত করা হয়। তখন দরবারে উপস্থিত লোকজন বন্দিদেরকে উপহাস করছিল। (আল ওয়াকায়া ওয়াল হাওয়াদেস, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬২- ৬৩)

 

নবি পরিবারকে কুফার কারাগারে বন্দি করা হয়:

ইবনে যিয়াদের দরবার থেকে বিদায় নেয়ার পরে নবি পরিবারকে বেড়ি ও জন্জির পরিহিত অবস্থায় কুফার কারাগারে প্রেরণ করা হয়।(আমালি সাদুক, পৃষ্ঠা ২২৯)

 

ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের খবরকে প্রচার:

ইবনে যিয়াদ ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের খবরকে মদিনা ও শামে প্রচারের জন্য চিঠি লিখে প্রেরণ করে।(ওকায়া ওয়াল হাওয়াদেস, খন্ড মহরম, পৃষ্ঠা ৯৬)

 

আব্দুল্লাহ বিন আফিফ-এর শাহাদত:

 “আব্দুল্লাহ বিন আফিফ আযদি” ছিলেন ইমাম আলি (আ.)এর সাহাবি। তিনি জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং উক্ত যুদ্ধে তিনি অন্ধত্ব বরণ করেন। তিনি তার জিবনের অবশিষ্ট সময়টুকু আল্লাহর ইবাদতের নিমগ্ন থাকতেন। যখন ইবনে যিয়াদ ইমাম আলি (আ.) এবং ইমাম হুসাইন (আ.)এর বিরূদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছিল তখন তিনি তার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন: হে ইবনে মারজানা তুমি এবং তোমার বাবা হচ্ছো মিথ্যাবাদি। তুমি হচ্ছো আল্লাহর শত্রু! তুমি রাসুলের সন্তানকে হত্যা করে মেম্বারে অরোহন করে তাদের বিরূদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছো। অতঃপর ইবনে যিয়াদ তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়।  (ওকায়েউল হাওয়াদেস, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮০- ৮৭)

 

১৫ই মহরম:

শহিদদের কাটা মাথাকে শামের উদ্দেশ্যে প্রেরণ

উক্ত তারিখে কারবালার শহিদদের কাটা মাথাগুলোকে কুফা থেকে শামের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু পরে আহলে বাইত (আ.) শাহিদদের কাটা মাথাকে দাফন করে দেন। (আমালি সাদুক, পৃষ্ঠা ২৩২)

 

১৯শে মহরম:

শামে নবি পরিবার (আ.)দের প্রেরণ:

উক্ত তারিখে নবি পরিবাকে কুফা থেকে শামের উদ্দেশ্যে রওনা করা হয়। হাশেমি বংশের নারি ব্যাতিত অন্যান্য বংশের নারিদের বিভিন্ন ব্যাক্তিত্ব এবং স্বজাতিয়দের সুপারিশের কারণে তাদেরকে মুক্ত করে দেয়া হয় এবং বণি হাশিমের নারিদেরকে শামের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়। (আবসারুল আয়ন ফি আনসারিল হুসাইন, পৃষ্ঠা ১৩৩)

 

২০শে মহরম:

জউন নামক দাশকে কারবালাতে দাফন:

আশুরার ঘটনার দশ দিন পরে বণি আসাদের লোকেরা আবু যার গাফফারি (রহ.)এর দাশ জউন এর লাশকে চিহ্নিত করতে পারে এবং উক্ত দিনে তারা জউনের লাশকে দাফন করে দেয়। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৩১১)

 

২৫শে মহরম:

ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) এর শাহাদত:

ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) ৯৪ অথবা ৯৫ হিজরিতে ৫৭ বছর বয়সে বণি উমাইয়ার খলিফা ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেক এর বিষ প্রয়োগের কারণে শাহাদত বরণ করেন। এছাড়া ইতিহাসে তাঁর শাহাদতের তারিখ সম্পর্কে বিভন্ন মতামত বর্ণিত হয়েছে যেমন: ১২, ১৮, ১৯ মহরম এবং ১লা সফর। (মেসবাহুল মোতাহাজজদে, পৃষ্ঠা ৭২৯)

 

২৬শে মহরম:

আলি বিন হাসান মোসাল্লাস (আ.) এর শাহাদত:

উক্ত তারিখে সন ১৪৬ হিজরিতে “আলি বিন হাসানে মোসাললাস” ৪৫ বছর বয়সে খলিফা মনসুরের কারাগারে সিজদারত শিকল বাঁধা অবস্থায় শাহাদত বরণ করেন। (শাজারে তুবা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬২)

 

২৮শে মহরম:

হুযাইফা বিন ইয়ামেন (রা.) এর শাহাদত:

হুযাইফা বিন ইয়ামেন (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)এর একনিষ্ঠ সাহাবি। রাসুল (সা.) তাঁকে মুনাফিকদের তালিকা দিয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন ঐ সাত জনের মধ্যে একজন যিনি হজরত ফাতেমা (সা.) এর জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। তিনি  ইমাম আলি (আ.) এর খেলাফতে আসিন হওয়ার চল্লিশ দিন পরে মাদায়েনে মৃত্যু বরণ করেন। (মুনতাহিউল আমাল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২০)

 

ইমাম জাওয়াদ (আ.)কে বাগদাদে নির্বাসন:

সন ২২০ হিজরিতে ইমাম জাওয়াদ (আ.) কে আব্বাসিয় খলিফা মোতাসিমের নির্দেশে মদিনা থেকে বাগদাদে নির্বাসনের নির্দেশ দেয়া হয়। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৯৫)

 

বাআলাবাক নামক স্থানে বন্দি হুসাইনি কাফেলার আগমণ:

উক্ত তারিখে আহলে বাইত (আ.)এর বন্দি কাফেলা ‘বালাবাক’ নামক স্থানে পৌছায়। সেখানে জনগণ আহলে বাইত (আ.)এর বন্দিত্ব অবস্থার কারণে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে উক্ত অবস্থাটি দেখার পরে উম্মে কুলসুম তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেন। (কালায়েদুন নাহুর, খন্ড মহরম সফর, পৃষ্ঠা ৩৩২)

 

২৯শে মহরম:

শামে আহলে বাইত (আ.)এর বন্দি কাফেলার আগমণ:

সন ৬১ হিজরি উক্ত তারিখে হুসাইনি বন্দি কাফেলা শামে পৌছায়। যখন উক্ত কাফেলা শামে পৌছায় তখন ইব্রাহিম বিন তালহা বিন আব্দুল্লাহ ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) এর কাছে এসে বলে:দেখেছ কারা জয়ি হয়েছে? তখন ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) বলেন একটু অপেক্ষা কর যখন আযান ও আকামত দিবে তখন বুঝতে পারবে যে, কে কেয়ামত পর্যন্ত জয়ি হয়েছে। (আমালি তুসি, পৃষ্ঠা ৬৭৭)

 

মহরমের শেষ তারিখ:

শাজারে মালউনা:

সন ১১ হিজরির উক্ত তারিখে ‘শাজারে মালউনা’ লিখা হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ২৮, পৃষ্ঠা ১০৪)

 

হজরত মারিয়া কিবতি (রা.)এর মৃত্যু:

সন ১৫ অথবা ১৬ হিজরিতে উম্মুল মুমিনিন মারিয়া কিবতি মদিনাতে মারা যায়। তাঁর বাবার নাম ছিল শামউন কিবিতি। বাদশা ইস্কান্দার রাসুল (সা.) এরজন্য  উপহার স্বরূপ মারিয়া কিবতি তাঁর বোন শিরিন এবং তাঁর ভাই মাপুর সহ এক হাজার মিসকাল সোনা এবং ২০টি রেশমি পোষাক, ইয়াফুর নামক একটি গাধা এবং দুলদুল নামক একটি অশ্বতর প্রেরণ করে। অতঃপর রাসুল (সা.) মারিয়া কিবতি কে বিবাহ করেন। তিনি ১৪ অথবা ১৬ হিজরি হজরত উমরের খেলাফকালে মারা যান। হজরত উমর তার জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করে দেন। (রিয়াহিনুশ শারিয়াহ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৪২)

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন