সফর মাসের আমল সমূহ

সফর মাসটি হচ্ছে আরবি বছরের দ্বিতিয় মাস। যেহেতু মহরম মাসটিকে জাহেলিয়াতের যুগে পবিত্র মাস বলে মনে করা হতো সেহেতু আরবের জাহেলি যুগের লোকেরা উক্ত মাসে যুদ্ধ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতো। কিন্তু সফর মাস আগমেণের সাথে সাথে তারা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নিজেদের ঘর থেকে যু

সফর মাসের আমল সমূহ

 সফর, সফর মাস, সফর মাসের আমল, ইমাম হুসাইন, ইমাম হুসাইন (আ.)এর চল্লিশা, চেহেলুম, শাহাদত, রাসুল (সা.)এর শাদাদত, ইমাম রেযা (আ.), ইমাম হাসান, এজিদ শাম, এজিদের দরবার, যিয়ারতে আরবাইন, আরবাইনের যিয়ারত, ইরাক, কারবালা,

এস, এ, এ

সফর মাসটি হচ্ছে আরবি বছরের দ্বিতিয় মাস। যেহেতু মহরম মাসটিকে জাহেলিয়াতের যুগে পবিত্র মাস বলে মনে করা হতো সেহেতু আরবের জাহেলি যুগের লোকেরা উক্ত মাসে যুদ্ধ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতো। কিন্তু সফর মাস আগমেণের সাথে সাথে তারা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নিজেদের ঘর থেকে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওনা হতো আর এ কারণে তাদের ঘরগুলো খালি পড়ে থাকতো আর এ কারণেইে এ মাসকে “সফর” বলে নামকরণ করা হয়।

সফর মাসের নামকরণের দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:

-      সফর মাসটি “صُفْرَة” থেকে নেয়া হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে হলুদ। কেননা শরৎকালে গাছের পাতাগুলো হলুদ রঙ্গের হয়ে যায়।

-      সফর মাসের নামকরণের আরেকটি কারণ হচ্ছে উক্ত মাসটি “صِفْر” শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে খালি বা শুন্য কেননা যারা হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধ করাকে হারাম বলে মনে করতো তারা উক্ত মাসে নিজেদের ঘর থেকে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বাহির হয়ে পড়তো। আর এ কারণেই তাদের শহর এবং ঘরগুলো মানব শূন্য অবস্থায় পড়ে থাকতো।

নিন্মে সফর মাসের বিভিন্ন দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হলো:

১লা সফর:

-  ইমাম হুসাইন (আ.)এর কাটা মাথাকে শামে আনা হয়।

-  আহলে বাইত (আ.)দেরকে বন্দি করে শামে আনা হয়।

-  যায়দ বিন আলি বিন হুসাইন (আ.)কে শহিদ করা হয়।

-  সিফফিনের যুদ্ধ শুরু হয়।

২য় সফর:

-  আহলে বাইত (আ.)দেরকে পাপিষ্ঠ এজিদের দরবারে উপস্থিত করা হয় এবং অন্য এক মতে যায়দ বিন আলি বিন হুসাইন (আ.)কে উক্ত দিনে ১২০ হিজরিতে বণি উমাইয়ার বিরোধিতা ও বিপ্লবি আন্দোলন করার কারণে তাকে ৪২ বছর বয়সে শহিদ করা হয়।

৩য় সফর:

-  এক বর্ণনামতে ইমাম মোহাম্মাদ বাকের (আ.) সন ৫৭ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন।

৫ম সফর:

-   সন ৬১ হিজরিতে হজরত রুকাইয়া (সা.আ.)এর শাহাদত।

৭ম সফর:

-  এক বর্ণনামতে সন ১২৮ হিজরিতে ইমাম মূসা কাযিম (আ.) মক্কা ও মদিনার মাঝে অবস্থিত “আবওয়া” নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।

৮ই সফর:

-  সন ৩৫ হিজরি হজরত সালমান ফার্সি (রা.)এর ওফাত দিবস।

৯ম সফর:

-  সন ৩৭ হিজরি সিফফিনের যুদ্ধে মাবিয়া কর্তৃক হজরত আম্মারে ইয়াসির (রা.)এর শাহাদত। সন ৩৮ হিজরিতে নাহরাওয়ানের যুদ্ধ শুরু হয়।

১২ সফর:

-  হজরত মূসা (আ.)এর ভাই হজরত হারুন (আ.)এর ওফাত দিবস।

১৩ই সফর:

-  সিফফিনের যুদ্ধে উমরে আসের বিচারক নির্ধারনের ষড়যন্ত্রের কারণে খারেজি ফেরকার সৃষ্টি হয়।

১৪ই সফর:

-   উমরে আস কর্তৃক মোহাম্মাদ বিন আবু বকরকে হত্যা করা হয়।

১৮ই সফর:

-  সন ৩৭ হিজরি সিফফিনের যুদ্ধে ওয়াইস কার্নি (রা.)কে শহিদ করা হয়।

২০শে সফর:

-  ইমাম হুসাইন (আ.)এর চল্লিশা।

-  উক্ত দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)এর চল্লিশা কে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ যিয়ারত পাঠ করা হয়ে থাকে। যাকে যিয়ারতে আরবাইন বলা হয়। যিয়ারতটি হচ্ছে নিন্মরূপ:

السَّلامُ عَلَى وَلِيِّ اللَّهِ وَ حَبِيبِهِ السَّلامُ عَلَى خَلِيلِ اللَّهِ وَ نَجِيبِهِ السَّلامُ عَلَى صَفِيِّ اللَّهِ وَ ابْنِ صَفِيِّهِ السَّلامُ عَلَى الْحُسَيْنِ الْمَظْلُومِ الشَّهِيدِ السَّلامُ عَلَى أَسِيرِ الْكُرُبَاتِ وَ قَتِيلِ الْعَبَرَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَشْهَدُ أَنَّهُ وَلِيُّكَ وَ ابْنُ وَلِيِّكَ وَ صَفِيُّكَ وَ ابْنُ صَفِيِّكَ الْفَائِزُ بِكَرَامَتِكَ أَكْرَمْتَهُ بِالشَّهَادَةِ وَ حَبَوْتَهُ بِالسَّعَادَةِ وَ اجْتَبَيْتَهُ بِطِيبِ الْوِلادَةِ وَ جَعَلْتَهُ سَيِّدا مِنَ السَّادَةِ وَ قَائِدا مِنَ الْقَادَةِ وَ ذَائِدا مِنَ الذَّادَةِ وَ أَعْطَيْتَهُ مَوَارِيثَ الْأَنْبِيَاءِ وَ جَعَلْتَهُ حُجَّةً عَلَى خَلْقِكَ مِنَ الْأَوْصِيَاءِ فَأَعْذَرَ فِي الدُّعَاءِ وَ مَنَحَ النُّصْحَ وَ بَذَلَ مُهْجَتَهُ فِيكَ لِيَسْتَنْقِذَ عِبَادَكَ مِنَ الْجَهَالَةِ وَ حَيْرَةِ الضَّلالَةِ وَ قَدْ تَوَازَرَ عَلَيْهِ مَنْ غَرَّتْهُ الدُّنْيَا وَ بَاعَ حَظَّهُ بِالْأَرْذَلِ الْأَدْنَى وَ شَرَى آخِرَتَهُ بِالثَّمَنِ الْأَوْكَسِ وَ تَغَطْرَسَ وَ تَرَدَّى فِي هَوَاهُ وَ أَسْخَطَكَ وَ أَسْخَطَ نَبِيَّكَ وَ أَطَاعَ مِنْ عِبَادِكَ أَهْلَ الشِّقَاقِ وَ النِّفَاقِ وَ حَمَلَةَ الْأَوْزَارِ الْمُسْتَوْجِبِينَ النَّارَ [لِلنَّارِ] فَجَاهَدَهُمْ فِيكَ صَابِرا مُحْتَسِبا حَتَّى سُفِكَ فِي طَاعَتِكَ دَمُهُ وَ اسْتُبِيحَ حَرِيمُهُ اللَّهُمَّ فَالْعَنْهُمْ لَعْنا وَبِيلا وَ عَذِّبْهُمْ عَذَابا أَلِيما السَّلامُ عَلَيْكَ يَا ابْنَ رَسُولِ اللَّهِ السَّلامُ عَلَيْكَ يَا ابْنَ سَيِّدِ الْأَوْصِيَاءِ أَشْهَدُ أَنَّكَ أَمِينُ اللَّهِ وَ ابْنُ أَمِينِهِ عِشْتَ سَعِيدا وَ مَضَيْتَ حَمِيدا وَ مُتَّ فَقِيدا مَظْلُوما شَهِيدا وَ أَشْهَدُ أَنَّ اللَّهَ مُنْجِزٌ مَا وَعَدَكَ وَ مُهْلِكٌ مَنْ خَذَلَكَ وَ مُعَذِّبٌ مَنْ قَتَلَكَ وَ أَشْهَدُ أَنَّكَ وَفَيْتَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَ جَاهَدْتَ فِي سَبِيلِهِ حَتَّى أَتَاكَ الْيَقِينُ فَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ قَتَلَكَ وَ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ظَلَمَكَ وَ لَعَنَ اللَّهُ أُمَّةً سَمِعَتْ بِذَلِكَ فَرَضِيَتْ بِهِ اللَّهُمَّ إِنِّي أُشْهِدُكَ أَنِّي وَلِيٌّ لِمَنْ وَالاهُ وَ عَدُوٌّ لِمَنْ عَادَاهُ بِأَبِي أَنْتَ وَ أُمِّي يَا ابْنَ رَسُولِ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّكَ كُنْتَ نُورا فِي الْأَصْلابِ الشَّامِخَةِ وَ الْأَرْحَامِ الْمُطَهَّرَةِ [الطَّاهِرَةِ] لَمْ تُنَجِّسْكَ الْجَاهِلِيَّةُ بِأَنْجَاسِهَا وَ لَمْ تُلْبِسْكَ الْمُدْلَهِمَّاتُ مِنْ ثِيَابِهَا وَ أَشْهَدُ أَنَّكَ مِنْ دَعَائِمِ الدِّينِ وَ أَرْكَانِ الْمُسْلِمِينَ وَ مَعْقِلِ الْمُؤْمِنِينَ وَ أَشْهَدُ أَنَّكَ الْإِمَامُ الْبَرُّ التَّقِيُّ الرَّضِيُّ الزَّكِيُّ الْهَادِي الْمَهْدِيُّ وَ أَشْهَدُ أَنَّ الْأَئِمَّةَ مِنْ وُلْدِكَ كَلِمَةُ التَّقْوَى وَ أَعْلامُ الْهُدَى وَ الْعُرْوَةُ الْوُثْقَى وَ الْحُجَّةُ عَلَى أَهْلِ الدُّنْيَا وَ أَشْهَدُ أَنِّي بِكُمْ مُؤْمِنٌ وَ بِإِيَابِكُمْ مُوقِنٌ بِشَرَائِعِ دِينِي وَ خَوَاتِيمِ عَمَلِي وَ قَلْبِي لِقَلْبِكُمْ سِلْمٌ وَ أَمْرِي لِأَمْرِكُمْ مُتَّبِعٌ وَ نُصْرَتِي لَكُمْ مُعَدَّةٌ حَتَّى يَأْذَنَ اللَّهُ لَكُمْ فَمَعَكُمْ مَعَكُمْ لا مَعَ عَدُوِّكُمْ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَ عَلَى أَرْوَاحِكُمْ وَ أَجْسَادِكُمْ [أَجْسَامِكُمْ‏] وَ شَاهِدِكُمْ وَ غَائِبِكُمْ وَ ظَاهِرِكُمْ وَ بَاطِنِكُمْ آمِينَ رَبَّ الْعَالَمِينَ.

২১শে সফর:

-  সন ৪২০ হিজরিতে ইমাম মাহদি (আ.) শেইখ মুফিদ (রহ.)এর উদ্দেশ্যে (توقیع) বা স্বিকৃতিনামা প্রেরণ করেন।

২৩শে সফর:

-  হজরত সালেহ (আ.)এর মাদি উটের পা কেটে ফেলা হয়। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে আটকে পড়েন।

২৪শে সফর:

-   রাসুল (সা.)এর রোগ প্রবল হয়।

২৫শে সফর:

-  রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে ওসিয়ত লিখার জন্য কাগজ ও কলম চান কিন্তু হজরত উমর তা দান করতে বাধা প্রদান করেন।

২৬শে সফর:

-  সন ১১ হিজরিতে রাসুল (সা.) রোমীয়দের সাথে যুদ্ধ করার জন্য উসামার নেতৃত্বে তাঁর সাহাবিদেরকে রওনা হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।

২৮শে সফর:

-  সন ১১ হিজরি রাসুল (সা.) এবং ২৮ হিজরিতে ইমাম হাসান (আ.)এর শাহাদত দিবস।

৩০শে সফর:

-   সৈয়দ ইবনে তাউস থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুযায়ি ইমাম রেযা (আ.)এর শাহাদত দিবস। ইমাম রেযা (আ.)কে আব্বাসিয় খলিফা মামুন বিষ দান করে এবং উক্ত বিষের কারণে ইমাম রেযা (আ.) শাহাদত বরণ করেন।

সফর মাসের আমল সমুহ:

যেহেতু এ মাসটিকে অমঙ্গল বলে মনে করা হয় সেহেতু এ মাসে সাদকা প্রদান, আল্লাহর ছত্রছায়ায় আশ্রয় লাভ এবং দোয়া করার জন্য অনেক তাকিদ করা হয়েছে। যদি কেউ উক্ত মাসটিতে বিপদ বিহিন জিবন অতিবাহিত করতে চাই তাহলে সে যেন প্রত্যেক দিন নিন্মোক্ত দোয়াটি ১০ বার পাঠ করে:

یا شَدیدَ الْقُوی‏ وَیا شَدیدَ الْمِحالِ یا عَزیزُ یا عَزیزُ یا عَزیزُ ذَلَّتْ بِعَظَمَتِكَ جَمیعُ خَلْقِكَ

فَاكْفِنی‏ شَرَّ خَلْقِكَ یا مُحْسِنُ یا مُجْمِلُ یا مُنْعِمُ یا مُفْضِلُ یا لا اِلهَ اِلاّ اَنْتَ سُبْحانَكَ اِنّی‏

كُنْتُ مِنَ الظَّالِمینَ فَاسْتَجَبْنا لَهُ وَنَجَّیْناهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذلِكَ نُنْجِی الْمُؤْمِنینَ وَصَلَّی اللَّهُ

عَلی‏ مُحَمَّدٍ وَ الِهِ‏ الطَّیِّبینَ الطَّاهِرینَ

সৈয়দ ইবনে তাউস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ৩ রা সফরে দুই রাকাত নামাজ পড়া হচ্ছে মুস্তাহাব। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে সুরা ফাতহ, দ্বিতিয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে সুরা ইখলাস। নামাজান্তে ১০০ বার দুরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে, ১০০ বার বলতে হবে “اللهم العن آل ابی سفیان” এবং ১০০ বার আসতাগফার পাঠ করতে হবে।

উক্ত মাসে অন্যান্য আমল সমূহের মধ্যে উত্তম হচ্ছে দোয়া, কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ এবং রোজা রাখা।

আল্লামা মাজলিসি বর্ণনা করছেন যে, প্রত্যেক মাসে তিনটি রোজা রাখা হচ্ছে উত্তম।

-  মাসের প্রথম বৃহঃস্পতিবার।

-  মাসের শেষ বৃহঃস্পতিবার।

-  মাসের প্রথম পক্ষের প্রথম বুধবার।

অনুরুপভাবে উক্ত মাসে প্রথম ভাগে দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য তাকিদ করা হয়েছে। নামাজটি পড়ার  নিয়ম হচ্ছে প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে ৩০ বার সুরা ইখলাস, দ্বিতিয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে ৩০ বার সুরা ক্বদর এবং নামাজান্তে সাদকা প্রদানের জন্য তাকিদ করা হয়েছে।

 

 

 

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন