সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হজরত মোহাম্মাদ (সা.) -৩

সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হজরত মোহাম্মাদ (সা.) -৩

সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হজরত মোহাম্মাদ (সা.) -৩

Shia, Sunni, Islam, Quran, Karbala, najaf, kufa, mashad, samera, madina, makka, jannatul baqi, kazmain, ali, Fatima, hasan, hussain, mohammad, imam mahdi ,সূরা মরিয়ম, হজরত মরিয়ম, হজরত ঈসা, সূরা মারিয়াম, কুরআন, সূরা, মক্কা, হযরত যাকারিয়া, হযরত মারিয়াম, হযরত ইসা, হযরত ইয়াহিয়া, হযরত ইব্রাহিম, হযরত ইসমায়িল, ইদ্রিস, মারিয়াম, এশা, রিযিক, আধ্যাতিকতা, ইমাম মাহদী, চোখের জ্যোতি, মুমিন, ইমাম সাদিক, ইমাম আলী, খোদা, তেলাওয়াত, আল্লাহ, নবী, রাসূল, হযরত মুসা, মুজিযা, রিসালাত, মু’মিন, কিয়ামত, মানুষ, জাহান্নাম, গোনাহ, গোনাহগার, আয়াত, নবুওয়াত, নামাজ, ইবাদত, ওহী, মাদায়েন, মিশর, হিজরত, সূরা ত্বোয়াহা, সূরা আম্বিয়া, আম্বিয়া, সূরা, ফেরেশতা, হযরত লুত, নূহ, হযরত দাউদ, সোলায়মান, ইয়াহইয়া, হযরত ইউনুস, যাকারিয়া, নবী, রাসূল, নেয়ামত, আল্লাহ, ফাতিহা, মক্কা, সূরা আল ফাতিহা,
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ও উত্তরাধিকারী আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন:
হে আলী! মিথ্যা কারণে আল্লাহকে নিয়ে কসম করবে না আর সত্যের ক্ষেত্রেও আবশ্যক না হলে তা করবে না। আল্লাহকে তোমাদের কসমের হাতিয়ারে পরিণত কর না। কেননা, যে ব্যক্তি আল্লাহকে নিয়ে মিথ্যা কসম করে আল্লাহ তার প্রতি রহম করেন না এবং তার প্রতি সদয় হন না।
হে আলী! আগামীকালের জীবিকা নিয়ে দুঃখ করো না। কারণ, প্রত্যেক আগামীকালের (সাথে তার জন্য নির্ধারিত) জীবিকাও এসে পড়ে।
হে আলী! গোঁয়ার্তুমি থেকে দূরে থাক। এর গোড়ায় রয়েছে মূর্খতা আর পরিণামে রয়েছে অনুশোচনা।
হে আলী! দাঁত মাজতে ভুলো না। কারণ, দাঁত মাজার ফলে মুখ পবিত্র হয়, আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হন এবং চোখের জ্যোতি বাড়ে। আর দাঁত খিলাল করার কারণে তুমি ফেরেশতাদের প্রিয় হবে। কারণ, যে ব্যক্তি খাওয়ার পর দাঁত খিলাল করে না তার মুখের দুর্গন্ধে ফেরেশতারা বিরক্ত হয়।
হে আলী! রাগান্বিত হয়ো না। আর যদি রাগান্বিত হও, তা হলে বসে পড় এবং আল্লাহর বান্দাদের ওপর তাঁর ক্ষমতার কথা এবং তাদের প্রতি তাঁর ধৈর্যের কথা চিন্তা করো। আর যখন তোমাকে বলা হয় : আল্লাহকে ভয় করো, তখন তোমার ক্রোধকে দূরে ঠেলে দাও এবং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতায় প্রত্যাবর্তন করো।
হে আলী! তোমার নিজের জন্য যা কিছু ব্যয় করো তার মধ্যে আল্লাহকে (সন্তুষ্টিকে) উদ্দেশ্য করো। যাতে আল্লাহর কাছে তোমার জন্য সঞ্চয় হয়।
হে আলী! নিজ পরিবার, প্রতিবেশী এবং যাদের সাথে ওঠা-বসা ও কথাবার্তা বল তাদের সাথে সদাচরণ করবে যাতে আল্লাহর কাছে সেগুলো সঞ্চিত দেখতে পাও।
হে আলী! যা কিছু নিজের জন্য পছন্দ করো না, তা অন্যের জন্যও কামনা করো না। আর যা কিছু নিজের জন্য পছন্দ করো, তা তোমার ভাইয়ের জন্যও চাও। যাতে তোমার বিচারে ন্যায়বান হতে পার এবং তোমার ন্যায়বিচারে সুবিচারক হতে পার, আর আসমানবাসীর কাছে প্রিয় হতে পার, আর জমিনবাসীর বুকে বন্ধুর আসন করে নিতে পার। আমার এ ওসিয়তকে সংরক্ষণ করো মহান আল্লাহ্ চাহেন তো।
এবারে শামউন ইবনে লাভী ইবনে ইয়াহুদা নামক একজন পাদ্রীর নানা প্রশ্নের জবাবে বিশ্বনবী (সা.) যেসব অমূল্য বক্তব্য রেখেছিলেন সেগুলোর কিছু প্রধান অংশ এখানে তুলে ধরব। শামউন ঈসা (আ.)-এর জনৈক হাওয়ারীর বংশধর ছিলেন। তিনি মহানবী (সা.) এর কাছে অনেক প্রশ্ন তুলে ধরেন। আর রাসূল (সা.) তার সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। ফলে শামউন তাঁর প্রতি ঈমান আনেন এবং তাঁর নবুওয়াতকে সত্য বলে স্বীকার করে নেন।
এক পর্যায়ে শামউন বলেন : আমাকে বলুন দেখি আকল তথা বুদ্ধিবৃত্তি কি এবং তার প্রকৃতি কিরূপ? তা থেকে কি নির্গত হয় এবং কী নির্গত হয় না? সেগুলোর সব শ্রেণীর ব্যাখ্যা দিন। রাসূলে খোদা (সা.) বললেন :

“আকল হলো অজ্ঞতা এবং নাফসের একটি বাঁধন। নাফস (প্রবৃত্তি) জঘন্যতম জন্তুর ন্যায়। যদি এ বাঁধন না থাকে, তা হলে তা পাগলা কুকুর হয়ে যায়। সুতরাং আকল হলো অজ্ঞতার বাঁধন। আল্লাহ্ আকলকে সৃষ্টি করলেন এবং তাঁকে বললেন : সামনে ফেরো। সে ফিরলো। তাকে বললেন : পেছনে ফেরো। সেও পেছনে ফিরলো। আল্লাহ্ বললেন : আমার মহিমা ও মর্যাদার শপথ, তোমার চেয়ে বড় এবং অধিক অনুগত কোনো সৃষ্টিকে আমি সৃষ্টি করি নি। তোমাকে দিয়েই শুরু করবো এবং তোমাকেই নিজ দরগাহে ফিরিয়ে আনব। পারিশ্রমিক এবং সওয়াব তোমার জন্যই। শাস্তিও তোমার ভিত্তিতেই হবে। আকল থেকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা নির্গত হলো। আর ধৈর্য থেকে জ্ঞান। আর জ্ঞান থেকে চিন্তার পরিপক্কতা, আর চিন্তার পরিপক্কতা থেকে চারিত্রিক পবিত্রতা। আর চারিত্রিক পবিত্রতা থেকে আত্মসংযম। আর আত্মসংযম থেকে লজ্জা। আর লজ্জা থেকে ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা, আর ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে অব্যাহতভাবে সৎ কাজে প্রবৃত্ত হওয়া। আর অব্যাহতভাবে সৎ কাজে প্রবৃত্ত হওয়া থেকে মন্দ কাজকে ঘৃণা করা। আর মন্দ কাজকে ঘৃণা করা থেকে উপদেশ দাতার উপদেশ মেনে চলা। এ হলো কল্যাণের দশটি শ্রেণী। এ প্রত্যেক শ্রেণীর আবার দশটি করে প্রকার রয়েছে।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলছিলেন, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা থেকে (আসে) : ১. সুন্দর বৈশিষ্ট্যে সজ্জিত হওয়া ২. পুণ্যবানদের সাথে ওঠাবসা ৩. লাঞ্ছনা দূরীকরণ ৪. নিচতা থেকে নির্গমন, ৫। কল্যাণের প্রতি ঝোঁক, ৬. উচ্চতর মর্যাদার নিকটবর্তী হওয়া, ৭. মার্জনা ৮. অবকাশ প্রদান, ৯. সদাচার, ১০. নীরবতা। বুদ্ধিমান ব্যক্তির সহিষ্ণুতা থেকে এসব নির্গত হয়।
আর জ্ঞান থেকে নির্গত হয় : ১. অভাবহীনতা, এমনকি যদি নিঃস্বও হয়ে থাকে। ২. দানশীলতা, যদিও সে কৃপণ থাকে। ৩. ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি, যদিও সে বিনয়ী থাকে, ৪। সুস্থতা, যদিও সে রুগ্ন থাকে, ৫. নৈকট্য, যদিও সে দূরে থাকে, ৬. লজ্জাশীলতা, যদিও সে মুখরা থাকে, ৭. মর্যাদাশীলতা, যদিও সে অধীনস্থ হয়, ৮. আভিজাত্য, যদিও সে নীচ (বংশের হয়ে) থাকে, ৯. প্রজ্ঞা এবং ১০. (যোগ্যতা, সুযোগ-সুবিধা ও সময়ের) সদ্ব্যবহার। এগুলো হলো আকল-সমৃদ্ধ বা বিবেকবান ব্যক্তির জ্ঞানের ফল। সুতরাং ধন্য হোক সে ব্যক্তি যে আকলকে প্রয়োগ করেছে এবং জ্ঞান লাভ করেছে।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলছিলেন, আর চিন্তার পরিপক্কতা থেকে নির্গত হয় : ১. অবিচলতা, ২. হেদায়েত, ৩. সৎকর্মশীলতা ৪. সংযমশীলতা, ৫. সফলতা, ৬. মধ্যপন্থা, ৭. মিতাচার, ৮. পারিশ্রমিক ও সওয়াব ৯. মর্যাদা ১০. আল্লাহর দীনকে অনুধাবন। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি তার চিন্তার পরিপক্কতা থেকে লাভ করে। ধন্য হোক সেই ব্যক্তি যে সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে চলে।
আর চারিত্রিক পবিত্রতা থেকে যা যা উৎসারিত হয় সেগুলো হল : ১. সন্তুষ্টি, ২. প্রশান্তি৩. উপকার লাভ, ৪. শান্তি, ৫. যাচাই (সতর্ক অনুসন্ধান), ৬. বিনয়, ৭. (আল্লাহর) স্মরণ, ৮, চিন্তা-গবেষণা, ৯, বদান্যতা, ১০. উদারতা।
এগুলো বিবেকবান ব্যক্তির চারিত্রিক পবিত্রতা থেকে উৎসারিত হয় আর সে আল্লাহর প্রতি ও নিজের ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে।
আর আত্মসংযম থেকে যা যা উৎসারিত হয় সেগুলো হল : ১. কল্যাণ চিন্তা, ২. বিনয়, ৩. সংযম ৪. তওবা, ৫. বোধশক্তি, ৬. শিষ্টাচার, ৭. সদাচার ৮. বন্ধুত্ব, ৯. কল্যাণকর এবং ১০. সুআচার-ব্যবহার। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি তার সম্ভ্রম থেকে লাভ করে। ধন্য সেই ব্যক্তি যার প্রভু তাকে আত্মসংযমের বৈশিষ্ট্য দিয়ে সম্মানিত করেন।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলছিলেন, আর লজ্জা থেকে উৎসারিত হয় : ১. নমনীয়তা, ২. দয়াশীলতা, ৩ ও ৪. প্রকাশ্যে এবং গোপনে আল্লাহর পাহারার প্রতি মনোযোগ, ৫. (দৈহিক ও মানসিক) সুস্থতা, ৬, মন্দ থেকে দূরে থাকা, ৭. সমৃদ্ধি, ৮. দানশীলতা, ৯. বিজয় এবং ১০. মানুষের মাঝে সুনামের সাথে স্মরণ। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি তার লজ্জা থেকে অর্জন করে। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নসিহত গ্রহণ করে এবং তাঁর অপমানকে ভয় করে।
আর ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে উৎসারিত হয় : ১. দয়া, ২. পরিণামদর্শিতা, ৩. আমানত রক্ষা, ৪. খেয়ানত বর্জন, ৫. সত্যবাদিতা, ৬. লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা, ৭. সম্পদের পরিশুদ্ধি, ৮. শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি, ৯. অসঙ্গত কাজ থেকে নিষেধ, ১০. বোকামি বর্জন। বিবেকবানরা এসব বিষয় ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে পেয়ে থাকেন। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্তের অধিকারী হয় এবং যার মধ্যে লঘুচিত্ততা আর মূর্খতা থাকে না এবং যে ক্ষমাশীল হয় ও মার্জনা করে।
সূত্রঃ তেহরান রেডিও

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন