সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ৪৯-৫২

সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ৪৯-৫২

সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ৪৯-৫২


সূরা বনী ইসরাইলের ৪৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَقَالُوا أَئِذَا كُنَّا عِظَامًا وَرُفَاتًا أَئِنَّا لَمَبْعُوثُونَ خَلْقًا جَدِيدًا (49)
“তারা বললোঃ আমরা যখন শুধুমাত্র হাড় ও মাটি হয়ে যাব তখন কি আমাদের আবার নতুন সৃষ্টির মতো করে উঠানো হবে?” (১৭:৪৯)

আগের পর্বগুলোতে নবী কারিম (সা.) এবং তাঁর রেসালাত সম্পর্কে বিরোধীদের অযৌক্তিক কথাবার্তাগুলোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেইসব অবমাননার মোকাবেলায় নবীজীর মর্যাদা রক্ষার্থে বলেছেনঃ তারা নাফরমানি আর একগুঁয়েমির কবলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই তাদের চোখ সত্যকে দেখতে পায় না এবং তাদের কান সত্যের বাণী শুনতে পায় না। এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ তারা কেবল নবুয়্যত কিংবা রেসালাতের ব্যাপারেই নয় বরং কিয়ামত, পুনরুত্থান সম্পর্কেও বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে সন্দেহ ও বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়, অথচ পুনরুত্থান দিবস কিংবা কিয়ামতকে অস্বীকার করা এবং তা সংঘটিত হবার ব্যাপারে কোনোরকম সন্দেহ করার মতো কোনো যুক্তি প্রমাণ নেই। কেবলল এ আয়াতেই নয় বরং কুরআনে কারিমের অন্যান্য আয়াতেও কিয়ামত বা পুনরুত্থান দিবস অস্বীকারকারীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রমাণপঞ্জী দেখানো সম্ভব হয়নি। যেটুকু তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তা শুধুমাত্র অসম্ভাব্যতা, কিছু প্রশ্ন আর বিস্ময় ছাড়া আর কিছু নয়।

এ আয়াত থেকে আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় দিকগুলো হলোঃ
এক. নবী-রাসূলগণের ঐশীজ্ঞানপূর্ণ এবং যৌক্তিক বক্তব্যের মোকাবেলায় বিরোধীপক্ষও সবসময়ই সুপরিকল্পিত কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করে মানুষের ঈমান ও আকিদা দুর্বল করার চেষ্টায় থাকে।
দুই. ঐশী ধর্মগুলোর বিরোধিতাকারীরা মানুষের জীবনকে বস্তুতান্ত্রিক ও নশ্বর এই পৃথিবীতেই সীমিত বলে মনে করে, মানুষের অনন্ত জীবনের অস্তিত্বের বিষয়টি উপলব্ধি করতে তারা অক্ষম।

এ সূরার ৫০ এবং ৫১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
قُلْ كُونُوا حِجَارَةً أَوْ حَدِيدًا (50) أَوْ خَلْقًا مِمَّا يَكْبُرُ فِي صُدُورِكُمْ فَسَيَقُولُونَ مَنْ يُعِيدُنَا قُلِ الَّذِي فَطَرَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ فَسَيُنْغِضُونَ إِلَيْكَ رُءُوسَهُمْ وَيَقُولُونَ مَتَى هُوَ قُلْ عَسَى أَنْ يَكُونَ قَرِيبًا (51)
“এদেরকে বলে দাও, তোমরা পাথর বা লোহাই হয়ে যাও। (১৭:৫০)
“অথবা তার চেয়েও বেশী কঠিন কোনো জিনিস, যার অবস্থান তোমাদের ধারণায় জীবনীশক্তি লাভ করার বহুদূরে (তবুও তোমাদের ওঠানো আল্লাহর পক্ষে একেবারেই সম্ভব এবং তা করা হবে)৷ তারা নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবে, কে আমাদের আবার জীবনের দিকে ফিরিয়ে আনবে? জবাবে বল, তিনিই, যিনি প্রথমবার তোমাদের সৃষ্টি করেছেন৷ তারা মাথা নেড়ে নেড়ে (বিস্ময় ও অবিশ্বাসপূর্ণভাবে) জিজ্ঞেস করবে, ‘আচ্ছা, তাহলে এটা কবে হবে?’ তুমি বলে দাও, অবাক হবার কিছুই নেই, সে সময়টা হয়তো নিকটেই এসে গেছে।” (১৭:৫১)

আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ তারা যে বলেঃ ‘যে মানুষ মরে পঁচে গলে মাটি হয়ে গেছে, সেই মানুষ কীভাবে আবার জীবিত হবে’-তারা কি ভুলে গেছে যে এই মানুষই আগে মাটি ছিল, আল্লাহই তাদের সৃষ্টি করেছেন? তারা কি আল্লাহর শক্তিমত্তায় সন্দেহ করে এ ধরনের প্রশ্ন করছে? হাড়-মাংস মাটিতে পরিণত হয়ে যাওয়াতো খুবই স্বাভাবিক এবং সহজ একটা ব্যাপার, যদি লোহা কিংবা পাথরেও পরিণত হও তাহলেও আল্লাহ তোমাদের দেহের ওপর জীবনের পোশাক পরাতে সক্ষম। উল্লেখ্য যে, লোহা এবং পাথর তুলনামূলকভাবে শক্ত এবং জীবন থেকে তাদের অবস্থান অনেক দূরে। এই ব্যাখ্যা প্রমাণ করছে পৃথিবীর সকল সৃষ্টিই জীবিত বা প্রাণময় অস্তিত্বে পরিণত হতে সক্ষম। চাই তা মাটির মতো জীবনের নিকটবর্তী অবস্থানেই থাকুক কিংবা পাথর বা লোহার মতো দূরবর্তী অবস্থানেই থাকুক।

পুনরুত্থান দিবস অস্বীকারকারীদের আরেকটি প্রশ্ন হলোঃ কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? কুরআন এই আয়াতসহ আরো অনেক আয়াতে বর্ণনা করেছে যে এ বিষয়টি অর্থাৎ কিয়ামত অনুষ্ঠানের সময়টি সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। কিন্তু কিয়ামত সংঘটিত হবার সময় সম্পর্কে না জানার মানে তো এ নয় যে কিয়ামত বলে কিছু নেই। অনেকটা মৃত্যুর মতো। মানুষ কি জানে সে কখন মারা যাবে? মৃত্যুর সময়টা জানা না থাকা সত্ত্বেও এই ব্যাপারে তো কারো কোনো সন্দেহ নিশ্চয়ই নেই যে, একদিন সে মারা যাবেই!

এ দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হলোঃ
এক. মৃত্যুর পর মাটি কেন, পাথর কিংবা লোহায় পরিণত হলেও পুনরায় তোমাদের সৃষ্টি করা, পুনরুজ্জীবিত করা আল্লাহর জন্যে কোনো কঠিন কাজই নয়।
দুই. মুমিনদের যুক্তি-প্রমাণের বিপরীতে বিরোধীদের কৌশল অনেকটা বিদ্রুপাত্মক, কেননা তাদের দাবিগুলো প্রতিষ্ঠা করা বা প্রমাণ করার পক্ষে কোনো যুক্তি নেই।

সূরা বনী ইসরাইলের ৫২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
يَوْمَ يَدْعُوكُمْ فَتَسْتَجِيبُونَ بِحَمْدِهِ وَتَظُنُّونَ إِنْ لَبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا (52)
“যেদিন তিনি তোমাদের ডাকবেন, তোমরা তাঁর প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে করতে তাঁর ডাকের জবাবে বের হয়ে আসবে এবং তখন তোমাদের এ ধারণা হবে যে, তোমরা অল্প কিছুক্ষণ মাত্র এ অবস্থায় কাটিয়েছ।” (১৭:৫২)

এ আয়াতটিতে কাফের-মুশরিকদের জবাবের ধারাবাহিকতায় বলা হয়েছেঃ তোমরা যে দিনটিকে অস্বীকার করছো, সে দিনটি খুব দ্রুতই আসবে এবং তোমাদের সবাইকে পুনরায় জীবিত করে উঠানো হবে। তোমাদেরকে আরেকবার জীবন দেওয়ার কারণে তোমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। যে দিনটিকে তোমরা অসম্ভব বলে মনে করেছিলে, তোমরা দেখতে পাবে সেদিনটি দূরে ছিল না এবং মৃত্যু ও কিয়ামতের মধ্যে দূরত্বও খুব বেশি ছিল না। সেদিন মানুষ বুঝতে পারবে পৃথিবী এবং বারযাখ যুগের জীবন যতোই দীর্ঘ হোক না কেন অনন্ত জীবনের কাছে তা একেবারেই ক্ষণিকের বৈ ত নয়।

এ আয়াত থেকে আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় হলোঃ
এক. কিয়ামত হচ্ছে আদম (আ.) থেকে শুরু করে তাঁর সর্বশেষ সন্তান পর্যন্ত সকল মানুষকে একত্রে তলব করার দিন।
দুই. পরবর্তী জীবনে মানুষ যখন প্রবেশ করবে তখন তাদের কাছে মনে হবে দুনিয়ার জীবন এবং তার পরবর্তী বারযাখি জীবনের মেয়াদ খুবই ছোট্ট।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন