কে ওহাবীদের গ্রান্ড মুফতি?

ওয়াহাবীদের গ্রান্ড মুফতি ও সৌদি আরবের ফতওয়া বিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল লাতিফ আলুশ শেইখ ইমাম হুসাইন (আ.) ও বিশ্বের শিয়াদের ঘোরশত্রু এবং সর্বক্ষেত্রে তার শত্রুতার বিষয়টি ফুট উঠেছে। তিনি ওয়াহাবি চিন্তাধারার জনক আব

কে ওহাবীদের গ্রান্ড মুফতি?

ওয়াহাবীদের গ্রান্ড মুফতি ও সৌদি আরবের ফতওয়া বিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল লাতিফ আলুশ শেইখ ইমাম হুসাইন (আ.) ও বিশ্বের শিয়াদের ঘোরশত্রু এবং সর্বক্ষেত্রে তার শত্রুতার বিষয়টি ফুট উঠেছে। তিনি ওয়াহাবি চিন্তাধারার জনক আব্দুল ওয়াহাবের বংশধর এবং বিন বাযের পর গ্রান্ড মুফতির পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। অন্য সকল বৈশিষ্ট্যের মাঝে তার দৃষ্টিহীনতার বিষয়টি সবার আগে অপরের নজরকাড়ে। অন্তর্দৃষ্টিহীন এ ব্যক্তির বাহ্যিক এক চোখও অন্ধ।
শৈশব
আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল লাতিফ আলুশ শেইখ ১৩৬২ হিজরীর ৩রা জিলহজ্ব মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩৭০ হিজরীতে মাত্র ৮ বছর বয়সে পিতৃহারা হন। জন্মসূত্রেই তিনি ছিলেন দৃষ্টিশক্তি দূর্বলতার শিকার এবং ১৩৮১ হিজরীতে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান।
পড়াশুনা
আহমাদ বিন সানান মসজিদে পবিত্র কুরআন শিক্ষা শুরু করেন আলুশ শেইখ এবং বলা হয়েছে যে, ১২ বছর বয়সে পবিত্র কুরআনের হেফজ সম্পন্ন করেন।
তিনি তার শিক্ষাজীবন আল-হালক অঞ্চলের কয়েকজনের আলেমের নিকট শুরু করেন এবং ১৩৮৩-৮৪ শিক্ষাবর্ষে ফিকাহ বিষয়ক কলেজ হতে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
যে সকল পদে দায়িত্ব পালন করেছেন
তিনি ১৩৯২ সাল পর্যন্ত ‘ইমামুদ দাওয়াহ আল-ইলমি’তে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৩৯২ সালে রিয়াদের ফিকাহ বিষয়ক কলেজের শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তিনি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য রিয়াদে স্থানান্তর এবং রিয়াদের মুহাম্মাদ বিন সাউদ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পর ১৪০৭ হিজরী হতে সৌদি আরবের সিনিয়র ওয়াহাবী ওলামা পরিষদের সদস্য পদলাভ করেন।
১৪১২ হিজরীতে সৌদি আরবের বাদশা’র সরাসরি নির্দেশে ধর্মীয় পড়াশুনা এবং ফতওয়া প্রদান বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে নিয়োজিত হন।
১৩১৭ হিজরীতে তিনি ভারপ্রাপ্ত গ্রান্ড মুফতির দায়িত্ব পান এবং ১৪২০ হিজরীর ২৯শে মহররম তত্কালীন গ্রান্ড মুফতি শেইখ আব্দুল আযিয বিন বাযের মৃত্যুর পর সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি এবং সৌদি আরবের সিনিয়র ওলামা পরিষদের প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন।
তার কর্তৃক প্রদত্ত হাস্যকর ও অবাক করা ফতওয়ার কয়েকটি নমুনা :
• ঈদে মীলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) পালন করা হারাম!
• ইয়াযিদের বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইন (আ.) এর বিপ্লব ছিল একটি হারাম কর্ম!
• ইয়েমেনীদেরকে অত্যাচারী ইরানের সহযোগিতা হারাম!
• লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী’র জন্য দোয়া করা এবং তাদের জন্য সাহায্য প্রেরণ করা হারাম!
• সকল গীর্জা ভেঙ্গে দাও!
• আশুরার দিন তার পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠান!!!!
• সৌদি আরবের জাতীয় উত্সব হালাল!
• মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যক্তিত্ব রক্ষা এবং তাঁর অবমাননার প্রতিবাদে মিছিল করা হারাম!
• আমেরিকার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়া হারাম!
• গাজা ও ফিলিস্তিনের জনগণের সমর্থনে মিছিল করা নিষেধ!
• নারীদের কর্তৃক নারীদের অন্তর্বাস বিক্রয় করা হারাম!
• সকল ইসলামি নিদর্শন ভেঙ্গে দাও এবং প্রাচীন নিদর্শন রক্ষা কর!
• শিয়াদের প্রতি হামলা!
• ইসলামি জাগরণ এবং স্বৈরাশাসকদেরকে বিতাড়িত করা হারাম!
• তুরস্কে নির্মিত টিভি-সিরিয়ালসমূহ দেখা হারাম!
• গোল করার পর ফুটবলিস্টরা যে সিজদা করেন তা মাকরুহ!
• ইমাম যামানের অস্তিত্ব মিথ্যা!
• ইরানীরা মাজুস ও অগ্নিউপাসক!
• বাহরাইনের জনগণের পক্ষ নেয়া হারাম!
• সিরিয়া সরকারের উপর হামলা চালানো ওয়াজিব!
• দশ বছরের কিশোরীদেরকে তাদের সম্মতি ছাড়া বিবাহ দানে বাধ্য করার বৈধতা! ইত্যাদি...
* পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) পালন করা হারাম!
তিনি সৌদি দৈনিক ‘আল-মাদিনাহ’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন : পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নাবী (স.) পালন করা একটি ভিত্তিহীন বিদআত।
তিনি বলেন : মহানবী (স.) এর সুন্নতে এবং খোলাফায়ে রাশেদীন ও হেদায়েত দানকারী ইমামগণের জীবনচরিতে জন্মদিনে আনন্দ উত্সব পালনের কোন নজীর আমরা পাই না, এরই ভিত্তিতে মহানবী (স.) এর জন্মদিন তথা ঈদে মীলাদুন্নাবী পালন করা হারাম।
* ইয়াযিদের বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম) এর বিপ্লব ছিল একটি হারাম কর্ম!
ইরাকে অবস্থিত আহলে বাইত (আলাইহিমুস সালাম) এর সদস্যদের মাজার ভেঙ্গে দেওয়ার ফতওয়া প্রদানকারী আলেমদের অন্যতম সৌদি আরবের ওয়াহাবী এ মুফতি তার গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যসমূহের কথা এভাবে উল্লেখ করেন, ইয়াযিদের কাজের সমর্থনে যুক্তি পেশ করা, আশুরার দিন রোজা রাখা এবং বিয়েসহ অন্যান্য আনন্দ-উত্সব পালন করা ইত্যাদি... তার গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য বলে তিনি জ্ঞান করেন। আর এ বিষয়টি বর্ণনা করতে তিনি কোন সুযোগকেই হাতছাড়া করেন না। আমার ভালভাবে মনে আছে যে, ২০১১ সালের শাবান মাসে উমরাহ’র উদ্দেশ্যে মক্কায় গিয়েছিলাম, ঐ সময় তিনি মসজিদুল হারামে বসেছিলেন এবং উমরাহ করতে আসা হাজীদের উদ্দেশ্যে এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন।
এছাড়া তিনি সৌদি আরবের স্যাটালাইট চ্যানেল আল-মাজদ হতে সরাসরি প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে একজন নারী দর্শকের ইয়াযিদ ও ইমাম হুসাইন [আ.] এর সংগ্রাম সম্পর্কে করা এক প্রশ্নের জবাব তিনি এভাবে দেন : ‘এ ধরনের বিষয়ের ওপর আলোচনার যুগ পার হয়ে গেছে। তারা ছিলেন এমন একটি দল যারা গত হয়েছেন। যদি তারা ভাল বা মন্দ করে থাকেন তবে তারা নিজেদের জন্য করেছেন এবং আপনারা যা কিছু করছেন তা নিজেদের জন্যই করছেন, তাদের কৃতকর্মের জন্য আপনাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই।
ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়ার বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) ছিল শরিয়ত সম্মত বাইয়াত; যা তার পিতা মুয়াবিয়ার যুগে জনগণ হতে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং জনগণও বাইয়াত করার মাধ্যমে এ বিষয়ের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু মুয়াবিয়া দুনিয়া হতে বিদায় নেওয়ার পর হাসান ও হুসাইন বিন আলী [আলাইহিমাস সালাম] এবং ইবনে যুবাইর তার হাতে বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানায়।
বাইয়াত করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে হুসাইন বিন আলী [আলাইহিস সালাম] ও ইবনে যুবাইর ভুলের শিকার হয়েছেন। কেননা ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত ছিল শরিয়ত সম্মত। আর বাইয়াত তার পিতা মুয়াবিয়ার যুগে জনসম্মুখে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু মহান আল্লাহ যা কিছু নির্দিষ্ট করেন সে বিষয়ে তিনি প্রজ্ঞাময় ও জ্ঞানী, আর ঐ সময় জীবন-যাপনকারী জনগণও মহান আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সে বিষয়ের ওপরই গত হয়েছে।
আপনাদেরকে আল্লাহর দোহাই দেই! এ বিষয়টি আমার উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করাকে আমি পছন্দ করি না, এ বিষয়গুলো হচ্ছে এমন যা অতিক্রান্ত হয়েছে। ইতিহাসও এ বিষয়ে বিভিন্ন ভাবে ব্যখ্যা দিয়েছে। কিন্তু যাই হোক না কেন এ আলোচনার সময় পার হয়েছে এবং শেষ হয়ে গেছে...। সহস্রাধিক বছর পূর্বে ইয়াযিদ এবং হুসাইনের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু আমার আকিদামতে ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়ার হাতে বাইয়াত ছিল শরিয়ত মোতাবেক! এবং হুসাইনকে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে মদিনা হতে ইরাকের দিকে না যান, পাশাপাশি তাকে বাইয়াতেরও উপদেশ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি গ্রহণ করেননি।
ইবনে আব্বাস, ইবনে উমার ও ফারাযদাকসহ আরো অনেক সাহাবী তাকে ইরাকে যেতে নিষেধ করেছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন : ইরাকে যাওয়া তার জন্য মঙ্গলকর হবে না। কিন্তু হুসাইন এ সকল উপদেশ উপেক্ষা করেন... আর যা কিছু মহান আল্লাহ লিখে রেখেছিলেন তাই ঘটেছে...।
কিন্তু এরপরও আমরা হুসাইনের জন্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনা করি এবং তার জন্য ক্ষমার দাবী জানাই। মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়াদি বিশেষ প্রজ্ঞার অধিকারী যা সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ...।
এ সকল বিষয় উল্লেখ করার উপকারীতা কি? হুসাইন যে ভুল করেছে তার জন্য সে নিজেই দায়ী। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আকিদা হচ্ছে, যার হাতে বাইয়াত করা হয়েছে এবং জনগণ যার চতুর্পাশে সমবেত হয়েছে তার নির্দেশ পালন করা ওয়াজিব!!! এবং তার অবাধ্য হওয়া ও তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা হারাম!!! আর এ কারণে ইয়াযিদের বিরুদ্ধে হুসাইনের বিপ্লব ছিল একটি হারাম কর্ম!!!...
আমরা বলি : ইয়াযিদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিষয়ে হুসাইন ভুল করেছে, এ কাজ না করাটাই তার জন্য মঙ্গলকর ছিল এবং মদিনায় থেকে যাওয়াটাই ছিল তার জন্য মঙ্গলকর ও শ্রেয়। তাকে যতই বলা হয়েছিল যে, ইরাকের জনগণ তোমার পক্ষপাতী ও সমর্থক নয়, তিনি কারো কথা শোনেননি...।
আর সত্য বিষয়টি হল, ইরাক, সিরিয়া, মিশর, হেজাজ ও ইয়েমেনের জনগণ ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার সাথে তার পিতার জীবদ্দশাতেই বাইয়াত করেছিল এবং তার নেতৃত্বকে ও ইমামতকে গ্রহণ করেছিল। এ কারণে তার এবং তার খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ছিল অবৈধ। এটাই হচ্ছে শেষ, এরচেয়ে বেশী আর কিছু বলতে চাই না এবং এর চেয়ে অধিক কিছুর উপর বিশ্বাসও রাখি না’।
মজার বিষয় হল, যে ভিডিও ক্লিপটিতে তিনি এ সব কথা বলেছেন, হযরত যায়নাব (সালামুল্লাহি আলাইহা) এর মাজারে হামলার ক্ষেত্রে ইদানিং ঐ ক্লিপটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
* ইয়েমেনীদের অত্যাচারী ইরান কর্তৃক সহযোগিত করা হারাম!
২০০৯ সালে ইয়েমেনের গণবিপ্লবের ঘটনায় শেইখ আব্দুল আযিয আলুশ শেইখ সৌদি দৈনিক আল-ওয়াতানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে ইয়েমেনের যাইদী সম্প্রদায়ের অনুসারীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের বিষয়ে অভিযুক্ত করে এ ধরনের সহযোগিতাকে পাপ এবং অত্যাচার বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
এই সাক্ষাতকারেই আলুশ শেইখ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, সৌদি সেনাবাহিনী’র যাইদি সম্প্রদায়ের বিদ্রোহীদের মুখোমুখী হওয়ার বিষয়টি হচ্ছে হক ও বাতিলের মুখোমুখি হওয়ার ন্যায়!
* হিজবুল্লাহ’র জন্য দোয়া করা ও তাদের জন্য সাহায্য প্রেরণ করা হারাম!
আল-মুহিতের ভাষ্যমতে, ইসলামি দেশসমূহে ইহুদীদের ঢোকার সুব্যবস্থা (!) করে দেওয়ার বিষয়ে কিছুদিন পূর্বে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন আলুশ শেইখ।
আলুশ শেইখ ওয়াহাবীদের পদ্ধতির ভিত্তিতে –যারা নিজেদেরকে ছাড়া সকল মুসলমানকেই কাফের বলে জ্ঞান করে- রিয়াদের আলে সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন : যারা সেখানে ইসলামের শ্লোগান দেয়, ইসলাম তাদের হতে অসন্তুষ্ট!
তিনি বলেন : নিঃসন্দেহে যা কিছু লেবাননে ঘটছে তা বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। মানুষ এ ধরনের ঘটনার সাক্ষী হওয়ার আশা রাখে না। কিন্তু কি আর করার? এ ধরনের ঘটনার কথা শুনি এবং মানুষের অন্তরে অশুভ ভবিষ্যতের আশংকা দানা বাধে। কেননা যারা লেবাননে এ বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে তারা ইসলামি শ্লোগান প্রদান করে অথচ ইসলাম ধর্ম তাদের হতে অসন্তুষ্ট।
* সকল গীর্জা ভেঙ্গে দাও
২০১২ সালের মার্চ মাসে তিনি আরব্য উপদ্বীপের সকল গীর্জা ভেঙ্গে দেয়ার ফতওয়া প্রদান করেন।
* আশুরার শোকাবহ দিনে নিজ পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন!!!!
সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতির পুত্র উমার বিন আব্দুল আযিয আলুশ শেইখ ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদাতের দিনে তথা পবিত্র আশুরা দিবসে নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সৌদি আরবের অনেক ওয়াহাবী মুফতি এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ঘৃণিত ও অবমাননাকর এ কর্মে গ্রান্ড মুফতি এবং তার পুত্রকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
অবশ্য মহানবী (স.) এর পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের শত্রুতার নজীর এটাই প্রথম নয়, যেভাবে যেয়ারতে আশুরায় বর্ণিত হয়েছে
اِنَّ هذا یَوْمٌ تَبرَّکَتْ بِهِ بَنُو اُمَیَّةَ وَ ابْنُ آکِلَةِ الَآکبادِ اللَّعینُ ابْنُ اللَّعینِ عَلى لِسانِکَ وَ لِسانِ نَبِیِّکَ صَلَّى اللَّهُ عَلَیْهِ وَ آلِهِ
[হে আল্লাহ্] নিশ্চয় এ দিনটি হচ্ছে এমন, যাকে বনি উমাইয়া বরকতময় বলে জ্ঞান করেছে এবং (হযরত হামযাহ’র) কলিজা ভক্ষণকারী নারীর (হিন্দা) পুত্র (মুয়াবিয়া) হচ্ছে তোমার ভাষায় ও তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহির ভাষায় অভিশপ্ত এবং অভিশপ্ত এক পিতার সন্তান।
* সৌদি আরবের জাতীয় উত্সব পালন করা হালাল ও বৈধ!
আল-আলাম নিউজ চ্যানেলের ওয়েব সাইট : সৌদি আরবের সাবেক মুফতিগণ বিন বায ও বিন উসাইমিন এদেশের জাতীয় উত্সবকে হারাম ও বিদআত কর্ম বলে ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু দৈনিক উকায-এ প্রকাশিত এক ফতওয়াতে আলুশ শেইখ বলেছিলেন : এ দিনে আমাদের উচিত হল মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা, তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের বিষয়ে চিন্তা করা এবং নিরাপত্তার মত নেয়ামত দানের জন্য তার দরবারের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা।
দৈনিকটি আরো লিখেছে : শেইখ তার বক্তব্যে, মন্ত্রী পরিষদের সভায় ‘হারামাইন শারিফাইনের খাদেমে’র (সৌদি আরবের বাদশাহ আব্দুল্লাহ) বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন : আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, এ উত্সবে জনগণের মানবিক মূল্যবোধ, উত্তম নৈতিকতা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি ও উন্নতি এবং সাংস্কৃতি অঙ্গনে উন্নয়নের বিষয়ে কথা কথা বলা উচিত। পাশাপাশি উচিত হল দেশের শাসকগণ ও কর্তৃপক্ষের কথা শুনে নিজের স্বদেশ প্রেমের অনুভূতিকে ফুটিয়ে তোলা।
* মহানবী (স.) এর ব্যক্তিত্ব রক্ষায় মিছিল করা হারাম!
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি এর অবমাননার পর সারা বিশ্বে যখন সমালোচনা ও তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে তখন আলুশ শেইখ এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছিলেন : ‘ক্রোধ ও বিক্ষোভ ছাড়াই এ বিষয়টির সমাধান করা উচিত’।
সৌদি এ মুফতি আরো বলেন, মহানবী (স.) এর অবমাননায় নির্মিত চলচ্চিত্র প্রকাশে তাঁর এবং ইসলাম ধর্মের কোন ক্ষতি হয় না। অথচ মুসলমানদের বিক্ষোভে কিছু কিছু মুসলিম দেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশের দূতাবাসগুলোর ক্ষতিসাধন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন : নিরাপরাধ মানুষের উপর হামলা চালানো এবং তাদের সম্পদে অগ্নিসংযোগ করা ও বিনষ্ট করা উচিত নয়।

* যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়া হারাম!
যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদে ‘শেইখ আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ আলুশ শেইখ’ সৌদি আরবের স্যান্ডি ঝড়ের পর বলেছিলেন : প্রাকৃতিক এ দূর্যোগ হতে মুসলমানদের শিক্ষা নেয়া উচিত যে, সকলের বিরুদ্ধে দোয়া করা উচিত নয়, কেননা তাদের মাঝে মুসলমানরাও রয়েছে এবং এ দোয়া মুসলমানদের স্বার্থসিদ্ধ নয়।
* ফিলিস্তিন ও গাজার জনগণের সমর্থনে মিছিল করা নিষিদ্ধ!
শেইখ আব্দুল আযিয তার অপর এক উদ্ভট ফতওয়াতে, ফিলিস্তিন ও গাজার অবরুদ্ধ মুসলমানদের সমর্থন ও তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণায় মিছিলের পদক্ষেপকে একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ এবং বৃথা ও গোলযোগ সৃষ্টিকারী বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
* নারী কর্তৃক নারীদের অন্তর্বাস বিক্রয় করা হারাম!
সৌদি আরবের কর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে আলুশ শেইখ নারীদের বিশেষ পোশাক বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে নারীদের কাজ করার বিষয়ে অভিযোগ তোলেন।
তিনি তার আশ্চার্যজনক এ ফতওয়ার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন : নারীরা হচ্ছে আমাদের নিকট আমানত স্বরূপ, আর এ কারণেই তাদের জন্য নির্ধারিত কর্ম ছাড়া অন্য কোন কাজে তাদেরকে ব্যবহার করা যাবে না।
* সকল ইসলামি নিদর্শন ভেঙ্গে ফেল এবং প্রাচীন নিদর্শনগুলো রক্ষা কর!
আলুশ শেইখ চলতি বছরের শুরুর দিকে ঘোষণা করেছিলেন : যে সকল বস্তু! হারামাইন শারিফাইনের চতুর্পাশে রয়েছে সেগুলোকে ভেঙ্গে ফেলাতে কোন সমস্যা তো নেই-ই বরং হারামাইনের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ কাজ করা আবশ্যক।
তিনি বলেন : মসজিদুল হারামের আশেপাশের প্রাচীন (ইসলামী) নিদর্শন ভেঙ্গে দেয়া অন্যতম সত কাজ, সরকার যা করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং এটি আবশ্যক কর্মসমূহের অন্যতম।
অথচ সৌদি আরবের অন্যতম প্রখ্যাত মুফতি ‘আব্দুল্লাহ বিন সুলাইমান আল-মুনী’ মদিনা মুনাওয়ারার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত ‘মাদায়েন-এ সালেহ’ এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন নিদর্শন পরিদর্শনের সময় প্রাচীন নিদর্শনসমূহকে বিগত সভ্যতাসমূহের নিদর্শন এবং বর্তমান যুগের জনগণের জন্য শিক্ষা হিসেবে আখ্যায়িত করে এ নিদর্শন হতে শিক্ষা গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। কিন্তু আলুশ শেইখ কখনই এ ফতওয়ার বিরোধীতা করেননি বা এর নিন্দা জানাননি।
* শিয়াদের উপর হামলা!
তিনি মার্চ মাসে রিয়াদে অবস্থিত তুরকী বিন আব্দুল্লাহ্ মসজিদে প্রদত্ত জুমআর খোতবায় শিয়াদের বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য সকল মুসলিম উম্মাহ’র প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন : এ মাযহাব, মুসলমানদের আকিদাকে তাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে!
আব্দুল আযিয আলুশ শেইখের প্রতি আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী’র খোলা চিঠিঃ
গত বছর এপ্রিল মাসে আলুশ শেইখ কর্তৃক শিয়াদের ওপর বিভিন্ন ভাবে আক্রমণের পর আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী, আলুশ শেইখের বরাবর একটি খোলা চিঠিতে লিখেছিলেন : শিয়াদের বিরুদ্ধে আরোপিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অন্যায় অপবাদ এবং শিয়াদেরকে কাফের আখ্যায়িত করে আপনি মূলতঃ ইসলামের শত্রুদের –বিশেষতঃ আমেরিকা ও ইসরাইলের- সেবা করেছেন।
আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজীর ঐ চিঠিতে উল্লেখিত হয়েছিল : আপনি সম্প্রতি এক বক্তব্যে অত্যন্ত অবমাননাকর ও অশ্লীল ভাষায় –যা জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়- বিশ্বের শিয়াদেরকে ‘সাফাভিয়া মাজুস’ ও মুসলমানদের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং মুসলমানদেরকে শিয়াদের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।

ওয়াহাবী আলেমদের পক্ষ হতে অযৌক্তিক ও অন্যায় অপবাদ আরোপের ঘটনা আমরা এই প্রথম শুনছি না, যার মাধ্যমে বিভেদ ও বিচ্ছেদের বীজ বপন করা হচ্ছে এবং শত্রুরা হচ্ছে আনন্দিত। ইমাম মাহদী (আ.) এর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য আপনি করেছেন, পাশাপাশি শিয়াদের ইমাম যামানা (আ.) এর উপর বিশ্বাস রাখাকে আপনি অপছন্দনীয় কর্ম বলে আখ্যায়িত করেছেন, যা নতুন কিছু নয়। আর এ সকল বিষয় হতে স্পষ্ট হয় যে, ওয়াহাবী মুফতিরা যুক্তিযুক্ত আলোচনা হতে পলায়ন করে সর্বদা অবমাননার পথ বেছে নেয়।
তিনি ঐ চিঠিতে আরো লিখেছেন : এ পর্যায়ে কয়েকটি বিষয় আপনার উদ্দেশ্যে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই :
(১) আপনার মত এমন গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিত্ব থেকে এ ধরনের মন্তব্য সত্যিই আশ্চর্যের। কেন পবিত্র কুরআনের শিক্ষাকে ভুলে গেছেন? যে কুরআন মহান আল্লাহর পথের দিকে নম্রতার সাথে এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আহবানের শিক্ষা দেয়। এর পরিবর্তে আপনারা অবমাননা ও মিথ্যা অপবাদ আরোপের পথ বেছে নিয়েছেন, ইসলাম ধর্মে যে কর্ম মোটেও পছন্দনীয় নয়।
(২) দুঃখজনকভাবে আপনারা আপনাদের লেখা ইসলামি ইতিহাস ও হাদীস গ্রন্থ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য রাখেন না, কেননা আলীর ভক্ত ও অনুসারীদের জন্য ‘শিয়া’ নামটি স্বয়ং মহানবী (স.)ই রেখেছিলেন। আর ঐ যুগ থেকে এ বিষয়টি প্রচলিত ছিল, ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি দেয়াটা আপনার জন্য মন্দ হবে না। সাফাভি শাসনামলের শত শত বছর পূর্বে আলী (আ.) এর শিয়ারা মক্কা, মদিনা, ইরাক, সিরিয়া, মিশর ও ইরানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস কর তো। এমনকি অনেক অঞ্চলে তারা শাসনকার্যও পরিচালনা করেছে।

(৩) আপনি ওয়াহাবীদের গ্রান্ড মুফতি কিন্তু ভুলে গেছেন যে, যদি ইরান ও লেবাননের শিয়ারা না থাকতো তবে ইসরাইল ও আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের সকল অঞ্চলের উপর কর্তৃক লাভ করতো এবং এটা আমার জানা নেই যে, সে সময় আপনাদের মুফতিরা কি করতেন এবং কোথায় থাকতেন?
(৪) যখন ইসরাইল গাজায় অবরুদ্ধ মুসলমানদের –যাদের অধিকাংশই হচ্ছে সুন্নি মাযহাবের অনুসারী- উপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল ইরান ও অন্যান্য অঞ্চলের শিয়ারা অন্যদের চাইতে অধিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। যদি এ সহযোগিতা না থাকতো তবে ইসরাইল তার অপরাধকর্ম অব্যাহত রাখতো।
(৫) ওয়াহাবী আলেমদের উচিত হবে, ইসলামি জ্ঞানসমূহের জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে অধ্যয়ন করা, যাতে তারা বুঝতে পারে যে, এ সকল জ্ঞানের অধিকাংশেরই জনক হচ্ছে আহলে বাইত (আ.) এর শিয়ারা। আর তাদের ইলমি নিদর্শন ঐ যুগ হতে একমাত্র আপনাদের গ্রন্থাগার ব্যতীত বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা গ্রন্থাগারে মজুত রয়েছে!
(৬) এ সত্য বিষয়টি ভুলে যাবেন না যে, শিয়াদের বিরুদ্ধে আরোপিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অন্যায় অপবাদ এবং শিয়াদেরকে কাফের আখ্যায়িত করে আপনি মূলতঃ ইসলামের শত্রুদের –বিশেষতঃ আমেরিকা ও ইসরাইলের- সেবা করেছেন। কেননা এর প্রতিক্রিয়ায় শিয়াদের মনে ওয়াহাবী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা জমাট বাঁধছে, আর এ ফলাফল ইসলামের শত্রুদের কাঙ্খিত। তারা চায় মুসলিম সম্প্রদায়সমূহের মাঝে দ্বন্দ ও বিবাদ সৃষ্টি হোক এবং যাতে তারা অনায়াসে মধ্যপ্রাচ্যের অঢেল সম্পদকে লুট করে নিয়ে যেতে পারে।
(৭) এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না যে, কিছু কিছু ওয়াহাবী আলেম কর্তৃক বহুবার শিয়াদেরকে কাফের আখ্যায়িত করে ফতওয়া দেয়া হলেও মরিচা ধরা এ ফন্দি মুসলমানদের মনকে দূর্বল করার ক্ষেত্রে সামান্যতম প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়নি বরং দিনের পর দিন মুসলিম বিশ্বে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সাধন হচ্ছে।
ঐ চিঠির শেষাংশে লেখা হয়েছিল : বহুবার বলেছি যে, যদি আপনাদের ও আমাদের উপস্থিতিতে একটি সভার আয়োজন করা যেত তবে আমরা আপনাদের ভুলসমূহকে আপনাদের গ্রন্থ হতে প্রমাণ করতাম যাতে এর চেয়ে বেশী ইসলামি ঐক্যের ওপর আঘাত না হানেন। কারণ এ আঘাত ইসলামের শত্রুদের আনন্দের কারণ হয়।
আসুন, অপবাদ আরোপ, অবমাননা এবং কাফের আখ্যায়িত করার মত বুড়িয়ে যাওয়া পন্থাকে ত্যাগ করে পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেই এবং ইসলাম ও মুসলমানদের উন্নয়নের চিন্তা করি।
* ইসলামি জাগরণ ও স্বৈরাশাসকদেরকে বিতাড়িত করা হারাম!
স্বৈরাচারী সরকারসমূহের বিরুদ্ধে তৈরী হওয়া বিভিন্ন মুভমেন্টের সমালোচনা করে সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি এ ঘটনাকে ‘ফেতনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার-ই এ মন্তব্য মুসলিম বিশ্বে বিভেদের কারণ হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি জাগরণের কর্ণধর মুভমেন্টসমূহকে লোক দেখানো বলে আখ্যায়িত করে আলুশ শেইখ বলেছিলেন : গণআন্দোলনসমুহ সমাজের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারে... যে ঘটনা মুসলিম বিশ্বে ঘটছে তা হচ্ছে এমন ফেতনা ও দাঙ্গা যার কারণে মুসলিম বিশ্বের মাঝে ফাটল ধরিছে।
আলুশ শেইখ ইতিপূর্বে রাজধানী রিয়াদের ‘তুরকী বিন আব্দুল্লাহ’ জামে মসজিদে প্রদত্ত খোতবাতে বলেছিলেন : যা কিছু বর্তমানে আরব দেশসমূহে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা গোলযোগ ও রক্তপাত ব্যতীত আর কিছুই নয় এবং এর ফলাফল হচ্ছে পথভ্রষ্টতা ও ফেতনা... আর এ গোলযোগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক সংশোধনের জন্য নয় বরং মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্য বিনষ্ট ও এর মাঝে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে করা হচ্ছে।
* নগদ অর্থ ফেতরা দান করা হারাম!
ফতওয়া প্রদান বিষয়ক স্থায়ী কমিটির প্রধান আলুশ শেইখ ফতওয়া দিয়েছিলেন, ফেতরা হিসেবে নগদ অর্থ প্রদান করা জায়েয নয়; কেননা মহানবী মুহাম্মাদ মুস্তাফা (স.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহ হতে স্পষ্ট হয় যে, তিনি আমাদেরকে খাদ্য -যেমন : চাল ও কিসমিস ইত্যাদি- হতে ফেতরা প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, আমরা দেখতে পাই যে, মহানবী (স.) এর যুগে কখনই ফেতরা হিসেবে নগদ অর্থ প্রদান করা হত না। আর এ কারণেই বলা যেতে পারে যে, ফেতরার ক্ষেত্রে নগদ অর্থ প্রদান করা আল্লাহর রাসূল (স.) এর সুন্নত বিরোধী এবং বিদআত হিসেবে পরিগণিত। প্রত্যেকটি মুসলমানের উচিত আল্লাহর শরিয়তের আনুগত্য করা এবং এর বিরোধী কাজ করা বিদআত হিসেবে পরিগণিত।
আলুশ শেইখ আরো বলেন : ভুলে গেলে চলবে না যে, ঠিক ঈদের নামাযের পূর্বে যদি ফেতরা প্রদান করা হয় সেটাই উত্তম। কিন্তু যদি কেউ এক বা দু’দিন আগেও দেয় তবে তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি ঈদের নামাযের পরে প্রদান করা হয় তবে তা ফেতরা হিসেবে গণ্য হয় না বরং ‘সদকা’য় রূপান্তরিত হয়। অতএব, নির্ধারিত সময়ে ফেতরা দিতে হবে।
* গোল করার পর ফুটবলিস্টদের করা সিজদা মাকরুহ!
কিছুদিন পূর্বে আল-মাজদ টিভি চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানে আলুশ শেইখের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় যে, খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের সিজদা করার হুকুম কি?
আলুশ শেইখ বলেছিলেন : যদি সিজদা সাধারণ মুসলমানদের জন্য কল্যাণকর হয় তবে তা জায়েজ। কেননা আল্লাহর রাসূল (স.) কে যখন ইসলামের বিজয়ের বিষয়ে কোন সুসংবাদ দেওয়া হত তখন তিনি আল্লাহর জন্য সিজদা করতেন। কেননা তা ছিল সকল মুসলমানদের জন্য কল্যাণকর...।
এরপর আলুশ শেইখ নিম্নোক্ত যুক্তি উল্লেখ করে খেলোয়াড়দেরকে সিজদা করার বিষয়ে নিষেধ করেন :
(১) খেলোয়াড়রা শরীর দেখা যায় এমন পোশাক পরে থাকে এবং আল্লাহ্ এমন কাজ করতে নিষেধ করেছেন।
(২) কখনও মুসলমানদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে তাদের ধর্মীয় ভাইয়েরা (মুসলমানরা), অর্থাত এখানে ব্যক্তিগত বা সাধারণ মুসলমানদের জন্য কোন কল্যাণ নিহিত নেই।
সর্বশেষে আলুশ শেইখের ফতওয়া ছিল এরূপ : ‘খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের সিজদা করা হচ্ছে মাকরুহ”!
সূত্রসমূহ
(আরবি, ফার্সি, ইংরেজী)
1. http://themuslim500.com/profile/sheikh-abdul-aziz-abdullah-sheikh
2. http://www.sohari.com/nawader_v/fatawe/almufti.html
3. http://mufti.af.org.sa/
4. http://ar.islamway.net/scholar/274
5. http://www.vahabiat.porsemani.ir
6. http://fa.alalam.ir/news/373404
7. http://www.khanehkheshti.com//
8. http://www.cbn.com/cbnnews/world/2012/March/Mufti-All-Arabian-Peninsula-...
9. http://www.sibtayn.com/
10. http://islam-press.net//

সূত্রঃ বার্তা সংস্থা আবনা

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন