ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের পরের আশ্চর্যজনক ঘটনাবলি

ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের পরের আশ্চর্যজনক ঘটনাবলি

ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের পরের আশ্চর্যজনক ঘটনাবলি

হুসাইন, আশুরা, তারিখে মাদীনা, ইমাম হুসাইন, সূর্যগ্রহণ, ইবনে যিয়াদ, শিয়া
শিয়া আকিদা মতে ইমাম নির্বাচনের দ্বায়িত্ব হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে খোদা এবং তার রাসুল (সা.) এর অধিনে এবং জনগণের এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার নেই, যেমনভাবে রাসুল নির্বাচন শুধুমাত্র খোদার অধিনে রয়েছে। কোরআন মজিদে অসংখ্য আয়াত রয়েছে যার মাধ্যমে উক্ত বিষয়টি প্রমাণিত হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা হজরত ইব্রাহিম (আ.) সম্পর্কে বলেছেনঃ
إِنِّي جاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِماما
আমি তোমাকে মানবজাতীর নেতা করবো। (বাকারা ১২৪)
وَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَ يَعْقُوبَ وَ كلاًُّ جَعَلْنَا نَبِيًّا
তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম। (মারিয়াম ৪৯)
উক্ত আয়াতগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কে নবী হিসেবে নির্বাচনের ক্ষমতা ছিল খোদার হাতে। আমার কোরআনের কোন একটি আয়াত দেখতে পাব না যেখানে কোন নবীকে সাধারণ মানুষ নির্বাচন করেছে।
শিয়াদের আকিদা হচ্ছে যে যেমনভাবে নবীদেরকে খোদা নির্বাচন করেছেন অনুরূপভাবে ইমামদেরকেও খোদা নির্বাচন করেছেন এবং যেমনভাবে খোদার রাসুলগণ তাদের নবুওয়াত এবং রেসালাতকে প্রমাণের জন্য কারামাত বা মজেযা দেখিয়েছেন অনুরূপভাবে ইমামগনও নিজেদের ইমামতকে প্রমানিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে কারামাত দেখিয়েছেন এবং লোকজনও তাদের এই কারামাত দেখে তাদের ইমামতকে মেনে নিয়েছিল।
শহীদদের সর্দার ইমাম হুসাইন (আ.) তিনি তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও কারামাত দেখিয়েছিলেন। কেননা তিনি ছিলেন প্রকৃত ইমাম এবং ইমাম হাসান (আ.) এর পরে নিযুক্ত ইমাম। মহান আল্লাহ তায়ালা কখনই এমন এক ব্যাক্তির হাতে ইমামতকে দান করবেন না যে, যার কারণে মানুষ পথভ্রষ্ট হতে পারে। আমরা এক্ষেত্রে ইমাম হুসাইন (আ.) এর কিছু কারামতের কথা উল্লেখ করবো যা তার শাহাদতের পরে ঘটেছিল। তার প্রত্যেকটি কেরামত যা সাধারণ মানুষের মন মানসিকতার বিকাশ ঘটায় এবং যারা হেদায়াত পিপাসু তারা অবশ্যই তা থেকে হেদায়াত প্রাপ্ত হন। তবে শর্ত হচ্ছে জাহেলী যুগের গোড়ামি মানসিকতা দূরে রেখে অগ্রসর হতে হবে এবং অন্তর চক্ষুর মাধ্যমে তা অনুধাবন করতে হবে। নিন্মে কিছু ঘটনা যা ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের পরে ঘটেছিল তা উল্লেখ করা হলোঃ
১- আকাশের তারার একে অপরের সাথে সংঘর্ষ
ঈসা বিন হারেস কেনদী তিনি বলেছেনঃ যখন ইমাম হুসাইন (আ.) কে শহীদ করা হয় তখন থেকে ৭ দিন পর্যন্ত যখন আসরের নামাজ পড়তাম তখনই দেখতাম যে, ঘরের যে দেয়ালে সূর্যের আলো পড়তো মনে হতো যেন লাল রংঙ্গের চাদর মেলে ধরা হয়েছে এবং আমি রাতে আরো দেখতে পেতাম যে আকাশের তারারা এক অপরের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে। (তাহযিবুল কামাল, আল মুযি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৩২-৪৩৩, তারিখে ইসলাম, আয যাহবী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৫, তারিখে মাদীনাতু দামেস্ক, ইবনে আসাকের, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৭)
২- আকাশে রক্তিম আভার প্রকাশ
নাযরা নাযদিয়ে বলেছেনঃ যখন ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হন তখন আকাশ থেকে রক্ত বৃষ্টি হয় এবং সমস্ত জিনীষ রক্ত বৃষ্টির কারণে রক্তিমাভা ধারণ করে। (তারিখে মদীনা ওয়া দামেস্ক, ইবনে আসাকের, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৭-২২৮)
জাফর বিন সুলাইমান থেকে বর্ণিত, আমার খালা উম্মে সালেম তিনি বলেছেনঃ যখন ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হন তখন রক্তের ন্যায় বৃষ্টি আমাদের বাড়ি এবং দেয়ালের উপরে বর্ষিত হয় এবং আমি ‍শুনতে পাই যে, অনুরূপ বৃষ্টি খোরাসান, শাম এবং কুফাতেও বর্ষিত হয়। (তারিখে ইসলাম, আল যাহাবী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৬, তারিখে মদীনা ওয়া দামেস্ক, ইবনে আসাকের, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৮-২২৯)
৩- আকাশের ক্রন্দন
ইবনে শিরীন বলেছেনঃ ইয়াহিয়া বিন যাকারিয়া এবং হুসাইন বিন আলী ব্যাতিত কখনও আকাশ কারো জন্য ক্রন্দন করেনি। (তারিখে মদীনা ওয়া দামেস্ক, ইবনে আসাকের, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৫-২২৬)
৪- পৃথিবী অন্ধকারাছন্ন হয়ে যায়
খালাফ বিন খলিফা তার বাবার কাছ থেকে বর্ণনা করেছে তিনি বলেছেনঃ যখন ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হন আকাশ এত পরিমান কালো হয়ে যায় যে, যোহরের সময় আকাশের তারা যাচ্ছিল এবং আসরের সময় আকাশ থেকে লাল মাটি পড়ছিল। (তাহযিব আল তাহযিব, ইবনে হাজার, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৫, তারিখে মদীনা ওয়া দামেস্ক, ইবনে আসাকের খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৬)
আলী ইবনে মাসহার তার পূর্বপুরুষ থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেনঃ যখন ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হন তখন আমি যুবতি ছিলাম দেখলাম যে আকাশ ৭ দিন যাবত রক্ত জমাটের ন্যায় রূপলাভ করে।(তারিখে মদীনা ওয়া দামেস্ক, ইবনে আসাকের, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৬)
৫- আকাশে রক্তিমাভা ধারণ
আলী বিন মোহাম্মাদ মাদায়েনী আলী বিন মাদরাক থেকে এবং তিনি তার পূর্ব পুরুষ আসওয়াদ বিন কাইস থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেনঃ ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের পরে আকাশ প্রায় ছয় মাস রক্তিমাভা ধারণ করেছিল আমরা তা রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতাম। আলী বিন মোহাম্মাদ মাদায়েনী তাকে প্রশ্ন করে যে আসওয়াদের সাথে তোমার সম্পর্ক কি? সে বলে তিনি ছিলেন আমার মায়ের পূর্ব পুরুষ। খোদার শপথ তিনি ছিলেন একজন সত্যবাদি, আমানতদার এবং অতিথী পরায়ন ব্যাক্তি। (তাহযিবুল কামাল, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৩২, তারিখে ইসলাম, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৫, তারিখে মদীনা ওয়া দামেস্ক, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৭)
৬- দারুল আমারার দেয়ালের ক্রন্দন
যখন ইবনে যিয়াদের সামনে ইমাম হুসাইন (আ.) এরর মাথাকে রাখা হয় তখন দেখতে পাই যে দারুল আমারার দেয়াল থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। (তারিখে মদীনা ওয়া দামেস্ক, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৯)
৭- সূর্যগ্রহণ
যখন ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হন তখন সূর্যগ্রহণ হয় এবং এত অন্ধকার হয়ে যায় যে যোহরের সময় আকাশের তারা অবলোকন করা যাচ্ছিল উক্ত অবস্থা দেখে আমি মনে করছিলাম যে হয়তো কেয়ামত সংঘটিত হয়ে গেছে! (তারিখে মদীনা ওয়া দামেস্ক, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৮, সুনানে কুবরা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৩৭)
৮- পাথরের নিচ থেকে রক্ত জারি হয়
আবু বকর বেইহাকি থেকে এক প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে, ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক যোহরীকে জিজ্ঞাসা করে ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের দিন বাইতুল মোকাদ্দাসের পাথরগুলোর কি অবস্থা হয়েছিল? যোহরী বলে আমি শুনতে পাই যে ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের দিন যে পাথরই মাটি থেকে উঠানো হচ্ছিল তার নিচ থেকে তাজা রক্ত দেখা যাচ্ছিল। (তারিখে ইসলাম, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৬, তারিখে মদীনা ওয়া দামেস্ক, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২২৯)
৯- উদ্ভিদ সমূহের ছায় হয়ে যাওয়া
ইয়াযিদ বিন আবি যিয়াদ বলেনঃ আমার বয়স যখন ১৪ বছর তখন হুসাইন ইবনে আলী (আ.) শহীদ হন তখন এজিদী শিবিরের উদ্ভিদ সমূহ ছায় হয়ে যায়। (তাহযিবুত তাহযিব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৫, তাহযিবুল কামাল, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৩৪-৪৩৫, তারিখে মাদীনা ওয়া দামেস্ক, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৩০)
১০- হুসাইন (আ.) এর উটের মাংস তিক্ত হয়ে যায়
জামিল বিন মাররা বলেনঃ আশুরার দিন হুসাইন (আ.) এর উটগুলো লুন্ঠন করা হয় এবং জবাই করার পর রান্না করা হয়। রাবি বলেনঃ সেই গোশত এত বেশী তিক্ত হয়ে যায় যে তা আর কেউ খেতে পারেনি। (তাহযিবুত তাহযিব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৬, তাহযিবুল কামাল, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৩৫-৪৩৬, তারিখে মাদীনা ওয়া দামেস্ক, খন্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৩১)
১২- গোশতে আগুন পরিলক্ষিত হয়
হামিদ তাহান থেকে রওেয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে, সে বলেন আমি খাযায়ে গোত্রে ছিলাম তখন যা কিছু তারা হুসাইন (আ.) এর কাছ থেকে লুট করেছিল সেখানে নিয়ে আসে তার মধ্যে একটা উটও ছিল সেই গোত্রের লোকেরা বললো যে এই উটটিকে হয় আমরা জবাই করি অথবা তা বিক্রয় করে দেই। তখন সে উটটি ধরে নিয়ে এসেছিল সে বললো আমি উটটিকে জবাই করতে চাই। হামিদ বলে আমি উটিকে নাহর করার জন্য অস্ত্রটি প্রস্তুত করলাম। যখন উটকে জবাই করার জন্য শোয়ানো হয় এবং আমি আমার অস্ত্রটিকে মাটিতে রাখি এবং উটটিকে জবাই করার জন্য প্রস্তুত হই তখন হঠাৎ সেই অস্ত্র থেকে পানির মতো আগুন আসতে থাকে। (তাহযিবুল কামাল, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৩৫, )
সমাপ্ত

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন