হজরত আলী আকবর (আ.)

হজরত আলী আকবর ৪৩ হিজরী শাবান মাসের ১১ তারিখে মদীনা মুনাওয়ারাতে জন্মগ্রহণ করেন।(মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৮৮) তার পিতার নাম ইমাম হুসাইন বিন আলী বিন আবি তালিব (আ.) এরবং মাতার নাম লাইলা বিনতে আবি মাররা বিন উরওয়া বিন মাসউদ সাকাফি।(আলামুন

হজরত আলী আকবর (আ.)

এস, এ, এ

হজরত আলী আকবর ৪৩ হিজরী শাবান মাসের ১১ তারিখে মদীনা মুনাওয়ারাতে জন্মগ্রহণ করেন।(মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৮৮)
তার পিতার নাম ইমাম হুসাইন বিন আলী বিন আবি তালিব (আ.) এরবং মাতার নাম লাইলা বিনতে আবি মাররা বিন উরওয়া বিন মাসউদ সাকাফি।(আলামুন নেসাউল মুমিনাত, পৃষ্ঠা ১২৬, মাকাতেলে তালেবীন, পৃষ্ঠা ৫২)
তিনি ছিলেন বণী হাশিম গোত্র থেকে যার রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়রা ছিল রাসুল (সা.). হজরত আলী (আ.), হজরত ফাতিমা (সা.আ.) ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইন (আ.)। আবুল ফারাজে ইস্ফাহানী লিখেছেন যে, একদা মাবিয়া তার সঙ্গী সাথীদের জিজ্ঞাসা করে যে, বলতো আমার খেলাফতে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তি কে? তখন সবাই বলে যে আপনি ছাড়া আর কে হতে পারে। তখন মাবিয়া বলে যে না এমনটি না বরং খেলাফতের জন্য উপযুক্ত এবং যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তি হচ্ছেন আলী ইবনে হুসাইন (আ.) যার পিতামহ হচ্ছে রাসুল (সা.) সে হচ্ছে একজন বণী হাশিমের সাহসী এবং বীর। (মাকাতেলুত তালেবীন, পৃষ্ঠা ৫২, মুনতাহিউল আমাল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৩ এবং ৪৬৪)
একদা ইমাম হুসাইন (আ.) মদীনার শাষকের কাছে একটি খবর পৌছানোর জন্য আলী আকবর (আ.) কে দ্বায়িত্ব দেন যখন তিনি উক্ত খবরটি নিয়ে মদীনার শাষকের কাছে পৌছায় তখন শাষক তাকে জিজ্ঞাসা করে যে তোমার নাম কি? প্রতিউত্তরে তিনি বলেন আমার নাম আলী, শাষক আবার জিজ্ঞাসা করে যে তোর ভাইয়ের নাম কি? সে আবারও বলে আলী তখন শাষক রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে যে, তোমার বাবাকি তার সকল সন্তানের নাম আলী রাখতে চাই। উক্ত খবরাট তিনি তাঁর বাবা ইমাম হুসাইন (আ.) এর কাছে পৌছায়। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) বলেন যে, খোদার শপথ যদি আমাকে ১০টি সন্তান দান করেন তাহলে আমি তাদের সবার নাম আলী রাখবো এবং যদি খোদা আমাকে ১০টি কন্যা সন্তান দান করেন তাহলে তাতের সবার নাম রাখবো ফাতিমা।
আলী আকবরের ব্যাক্তিত্বঃ
হজরত আলী আকবর ছিলেন সূদর্শন, যুবক, মিষ্টিভাষি এবং সর্বপরি তিনি ছিলেন রাসুল (সা.) এর সদৃশ।(মুনতাহিউল আমাল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৫)
রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে, যখন ইমাম হুসাইন (আ.) আলী আকবরকে কারবালার রণক্ষেত্রে প্রেরণ করেন তখন তিনি শত্রুদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেনঃ হে লোকেরা তোমরা সাক্ষি থেক আমি আমার সন্তানকে রণক্ষেত্রে প্রেরণ করছি যে ছিল রাসুল (সা.) এর সদৃশ। যখন আমার হৃদয় রাসুল (সা.) কে দেখতে ইচ্ছা পোষণ করতো তখন আমি তাকে দেখে মনের আশা মিটাতাম।
আবুল ফারাজ ইসফাহানীর মতে তিনি উমসমানের যুগে জন্মগ্রহণ করেন (মাকাতেলুত তালেবীন, পৃষ্ঠা ৫৩) এবং শাহাদতের সময় তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর। আবার কেউ বর্ণনা করেছেন যে তাঁর বয়স ছিল ২৮ বছর। তিনি তাঁর দাদা আলী ইবনে আবি তালিব এবং বাবা হুসাইন (আ.) এর স্নেহ এবং শিক্ষায় লালিত পালিত হন।
আলী আকবরের শাহাদতঃ
কারবালাতে হজরত আলী আকবর সর্বদা তার বাবা ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাথে ছিলেন। যখন ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালার দিকে রওনা হন তখন হঠাৎ তার শরীর খারাপ হয়ে যায় এবং ক্ষণিকের জন্য ঘুমিয়ে পড়েন এবং পরে যখন তিনি সাওয়ারে আরোহন করেন তখন তাঁর মুখ থেকে এক দৈববাণী শুনতে পাওয়া যায় তিনি বলেনঃ
«انا لله و انا اليه راجعون »
তখন আলী আকবর ইমাম (আ.) এর কাছে ছিলেন এবং তিনি জানেন যে ইমাম কোন কথায় অযথা বলেন না। তিনি ইমাম (আ.) কে জিজ্ঞাসা করেন হে বাবা কেন আপনি এমন কথা উচ্চারণ করলেন? তিনি বলেনঃ আমি দেখলাম যে, আমাদের উক্ত কাফেলাটি এমন এক স্থানের দিকে যাচ্ছে যে স্থানটি আমার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। আলী আকবর ইমাম (আ.) কে জিজ্ঞাসা করেন হে বাবা কি আমরা হক্ব পথে নাই? ইমাম তার উত্তরে বলেন অবশ্যই আমরা হক্ব পথে রয়েছি। তাহলে মৃত্যু থেকে আর ভয় কিসের।
হজরত আলী আকবর আরবের তিনটি প্রসিদ্ধ গোত্রের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল কিন্তু তারপরেও তিনি কখনও সেই সব গোত্রের নাম উল্লেখ করেননি বরং তিনি নিজেকে বণী হাশিমের সদস্য বলে গর্ববোধ করেছেন। তিনি ছিলেন বণী হাশিমের কারবালার ময়দানের প্রথম শহীদ আর তাই আমরা যিয়ারতে দেখতে পাই যেখানে বলা হয়েছেঃ
السَّلامُ عليكَ يا اوّل قتيل مِن نَسل خَيْر سليل
হজরত আলী আকবর কাবালার ময়দানে অনেক এজিদী সৈন্যকে হত্যা করে অবশেষে মাররা বিন মানকায আবদী নামক এক ব্যাক্তি তার কপালে আঘাত করে যার কারণে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন তখন অন্যন্য সৈন্যরা সাহস করে এবং এবং তার দিকে এগিয়ে আসে এবং তাকে চারিদিক থেকে আক্রমণের মাধ্যমে তাকে শহীদ করেন।
হজরত আলী আকবরের পবিত্র দেহ মোবারক কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.) এর পায়ের অংশে দাফন করা হয়েছে।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন