সূরা মারিয়াম; আয়াত ৮১-৮৬

সূরা মারিয়াম; আয়াত ৮১-৮৬

{tortags,999,2}
সূরা মারিয়াম; আয়াত ৮১-৮৬


সুরা মারিয়ামের ৮১ ও ৮২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَاتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ آَلِهَةً لِيَكُونُوا لَهُمْ عِزًّا (81) كَلَّا سَيَكْفُرُونَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُونُونَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا (82)
“এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে কিছু খোদা বানিয়ে নিয়েছে, যাতে তারা তাদেরকে ক্ষমতা ও খ্যাতি দান করতে পারে।” (১৯:৮১)
“কিন্তু কখনোই (তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না বরং তাদের উপাস্যরা) শিগগিরই তাদের ইবাদত প্রত্যাখ্যান করবে এবং তাদের শত্রুতে পরিণত হবে।” (১৯:৮২)

আগের আসরে বলা হয়েছে, একদল মানুষ দুনিয়ার ধন-সম্পদকে আঁকড়ে ধরেছে এবং অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিকে সম্মান-মর্যাদা ও ক্ষমতার প্রতীক বলে মনে করছে। এ দুই আয়াতে বলা হয়েছে, কাফিররা খ্যাতি ও ক্ষমতার জন্য আল্লাহর স্মরণাপন্ন না হয়ে অন্য কারোর স্মরণাপন্ন হয়। তারা কিছু উপাস্য বানিয়ে নেয়। কিন্তু কিয়ামতের দিন তাদের মিথ্যা উপাস্যরা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং পূজারীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করার পরিবর্তে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। কুরআনের অন্য আয়াতেও বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন পাথরের ও কাঠের মূর্তিগুলোও আল্লাহর ইচ্ছায় কথা বলতে শুরু করবে এবং মুশরিকদের বিরোধিতা করবে। যারা তাদের পুঁজা করছে, তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করবে। ইমাম সাদেক (আ.) সূরা মারিয়ামে ব্যবহৃত ‘অলিহাতান’ শব্দের ব্যাখ্যা দিতে যেয়ে বলেছেন, ‘অলিহাতান’ শব্দের মাধ্যমে ওই সব বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও নেতাকে বোঝানো হয়েছে, যাদেরকে মানুষ খ্যাতি ও ক্ষমতা অর্জনের জন্য অনুসরণ করে থাকে। এ আয়াতে ইবাদতের অর্থ সিজদা ও রুকু নয় বরং অনুসরণ ও আনুগত্য। কোনো সৃষ্টির প্রতি আনুগত্য যখন সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবমাননা হয়ে যায়, তখন সেটা পূজা হিসেবে গণ্য হয়।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. সব মানুষই খ্যাতি ও ক্ষমতা প্রত্যাশা করে। কিন্তু তা পাওয়ার জন্য যে আল্লাহর স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত, তার স্মরণাপন্ন না হয়ে মিথ্যা উপাস্যের অনুসরণ করে। কিন্তু খ্যাতি ও ক্ষমতার প্রকৃত উতস হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ।
২. মুশরিকরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে, তারা কিয়ামতের দিন তাদেরই বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।

সূরা মারিয়ামের ৮৩ ও ৮৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
أَلَمْ تَرَ أَنَّا أَرْسَلْنَا الشَّيَاطِينَ عَلَى الْكَافِرِينَ تَؤُزُّهُمْ أَزًّا (83) فَلَا تَعْجَلْ عَلَيْهِمْ إِنَّمَا نَعُدُّ لَهُمْ عَدًّا (84)
“তুমি কি দেখ না আমি সত্য অস্বীকারকারীদের ওপর শয়তানদের ছেড়ে রেখেছি, তাদেরকে [ মন্দ কাজে ] উগ্র আবেগে উৎসাহিত করতে?” (১৯:৮৩)
“সুতরাং তাদের (ধ্বংসের) বিষয়ে তাড়াহুড়ো কর না। কারণ আমি তো তাদের (কাজ,আচরণ এমনকি নিঃশ্বাস) সুক্ষ্মভাবে গণনা করি।” (১৯:৮৪)

যেমনটি এর আগেই আমরা বলেছি, কাফিররা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে উপাস্য বানিয়ে কোনো ধরনের ফল পাবে না। কিয়ামতের দিন এ ধরনের ব্যক্তি এবং তাদের কল্পিত উপাস্যরাও আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। তবে সেদিন প্রত্যাবর্তন করে কোনো লাভ হবে না। এ কারণে আল্লাহতায়ালা বলছেন, কাফিরদের ধ্বংসের বিষয়ে তাড়াহুড়ো করার কী প্রয়োজন? তাদের সব কাজেরই রেকর্ড রাখা হচ্ছে। এমনকি তাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসের হিসাব থাকছে। মানুষের আয়ুর হিসেব রাখার অর্থ হল তার কাজের হিসাব রাখা। ভ্রুণ যেমন মাতৃগর্ভে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থানের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে, তেমনি পৃথিবীতেও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকার মধ্যদিয়ে মানুষের আত্মা পরিপক্ক ও পরিপূর্ণ হয়। আল্লাহ মানুষকে তার জন্য নির্ধারিত সময় ও সুযোগ পরিপূর্ণভাবে দিয়ে থাকেন। কাজেই আল্লাহর কাছে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়। ব্যক্তিটি কাফিরই হোক আর মুমিনই হোক। আসলে গোনাহগার কাফিররা পৃথিবীতে প্রতিটি মুহূর্তে তাদের পাপের বোঝাই বাড়িয়ে চলে। অর্থাত তাদের বয়স গণনার অর্থ হল, তাদের শাস্তির পরিমাণ বেড়ে চলা। অন্যদিকে, সতকর্মশীল মুমিনদের বয়স বাড়লে পুণ্যের পরিমাণ বাড়ে।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. যারা কুফরি করে, তাদের ওপর শয়তান আধিপত্য বিস্তার করে। আর এটাও তাদের জন্য একটা শাস্তি।
২. শয়তান, মানুষকে প্ররোচনা দেয়, কিন্তু কাউকে কোনো কিছু করতে বাধ্য করে না। যদিও তার প্ররোচনা অনেক শক্তিশালী।
৩. আল্লাহর রীতি হচ্ছে, মানুষকে সময় ও সুযোগ দেয়া। কাফিরদের ধ্বংসের বিষয়ে আল্লাহ তাড়াহুড়ো করেন না।

সূরা মারিয়ামের ৮৫ ও ৮৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا (85) وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَى جَهَنَّمَ وِرْدًا (86)
“সেদিন পূণ্যাত্মাদেরকে পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] কাছে সমবেত করা হবে।” (১৯:৮৫)
“এবং পাপীদের আমি দোযখের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাব ঠিক যেমনিভাবে তৃষ্ণার্ত (পশুপালকে) পানির দিকে তাড়িত করা হয়।” (১৯:৮৬)

এ দুই আয়াতে পূণ্যবান ও পাপীদের মধ্যে বিভাজন করা হয়েছে এবং প্রত্যেক দলের পরিণতির বিষয়ে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। মুত্তাকিরা হচ্ছেন- আল্লাহর মেহমান এবং তাদেরকে বেহেশত দেয়া হবে। কিন্তু পাপীদের জন্য বিষয়টা ভিন্ন। তৃষ্ণার্ত উটের পালকে যেমনিভাবে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, ঠিক তেমনিভাবে পাপীদেরকে দোযখের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু যেখানে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে কোনো পানি থাকবে না। থাকবে শুধুই আগুন। এখানে ‘ইলাই আর রাহমান’ অর্থাত ‘করুণাময় আল্লাহর দিকে’–এই বাক্যটির মোকাবেলায় ‘ইলাই জাহান্নাম’ অর্থাত ‘জাহান্নামের দিকে’ বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছে। এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে, মুত্তাকিদেরকে বেহেশতে স্থান দেয়া হবে। আর বেহেশতের দিকে যাওয়া মানেই আল্লাহর দিকে যাওয়া। তাকওয়া ও পরহেজগারিই যে তাদের বেহেশত প্রাপ্তির কারণ, সে বিষয়টিও এ দুই আয়াত থেকে স্পষ্ট হচ্ছে।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. কিয়ামতের দিন হচ্ছে পূণ্যবান ও পাপীদের সুস্পষ্ট পরিচয় প্রকাশ করার দিন। আল্লাহতায়ালা পূন্যবানদেরকে নিজের অতিথি হিসেবে গণ্য করবেন এবং সেভাবেই মর্যাদা দেবেন। কিন্তু পাপীদের স্থান দোযখ। তারা অপমানিত ও লাঞ্জিত হয়ে দোযখে প্রবেশ করবে।
২. বেহেশতে প্রবেশের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, পূণ্যবানদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত,যা তুলনাহীন।
৩. তাকওয়া হচ্ছে বেহেশতের চাবি। মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রে তাকওয়ার প্রভাব থাকতে হবে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন