সূরা মারিয়াম; আয়াত ৫১-৫৫

সূরা মারিয়াম; আয়াত ৫১-৫৫

সূরা মারিয়াম; আয়াত ৫১-৫৫


সূরা মারিয়ামের ৫১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مُوسَى إِنَّهُ كَانَ مُخْلَصًا وَكَانَ رَسُولًا نَبِيًّا (51)
“আর এ কিতাবে মুসার কথা স্মরণ কর। সে ছিল বাছাই করা ব্যক্তি এবং ছিল রাসূল ও নবী।” (১৯:৫১)
আগের কয়েকটি আয়াতে কয়েকজন নবী ও রাসূল সম্পর্কে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরার পর এ আয়াতে হযরত মুসা (আ.) সম্পর্কে বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। হযরত মুসা (আ.) হচ্ছেন অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পাঁচ নবী বা উলুল আজমের একজন। হযরত নূহ (আ.), হযরত ইব্রাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.) এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে একসঙ্গে ‘উলুল আজম’ বলা হয়। এ আয়াতে হযরত মুসা (আ.)-কে নবী ও রাসূল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি রেসালাত ও নব্যুয়তের দায়িত্ব প্রাপ্ত। রাসূলের মর্যাদা নবীর চেয়ে বেশি এবং ওহির ফেরেশতার সঙ্গে তার সম্পর্ক সরাসরি। রাসূল ওহি পাওয়ার পর তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। পাশাপাশি তিনি ওহির ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া, সাধারণ মানুষ যে কোনো সময় শয়তানের ধোঁকায় পরতে পারেন। কিন্তু নবী-রাসূলদের মতো আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তিদের ওপর শয়তান প্রভাব ফেলতে পারে না।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. ঈমানদের উচিত নবী-রাসূলদের কথা স্মরণ করা। আল্লাহতায়ালা নবী-রাসূলদের কথা স্মরণ করতে পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন।
২. পবিত্রতা, মানুষের ঐশী ও আধ্যাত্মিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

সূরা মারিয়ামের ৫২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَنَادَيْنَاهُ مِنْ جَانِبِ الطُّورِ الْأَيْمَنِ وَقَرَّبْنَاهُ نَجِيًّا (52)
“আমি তাকে তূরের ডান দিক থেকে ডাকলাম এবং গোপন আলাপের মাধ্যমে তাকে নৈকট্য দান করলাম।” (১৯:৫২)

হযরত মুসা (আ.)-এর নব্যুয়তপ্রাপ্তির ধরণ সম্পর্কে এ আয়াতে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। মুসা (আ.) তুর পর্বতের পাদদেশ থেকে ঐশী শব্দ শুনতে পান এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। অন্য আয়াতে হযরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আল্লাহর সরাসরি কথোপকথনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এটা আল্লাহর কাছে হযরত মুসা (আ.)-এর উচ্চ মর্যাদার প্রমাণ এবং এ আয়াতে ওই বিষয়টিকে আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :
১. প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর ঘনিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হয়। নবী-রাসূলেরাও এ পন্থা অনুসরণ করেছেন।
২. কিছু কিছু স্থান পবিত্র। এসব স্থানের পবিত্রতা রক্ষা করা জরুরি। যেমন- তুর পর্বত।

সূরা মারিয়ামের ৫৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَوَهَبْنَا لَهُ مِنْ رَحْمَتِنَا أَخَاهُ هَارُونَ نَبِيًّا (53)
“আর নিজ অনুগ্রহে তার ভাই হারুণকে নবী বানিয়ে তাকে সাহায্যকারী হিসেবে দিলাম।” (১৯:৫৩)

যেমনিভাবে অন্য আয়াতেও এসেছে, হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে চেয়েছিলেন তার ভাই হারুনকে যেন তার মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয় একং তিনিযাতে তার ঐশী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে পারেন। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন এবং হারুন (আ.) নবী হওয়া সত্ত্বেও সব সময় তার ভাইয়ের সেবা করেছেন। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, নবী-রাসূলরা নিজেদের নাম-যশের জন্য নয় বরং ঐশী দায়িত্ব পালনের জন্য কাজ করেছেন এবং পরস্পরকে সহযোগিতা করেছেন।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. দুই ভাই পরস্পরের সহযোগী হওয়াটা আল্লাহর নেয়ামত। এমন সহযোগিতামূলক সম্পর্কের জন্য চিন্তা-বিশ্বাসের মিল থাকাটা জরুরি।
২. কখনো কখনো দুই ব্যক্তি মর্যাদা ও যোগ্যতার দিক থেকে সমপর্যায়ের হওয়ার পরও কোনো একজনের পক্ষে অন্যজনকে অনুসরণ করতে হয়। কারণ সমাজে একজন শাসক বা তত্ত্বাবধায়ক থাকেন।

সূরা মারিয়ামের ৫৪ ও ৫৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَبِيًّا (54) وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا (55)
“আর এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা স্মরণ কর। সে ছিল ওয়াদা পালনে সত্যনিষ্ঠ এবং ছিল রাসূল নবী।” (১৯:৫৪)
“সে নিজের পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাতের হুকুম দিত এবং নিজের রবের কাছে ছিল একজন পছন্দনীয় ব্যক্তি।” (১৯:৫৫)

হযরত ইব্রাহিম ও হযরত মুসা (আ.)’র বর্ণনা দেয়ার পর এ দুই আয়াতে হযরত ইসমাঈল (আ.)’র কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। হযরত ইসমাইল (আ.) হচ্ছেন ইব্রাহিম (আ.)-র বড় সন্তান। যদিও সব নবী-রাসূলই প্রতিশ্রতি রক্ষার ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিলেন, কিন্তু হযরত ইসমাঈল (আ.)-র ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় ছিল। এটা নিশ্চিত যে, আল্লাহতায়ালা যে প্রতিশ্রুতি দেন তা শতভাগ রক্ষা করেন। কাজেই প্রতিশ্রুতি লংঘন করাকে আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন না এবং প্রতিশ্রুতি লংঘন করা মুনাফিক ব্যক্তির লক্ষণ। কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য এবং প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি রক্ষার ক্ষেত্রে নবী ও রাসূলদের আন্তরিকতার কথা অবিশ্বাসী ও কাফিররাও সব সময় স্বীকার করেছে। সমাজ সংস্কারের কাজ শুরুর আগে পরিবারের সদস্যদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা জরুরি। কারণ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-ও সব মানুষকে সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানানোর আগে আত্মীয় স্বজনদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন। এটাই স্বাভাবিক যে, নবী-রাসূলদের কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। জনগণের সন্তুষ্টি নয়। এ কারণে তারা তাদের অনুসারীর সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে কখনোই আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেননি বরং আল্লাহর নির্দেশ মানাকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন।

এ দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল:
১. আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে পূর্ণতাই মানুষের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
২. নবী-রাসূলরা সামাজিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেন। তারা নামায ও যাকাত কায়েমের ওপর সব সময় গুরুত্বারোপ করেছেন।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন