ঐতিহাসিক ঈদে গাদীর: ইসলামের পরিপূর্ণতার দিন

১৮ ই জিলহজ এক মহাখুশির দিন। কারণ, এখন থেকে ১৪২৪ বছর আগে দশম হিজরির এই দিনে তথা ১৮ ই জিলহজ বিদায় হজ শেষে সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত নাজেল হওয়ার পর বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)-কে নিজের উত্তরসূরি বা

ঐতিহাসিক ঈদে গাদীর: ইসলামের পরিপূর্ণতার দিন
১৮ ই জিলহজ এক মহাখুশির দিন। কারণ, এখন থেকে ১৪২৪ বছর আগে দশম হিজরির এই দিনে তথা ১৮ ই জিলহজ বিদায় হজ শেষে সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত নাজেল হওয়ার পর বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)-কে নিজের উত্তরসূরি বা স্থলাভিষিক্ত বলে ঘোষণা করেছিলেন।

সুরা মায়েদার ওই আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন: "হে রসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না।"

ওই সমাবেশে এক লাখ বিশ হাজারেরও বেশি সাহাবি ও হজযাত্রী উপস্থিত ছিলেন।

মানুষের ওপর তিনিই নেতৃত্ব দেয়ার সবচেয়ে বেশি যোগ্য যিনি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। আর বিশ্বনবী (সা.)’র পর তাঁর পবিত্র হাদিস অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)। কারণ, হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি জ্ঞানের নগর আর আলী হল তার দরজা। অর্থাত বিশ্বনবী (সা.)’র জ্ঞানের শহরে প্রবেশের জন্য আলী (আ.) নামক মাধ্যম বা দরজা দিয়েই ঢুকতে হবে। এ ছাড়াও হাদিসে বলা হয়েছে, আল ওলামাউ ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া। অর্থাত নবীগণের উত্তরসূরি হচ্ছেন আলেমগণ। হযরত আলী (আ.) যে বিশ্বনবী (সা.)’র পর শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন তাতে তাঁর শত্রু -মিত্র নির্বিশেষে কোনো সাহাবিই সন্দেহ পোষণ করতেন না। এ কারণেই মহান আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবী (সা.) আলী (আ.)-কে তাঁর উত্তরসূরি বা স্থলাভিষিক্ত তথা মুসলমানদের ইমাম বা নেতা বলে ঘোষণা করেছিলেন পবিত্র গাদীর দিবসে। এই ইমামত হচ্ছে নবুওতেরই ধারাবাহিকতা। আজ সেই ঈদে গাদির উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি ঈদ মুবারক।

ইসলামে ঐশী ইমামত বা খোদায়ী নেতৃত্ব ঠিক করে দেন মহান আল্লাহ। আর সেটা বংশ পরম্পরায়ও চলতে পারে। যেমন, নবী হয়েছিলেন ইব্রাহিম (আ.)'র বংশধরগণ এবং হযরত দাউদ (আ.)'র পুত্র সুলায়মান ও হযরত মুসা (আ.)'র ভাই হারুন (আ.)।

ইমামত বা নবুওতের মত ঐশী বা খোদায়ী পদগুলোতে কারা আসীন হবেন মানুষ তা ঠিক করার অধিকার রাখে না। কারণ, মানুষের মনোনয়ন বা নির্বাচন ভুলও হতে পারে। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই তা ঠিক করে দেন। বিশ্বনবী (সা.) বিভিন্ন সময় আলী(আ.) কে নিজ খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছেন। এরমধ্যে তিনটি দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করছি:

প্রথমত: রাসূল হিসেবে মনোনীত হওয়ার তথা বে’সাতের প্রথম দিকে: বিশ্বনবীকে (সা.) যখন নিজের আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয় তখন তিনি সবার উদ্দেশে বললেন:“যে ব্যক্তি এই পথে আমাকে সাহায্য করবে, সেই হবে আমার ওয়াসি তথা কর্তৃত্বের অধিকারী, উজির বা পৃষ্ঠপোষক এবং স্থলাভিষিক্ত ।” রাসূল (স.) এভাবে বলেন-

“তোমাদের মাঝে কে এমন আছে যে এই কাজে আমাকে সহযোগিতা করবে যাতে সে তোমাদের মাঝে আমার ভাই, উজির (পৃষ্ঠপোষক), খলিফা এবং স্থলাভিষিক্ত হতে পারে?”

কেবল আবু তালিবের সন্তান আলী (আ.) রাসূল (স.) এর কথায় হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। আর তখন আল্লাহর রাসূল (স.) নিজ আত্মীয় স্বজনদের উদ্দেশে বলেন-
“এই (আলী) তোমাদের মাঝে আমার ভাই, ওয়াসি এবং খলিফা। অতএব, তোমরা তার কথা শোন এবং তাকে অনুসরণ কর।”

দ্বিতীয়ত: তাবুকের যুদ্ধে: রাসূলুল্লাহ (স.) আলী (আ.) এর উদ্দেশে বলেন-

“[হে আলী!] তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি আমার কাছে ঠিক তদ্রূপ যেমন হারুন (আ.) ছিলেন মুসা (আ.) এর কাছে। তবে পার্থক্য এই যে, আমার পরে আর কোনা নবী নেই (আসবে না)।’

অর্থাৎ যেভাবে হারুন (আ.) কোনরকম ব্যবধান ছাড়াই মুসা (আ.) এর স্থলাভিষিক্ত ছিলেন তুমিও আমার খলিফা ও স্থলাভিষিক্ত।

তৃতীয়ত: দশম হিজরিতে: বিদায় হজ থেকে ফেরার পথে ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে হাজিদের এক বিশাল সমাবেশে মহানবী (স.) আলী (আ.) কে মুসলমান ও মু’মিনদের নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন-

“আমি যার মাওলা (অভিভাবক) আলীও তার মাওলা।” এই বাক্যটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এরপর বললেন:- “হে আল্লাহ! তাকে তুমি ভালবাসত যে আলীকে ভালবাসে ও তুমি তার প্রতি শত্রুতা পোষণ কর যে আলীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে; তুমি সহযোগিতা কর তাকে যে আলীকে সহযোগিতা করে, তুমি তাকে নিঃসঙ্গ কর যে আলীকে একা রাখে এবং সত্যকে আলীর সাথে রাখ তা যে দিকেই থাক না কেন”।

হে লোকসকল! আপনারা অবশ্যই যারা উপস্থিত আছেন তারা এই বাণীটি অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছিয়ে দিবেন। রাসূলের (সা.) বক্তব্য শেষ হলে জিব্রাঈল (আ.) আবার দ্বিতীয়বারের মত অবতীর্ণ হয়ে তাঁকে এই বাণীটি পৌঁছে দেন:

আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম ও আমার নেয়ামত বা অবদানকে তোমাদের উপর সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়িদা-৩)

রাসূল (সা.) এই বাণী পেয়ে মহা-আনন্দিত হলেন এবং বললেন- মহান আল্লাহর শুকর করছি যে তিনি দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও তাঁর নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন এবং মহান প্রভু আমার রেসালাতের বা নবুওতি দায়িত্বের ও আলীর বেলায়াতের বা অভিভাবকত্বের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আল্লাহর রাসূল (স.) তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বলেছিলেন: “আমি কি তোমাদের ওপর তোমাদের নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব রাখি না?” তখন উপস্থিত সব মুসলমান দাঁড়িয়ে রাসূল (স.) এর এ কথার প্রতি সম্মতি জানান। অতএব, বিষয়টি হতে স্পষ্ট হয় যে, এই হাদিসে 'মাওলা' বলতে মু’মিনদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও তাদের পূর্ণ কর্তৃত্বকে বোঝানো হয়েছে। অতএব, এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহর রাসূল (স.) যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন তা তিনি আলী(আ.) এর জন্যও তা নিশ্চিত করে যান। আর সে দিনই হাসসান বিন সাবিত গাদীরের ঐতিহাসিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করেন-

"গাদীরের দিন তাদের (মুসলমানদের) নবী তাদেরকে আহ্বান জানালেন উচ্চস্বরে, (কি বিস্ময়!)আল্লাহর প্রেরিত রাসূল (সা.) দেখ কিভাবে আহ্বান করছেন{ কিংবা শোন এখন, যা বললেন রাসূল (সা.) }

অতঃপর তিনি শুধালেন জনগণকে: কে তোমাদের প্রভু (মাওলা তথা অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক) ও নবী? সেখানকার সবাই বললো নির্দ্বিধায়:

আপনার আল্লাহ আমাদের অভিভাবক এবং আপনি আমাদের রাসূল। আজ আপনি আমাদের মাঝে কোনো অবাধ্যকেই খুঁজে পাবেন না।

এরপর বললেন: হে আলী ওঠ! নিশ্চয়ই আমি এতে সন্তুষ্ট যে আমার পর তুমিই ইমাম (নেতা) ও হেদায়াতকারী।

অতএব, আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। তোমরা তাঁর প্রকৃত বন্ধু হও বা তাঁকে ভালবাস ও তাঁর অনুসারী হও।

এরপর তিনি সেখানে দোয়া করলেন: হে আল্লাহ্! আলীর বন্ধুকে তোমার বন্ধু মনে কর এবং যে আলীর সাথে শত্রুতা করবে তুমিও তার সাথে শত্রুতা কর।
রাসূল (সা.) তাঁর বক্তব্য শেষ করার পর মঞ্চ হতে নেমে আসলেন এবং একটি তাঁবুতে বসে নির্দেশ দিলেন যেন, আলী অপর এক তাঁবুতে বসে। অতঃপর বললেন, যেন সব সাহাবীগণ আমিরুল মুমিনীনকে অভিবাদনের জন্য আসেন ও বেলায়াতের বা অভিভাবকত্বের পদাসীনকে অভিবাদন জানান। আবুবকর,উমর, ওসমান, তালহা ও যুবাইর সবার আগে এবং এরপর রাসূলের স্ত্রীগণসহ অন্যরা আলী (আ.)-কে অভিনন্দন জানান। উমর বলেছিলেন, অভিনন্দন, অভিনন্দন হে আবু তালিব নন্দন! আজ হতে আপনি আমার এবং সকল মোমিন-মোমিনাদের মাওলা হলেন।

বাইয়াত বা অঙ্গীকার অনুষ্ঠান শেষ হতে প্রায় তিন দিন সময় লেগেছিল। যেহেতু সবাই মহান খেলাফতের দায়িত্ব সম্পর্কে জেনে গেছেন ও রাসূলের (সা:) খলিফা বা প্রতিনিধিও নির্বাচন হয়ে গেছে এবং জনগণও তাঁর সাথে পরিচিতি লাভ করেছেন ও তাঁর হাতে বাইয়াত বা শপথ গ্রহণ করেছেন, তাই রাসূল (সা:) আমিরুল মোমিনীন আলীকে (আ.) ডাকলেন ও নিজ পাগড়ীটি, যার নাম ছিল ‘শিহাব’ তার মাথায় পরালেন ও লেজ সদৃশ লম্বা কাপড়টি তাঁর গ্রীবা পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিলেন এবং বললেন:

পাগড়ী হচ্ছে ইসলামের নিদর্শন। পাগড়ী এমনই চিহ্ন যা মুসলমানদেরকে মুশরিক হতে আলাদা করে। তিনি বলেছেন: ফেরেশতারা ঠিক এরূপে আমার কাছে আসে।
এভাবেই গাদীরের ঘটনার সমাপ্তি ঘটলো এবং হাজীরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অঞ্চলের বা দেশের পথ ধরে জাজিরাতুল আরব হতে পরস্পর আলাদা হয়ে গেলেন। তারা বেলায়াত বা কর্তৃত্বের হাদিসটি সমস্ত মুসলমানের কানে পৌঁছে দিয়েছেন।

হাদিসে গাদীর, মোতওয়াতির হাদিসগুলোর অন্যতম যা শিয়া মনীষীরা ছাড়াও প্রায় ৩৬০ জন সুন্নি মনীষী বর্ণনা করেছেন। এই হাদিসটির সনদ ১১০ সাহাবীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে এবং ২৬ জন মুসলিম মনীষী এর সনদ ও পন্থা সম্পর্কে আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবেত্তা আবু জাফার তাবারি এই হাদীসের সনদ ও পন্থাকে দুই খণ্ডের এক গ্রন্থে সংকলিত করেছেন।

হযরত আলী (আ.) ছিলেন জ্ঞান, বীরত্ব, সাহস, দূরদর্শিতা, মহানুভবতা, দয়া, পরোপকার, ন্যায়নিষ্ঠা ইত্যাদি গুণের আকরসহ মানবীয় মূল্যবোধ ও যোগ্যতার সব দিক থেকে একজন ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপূর্ণ আদর্শ মানব। বিশ্বনবী (সা.) তাকে প্রায় ৫/৬ বছর বয়স থেকে নিজের হাতে ও নিজের ঘরে রেখে মনের মত করে গড়ে তোলেন এবং জ্ঞানগত নানা দিকসহ সব দিকে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেব প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

উমর ইবনে খাত্তাব বলেছেন, আলী না থাকলে ওমর ধ্বংস হয়ে যেত এবং আলীর মত একজন মহামানব জন্ম দেয়ার ক্ষমতা পৃথিবীর আর কোনো নারীর নেই। তিনি আলী (আ.)'র শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন হিসেবে তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ করেছেন যা আর কারো ছিল না। এ তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল: "(নবী-নন্দিনী) ফাতিমা (সা. আ.)'র সঙ্গে তাঁর বিয়ে, মসজিদে (নববীর) ভেতরে তাঁর বসবাস অব্যাহত থাকা যা আমার জন্য বৈধ নয় এবং খায়বার যুদ্ধের পতাকা (তথা সেনাপতিত্ব) পাওয়া।"

আলী (আ.)'র আগে অন্য সেনাপতিরা মদিনায় ইহুদি শত্রুদের খায়বর দুর্গ জয় করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন,

"আগামীকাল আমি এমন একজনের হাতে পতাকা দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাঁকে ভালবাসেন।"

গাদিরে খুমের ওই ঘটনার ২৫ বছর পর ওসমান ইবনে আফফান নিহত হলে মুসলমানদের ব্যাপক অনুরোধ ও পীড়াপীড়ির মুখে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) এখন থেকে ১৩৯৮ বছর আগে ঠিক আজকের দিনটিতে (১৮ ই জিলহজ) একান্ত অনীহা ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতা বা খলিফা হন। সামাজিক ন্যায়বিচার-ভিত্তিক আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা হিসেবে প্রায় ৫ বছর শাসন করার পর এক ধর্মান্ধ খারেজির সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়ে (একুশে রমজান) তিনি শহীদ হন। হামলার সময় তিনি কুফার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন।
রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময়ে বলেছেন:

" আলী আমার থেকে এবং আমি তাঁর থেকে এবং আলীই আমার পর সমস্ত মুমিনদের ওলি তথা অভিভাবক ও নেতা" (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ-১১০)
রাসূল (সা.) আরো বলে গেছেন, আলী সব সময়ই হকের পথে থাকবে। “আলী (আ.)-কে মহব্বত করা ঈমান, আর আলী(আ.)’র সঙ্গে শত্রুতা করা মুনাফেকি” (মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ-৪৮)। “ আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা”(সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)। এমনকি রাসূল (সা.) এ দোয়াও করেছেন যে, “হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও।” রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কেবল মুনাফিকই আলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে।

“যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল। আল্লাহ তাকে মুখ নিচু করে দোজখে নিক্ষেপ করবেন।”(সহি বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড, সহি মুসলিম- দ্বিতীয় খণ্ড, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড)।

“আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে খোদা! যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ।” (সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১)

সাহাবিদের অনেকেই বলতেন, আমরা আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা দেখে কে মুনাফিক ও কে মুমিন তা নির্ধারণ করতাম।

রাসূল (সা.) আরো বলেছেন: “এই আলী আমার ভাই, আমার ওয়াসি এবং আমার পর আমার প্রতিনিধি হবে। তাই তাঁর আদেশ শোন, তাঁর আদেশ মত কাজ কর।” (তাফসিরে তাবারি, ১৯ খণ্ড, পৃ-১২১, ‘লাইফ অফ মুহাম্মাদ’-ড. মো. হোসাইন হায়কাল, প্রথম সংস্করণ ১৩৫৪ হি,প্রথম খণ্ড, পৃ-১০৪)

হযরত আহমদ বিন হাম্বল বলেছেন, “যত ফজিলতের বর্ণনা আলীর বেলায় এসেছে অন্য কোনো সাহাবির বেলায় তা আসেনি। আলী (আ.)’র অসংখ্য শত্রু ছিল। শত্রুরা অনেক অনুসন্ধান করেছে আলী (আ.)’র দোষ-ত্রুটি বের করার, কিন্তু পারেনি।”

হযরত কাজী ইসমাইল নাসায়ি আবু আল নিশাবুরি বলেন, “যত সুন্দর ও মজবুত সনদের মাধ্যমে আলী (আ.)’র ফজিলতগুলো বর্ণিত হয়েছে-অন্য সাহাবিদের বেলায় তেমনটি আসেনি।”

সূত্রঃ রেডিও তেহরান

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন