কোরআনের আয়াতে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব

কোরআনের আয়াতে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব

কোরআনের আয়াতে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব
কোরআনের একাধিক আয়াতে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যদি কেউ উক্ত আয়াতগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করে এবং বিবেক বুদ্ধি দ্বারা চিন্তা করে তাহলেই সে বুঝতে পারবে যে এখনও ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভুত হননি।
ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব এখনও হয়নি এই সম্পর্কে কিছু আয়াত নিন্মে উল্লেখ করা হলোঃ
(১)
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَ الْفَتْحُ وَ رَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فىِ دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
যখন আসবে আল্লাহর সাহায্যে ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন। (সূরা নাসর ১-২)
যখন আল্লাহর সাহায্যে ও বিজয় আসবে তখন মানুষেরা বুঝতে পারবে যে, সত্য কি তখন মানুষেরা দলে দলে খোদার দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হবে বা যোগ দিবে এবং তারা বলবে আমরা আগে এ সম্পর্কে অবগত ছিলাম না যে, খোদার দ্বীন এত সুন্দর।
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, সেই যুগটি হবে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের যুগ এবং মানুষেরা বুঝতে পারবে যে, খোদার সেই সাহায্যে বা বিজয় দুনিয়ার বুকে আবির্ভূত হয়েছে তখন মানুষেরা দলে দলে দ্বীনের প্রতি ফিরে আসবে বা দিক্ষিত হবে।
(২)
هُوَ الَّذِى أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى‏ وَ دِينِ الْحَقّ‏ِ لِيُظْهِرَهُ عَلىَ الدِّينِ كُلِّهِ وَ لَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُون.
তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসুলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর বলে মনে করে।( সূরা তওবা ৩৩)
(৩)
هُوَ الَّذِى أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالهُْدَى‏ وَ دِينِ الحَْقّ‏ِ لِيُظْهِرَهُ عَلىَ الدِّينِ كلُِّهِ وَ لَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُون
তিনি তাঁর রাসুলকে পথ নির্দেশ এবং সত্য দ্বীন দ্বারা প্রেরণ করেছেন যাতে একে সব ধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা সাফ ৯)
(৪)
هُوَ الَّذِى أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى‏ وَ دِينِ الْحَقّ‏ِ لِيُظْهِرَهُ عَلىَ الدِّينِ كلُِّهِ وَ كَفَى‏ بِاللَّهِ شَهِيدًا
তিনি তাঁর রাসুলকে হেদায়াত ও সত্য ধর্ম দ্বারা প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠারূপে আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ ২৮)
তাহলে কোন কারণে অন্যান্য দ্বীন সমূহ তাকে মেনে নেয়নি?
তার কারণ হচ্ছে খোদার প্রকৃত দ্বীন তাদের কাছে পৌছায়নি এবং খোদার হুজ্জাত তাদের কাছে স্পষ্ট ছিল না।
খোদা কেন উক্ত নবী (সা.) কে প্রেরণ করেছেন? তাহলে কি নাউযুবিল্লাহ এই কোরআনে সব কিছুর বর্ণনা দেয়া হয়নি? কি উক্ত পবিত্র গ্রন্থটি সবার জন্য হেদায়াত স্বরূপ না?
উল্লেখিত প্রশ্ন সমূহের উত্তরে আমরা বলতে পারি যে, এই সব কিছুর মূল হচ্ছে খোদা যিনি একটি বিশেষ বিষয়ের প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন যেন তা দুনিয়ার সকল প্রকার দ্বীনের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। যদিওবা মুশরিকরা তা মেনে না নেয়।
উক্ত আয়াতের সত্যতা ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের সময় স্পষ্ট হবে যার সময় এখনও হয়নি।
আমরা দেখতে পাই যে স্বয়ং দ্বীনে ইসলামে প্রচলিত এমন অনেক বিষয়াবলি রয়েছে যার সম্পর্কে বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতভেদ রয়েছে যেমনঃ এমনও অনেক ফেরক্বা রয়েছে যারা খোদার নামে আল্লাহু আকবার উচ্চারণের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে জবাই করে হত্যা করে চলেছে। এরাই হচ্ছে সেই ফেরক্বা যারা বলে যে বিসমিল্লাহ কোরআনের আয়াত না। যদি তারা বিসমিল্লাহকে কোরআনের অংশ বলে মনে করতো তাহলে খোদাকে তারা রহমান ও রহিম বলে মানতো এবং কখনও খোদার নামে মুসলমানদেরকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করতো না। আমরা দেখতে পাই যে, বিসমিল্লাহ এর অস্বীকৃতির বাহ্যিকরূপ হচ্ছে কিছু উগ্র গোষ্ঠির অমানবিক অত্যাচার।
ইমাম (আ.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস যাতে তিনি বলেছেনঃ কোরআনের একটি আয়াত অর্থাৎ বিসমিল্লাহ কে বাদ দেয়া হয়েছে। আমারা বর্তমান দুনিয়াতে দেখতে পাই যে যারা বিসমিল্লাহকে বাদ দিয়েছে তাদের মধ্যেই কিছু লোক যারা মুসলমানদেরকে অমানবিকভাবে হত্যা করে বেড়াচ্ছে।
(৫)
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكمُ‏ْ وَ عَمِلُواْ الصَّلِحَتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فىِ الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَ لَيُمَكِّنَنَّ لهَُمْ دِينهَُمُ الَّذِى ارْتَضىَ‏ لهَُمْ وَ لَيُبَدِّلَنهَُّم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنىِ لَا يُشْرِكُونَ بىِ شَيًْا وَ مَن كَفَرَ بَعْدَ ذَالِكَ فَأُوْلَئكَ هُمُ الْفَاسِقُون
তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাষণ কর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাষণ কর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তিদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয় ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারাই অবাধ্য। (নূর -৫৫)
যারা খোদার প্রতি ঈমান এনেছে তিনি তাদেরকে পৃথিবীর বুকে খেলাফত বা ক্ষমতা দান করেছেন।
প্রশ্নঃ দুনিয়ার বুকে এই শাষণ কর্তৃত্ব কোথায়?
খোদার ওয়াদা অনুযায়ি দুনিয়ার শাষণ কর্তৃত্ব তাদেরকেই দেয়া হবে যারা হচ্ছে ঈমানদার এবং খোদা তাদের মাধ্যমে দুনিয়ার বুকে তাঁর দ্বীনকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করবেন। অতএব আমরা বুঝতে পারি যে, এখনও ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব হয়নি।
(৬)
وَ نُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلىَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُواْ فىِ الْأَرْضِ وَ نجَْعَلَهُمْ أَئمَّةً وَ نجَْعَلَهُمُ الْوَارِثِين
দেশে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল আমার ইচ্ছা হলো তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার। (সূরা কাসাস-৫)
খোদা উক্ত আয়াতে বলেছেনঃ যারা পৃথিবীর বুকে দূর্বল তাদেরকে তিনি নেতা বানাবেন ও ক্ষমতা দান করবেন। আমরা বর্তমান যুগে পৃথিবীর প্রতি দৃষ্টিপাত করলে বুঝতে পারি যে, কারা প্রকৃতপক্ষে দূর্বল, যারা আসলে ক্ষমতার প্রকৃত অধিকারী তারাই দূর্বল।
ইতিহাস সাক্ষি রয়েছে যে, আহলে বাইত (আ.) হচ্ছেন দুনিয়ার বুকে সবচেয়ে মজলুম এবং নিরিহ যেমনঃ আলী (আ.) এর প্রাপ্য দ্বায়িত্ব দান করা হয়নি, হজরত আলী (আ.) এর উপরে প্রত্যেক মেম্বার থেকে মাবিয়া লানত প্রেরণের প্রথা চালু করে, ইমাম হাসান (আ.) বাধ্য হয়ে সন্ধি করেন, ইমাম হুসাইন (আ.) কে কারবালায় শহীদ করা হয় এবং তার পর থেকে নিয়ে ইমাম মাহদী (আ.) পর্যন্ত প্রত্যেকটি ইমামকে কোন না কোনভাবে দূর্বল বা বাধ্য করা হয়েছে।
কেউ ইমাম (আ.) কে জিজ্ঞাসা করে যে, কেন ইমাম মাহদী (আ.) লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন? ইমাম (আ.) তার প্রতিউত্তরে তার পেটের প্রতি ইশারা করেন এবং বলেনঃ তাঁর জীবন রক্ষার্থে।
খোদা আহলে বাইত (আ.) কে ওয়াদা দান করেছেন যে তাদেরকে ইমাম নিযুক্ত করেছেন এবং দুনিয়ার বুকে তাদেরকে ক্ষমতা দান করবেন।
শিয়া ও আহলে সুন্নাতের একাধিক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত আয়াতটিতে মাহদীইজম এবং ইমাম মাহদী (আ.) এর অবির্ভাবের প্রতি ইশারা করা হয়েছে।
(৭)
وَ قُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَ زَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كاَنَ زَهُوقًا
বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (ইসরা-৮১)
প্রশ্নঃ কি বাতিল বিলুপ্ত হয়ে গেছে?
যদি হক্ব এসেই থাকে তাহলে কেন বাতিল দূরিভূত হচ্ছে না?
আমরা দেখতে পাই যে, বাতিলতো পরিপূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি বরং আরো শক্তিশালী হয়ে গেছে। আমরা যদি মক্কা শরীফের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব যে, তারা ইসলামী নিদর্শনগুলোকে বিলুপ্ত করে অনৈসলামিক অনেক কিছুই তারা গড়ে তুলেছে যেমনঃ রামিয়ে জামারাতে, খোদার ঘরে এবং আরাফাতে...।
উক্ত আয়াতটি ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্মগ্রহণের সময়ও পাঠ করা হয়েছিল। উক্ত সূরার ফযিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কেউ প্রত্যেক রাতে উক্ত সূরাটি পাঠ করে তাহলে সে ইমাম মাহদী (আ.) এর সঙ্গিদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
(৮)
وَ لِكلُ‏ٍّ وِجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيهَا فَاسْتَبِقُواْ الْخَيرَْاتِ أَيْنَ مَا تَكُونُواْ يَأْتِ بِكُمُ اللَّهُ جَمِيعًا إِنَّ اللَّهَ عَلىَ‏ كلُ‏ِّ شىَ‏ْءٍ قَدِير
আর সবার জন্যই রয়েছে কেবলা একেক দিকে, যেদিকে সে মুখ করে (ইবাদত করে) কাজেই সৎ কাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত বিষয়ে ক্ষমতাশীল। (বাকারা-১৪৮)
যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত বিষয়ে ক্ষমতাশীল। রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে বছরে ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন তাঁর সাহাবীরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন। কিন্তু তার আবির্ভাবের পরে সবাই ইমাম মাহদী (আ.) এর কাছে মক্কায় একত্রিত হবেন। ইমাম বলেনঃ তারা একেকজন একেকভাবে আসবেন।
হজরত ঈসা (আ.) হচ্ছেন ইমাম মাহদী (আ.) এর সাহাবীদের মধ্যে একজন। যাকে খোদা নিজের শক্তিতে আকাশে তুলে নিয়েছিলেন অনুরূপভাবে তাঁকে আবার ইমাম মাহদী (আ.) এর কাছে প্রেরণ করবেন।
গুনাহের পরে খোদার কাছে ক্ষমা প্রাপ্তির আশাঃ
যখন ইবলিস খোদার নির্দেশের বিরোধিতা করে তখন সে খোদাকে বলে আমাকে আমার ইবাদতের বিনিময়ে কেয়ামত পর্যন্ত জিবীত থাকার অনুমতি দান কর। খোদা তার জবাবে বলেন যে তোমাকে সময় দিলাম কিন্তু এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত।
সেই নির্ধারিত সময় কখন শেষ হবে?
সেই নির্ধারিত সময় হচ্ছে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের সময়।
অপর এক রেওয়ায়েতে আশা (উমিদ) সম্পর্কে বলা হয়েছে, হজরত ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেনঃ লোকমান হাকিম তাঁর সন্তানকে তার সন্তানকে বলেনঃ হে আমার সন্তান খোদার ন্যায় বিচারকে ভয় কর যদি তুমি কোন ভাল কাজ করে থাক তাহলে খোদার প্রতি আশা রাখ আর যদি কোন খারাপ কাজ করে থাক তাহলেও খোদার প্রতি আশা রাখ।
(৯)
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَ يُقِيمُونَ الصَّلَوةَ وَ ممَِّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُون
যারা অদেখা বিষয়ের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যে রুজি দান করেছি তা থেকে ব্যায় করে। (বাকারা ৩)
মুমিন হচ্ছে তারাই যারা অদেখা বিষয়ের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করে। অনেকেই ইলমে গাইবের অধিকারী হতে পারে, কিন্তু গায়বের উপরে তারা ঈমান রাখে না। আবার অনেকের ইলমে গায়ব নাই কিন্তু তারা গায়বের উপরে ঈমান রাখে। ওহাবীরা ইলমে গায়বকে অস্বীকার করে এমনকি তার প্রতি বিশ্বাসও রাখে না।
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, ইলমে গায়ব বলতে ইমাম মাহদী (আ.) এর গায়বকে বুঝানো হয়েছে।
(১০)
وَ لَقَدْ كَتَبْنَا فىِ الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِىَ الصَّلِحُون
আমি উপদেশের পর যাবুরে লিখে দিয়েছি যে আমার সৎ কর্মপরায়ণ বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে। (আম্বিয়া-১০৫)
আল্লাহ বলেছেনঃ যাবুরের পরে তাওরাত যা বর্তমানে ইয়াহুদি ও খৃষ্টানদের কাছে রয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে পৃথিবী কর্মপরায়ণ বান্দাগণের কাছে অর্পিত হবে।
তাহলে কি পৃথিবী কর্মপরায়ণ বান্দাগণের কাছে পৌচেছে?
আমরা দেখতে পাই যে পৃথিবী কর্মপরায়ণ বান্দাগণের কাছে পৌছায়নি। উক্ত আয়াতটিও ইমাম মাহদী (আ.) এর অন্তরালের সাথে সম্পৃক্ত।
(১১)
يَأَيهَُّا الَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتىِ اللَّهُ بِقَوْمٍ يحُِبهُُّمْ وَ يحُِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلىَ الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلىَ الْكَافِرِينَ يجَُاهِدُونَ فىِ سَبِيلِ اللَّهِ وَ لَا يخََافُونَ لَوْمَةَ لَائمٍ ذَالِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ وَ اللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيم
হে মুমিনগণ তোমাদের মধ্যে থেকে যে স্বীয় ধর্মে ফিরে যাবে অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয় ও নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরষ্কারকারীরর তিরষ্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে যা ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচূর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। (মায়েদা -৫৪)
উক্ত আয়াতের উল্লেখিত ব্যাক্তিরা হচ্ছেন ইমাম মাহদী (আ.) সাহায্যেকারীরা।
(১২)
وَ قَتِلُوهُمْ حَتىَ‏ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَ يَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انتَهَوْاْ فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِير
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায় তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।(আনফাল ৩৯)
উক্ত আয়াতটি কোথায় কোথায় পালিত হয়েছে?
কি পৃথিবীর সমস্ত ফেতনা দূর হয়ে গেছে?
কি পৃথিবীর সমস্ত ফেতনা দূর হয়ে গেছে এবং সারা দুনিয়াতে খোদার দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে?
যখন উক্ত আয়াতটি দুনিয়ার বুকে বাস্তিবায়িত হবে তখন ইমাম মাহদী (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.) এর মতো তার মহত্বের পরিচয় দিবেন।
প্রশ্নঃ কি ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালাতে আগে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন?
উত্তরঃ না বরং তিনি প্রতিরক্ষা করেছিলেন। এজিদি বাহিনীরা প্রথমে যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং ইমাম হুসাইন (আ.) এর যুদ্ধ ছিল একটি প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ। ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাবের পরে যুদ্ধ হবে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ এবং শত্রুপক্ষে লোকেরা আগে যুদ্ধ শুরু করবে এবং ইমাম (আ.) ও ইসলামকে রক্ষার লক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন।
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তারা সিরিয়াকে দখল করে নিবে তারপর তারা ইরাকের দিকে অগ্রসর হবে এবং পরে ইরানের দিকে অগ্রসর হবে তারপর তারা ইমাম মাহদী (আ.) এর খোঁজে মদীনার দিকে অগ্রসর হবে যেন তাকে ধরতে পারে। সেই সময় কোন স্থানই ইমাম (আ.)এর জন্য সুরক্ষিত থাকবে না তিনিও হজরত মূসা (আ.) এর ন্যায় লুকিয়ে থাকবেন। তিনি মক্কায় গেলে শত্রুরা মক্কাতেও হামলা করবে এবং তখন পর্দার অন্তরাল থেকে আবির্ভাবের হুকুম আসবে।
ইমাম হুসাইন (আ.) বলেছিলেনঃ আমরা যুদ্ধ শুরু করবো না যতক্ষণ না শত্রুরা যুদ্ধ শূরু করে তাহলে আর কেউ প্রশ্ন করবে না যে, কেন যুদ্ধ করছেন?
সবগুলো দ্বীন সমূহে সর্বশেষ পরিত্রাতার কথা বলা হয়েছে এবং সবাই প্রায় একই রকমের গুণাবলি সমূহের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছে শিয়া মাযহাব।
(১৩)
وَ لَنَبْلُوَنَّكُم بِشىَ‏ْءٍ مِّنَ الخَْوْفِ وَ الْجُوعِ وَ نَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَ الْأَنفُسِ وَ الثَّمَرَاتِ وَ بَشِّرِ الصَّابرِِين
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল ফসল বিনষ্টের মাধ্যেমে তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। (বাকারা-২৫৫)
উক্ত সবগুলো পরীক্ষায় ইমাম মাহদী (আ.) এর অপেক্ষাকারীদের কাছ থেকে নেয়া হবে, যারা চাই সারা দুনিয়াতে ন্যায় ও বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ইমাম মাহদী (আ.) এর আগমণ। যেন তিনি দুনিয়ার বুকে আবার ফিরে আসেন এবং খোদার বিধান অনুযায়ি দুনিয়াকে পরিচালিত করেন। আসুন আমরা ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব তরান্বিত হওয়ার দোয়া করি। 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন