চোখের পানির মর্মকথা

শোকে দুঃখে চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কথা প্রায়ই আমরা বলি বা শুনি। তবে এ কথার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। শোকের মাত্রা যতই তীব্রতর হোক, কান্না যতই বেশি হোক না কেনো চোখের পানি শুকায় না। হ্যাঁ চোখের পানি শুকায় তবে তা হয় কিছু অসুখের কারণে। আজ চোখের পানি ন

চোখের পানির মর্মকথা
শোকে দুঃখে চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কথা প্রায়ই আমরা বলি বা শুনি। তবে এ কথার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। শোকের মাত্রা যতই তীব্রতর হোক, কান্না যতই বেশি হোক না কেনো চোখের পানি শুকায় না। হ্যাঁ চোখের পানি শুকায় তবে তা হয় কিছু অসুখের কারণে। আজ চোখের পানি নিয়ে আলোচনা করেছেন, বাংলাদেশ ডায়বেটিক এসোসিয়েশন বা বারডেমের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হযরত আলী।

চোখের পানি আসলে আসে রক্ত থেকে, সে কথা বোধহয় আমরা অনেকেই জানিনা। চোখের পানি তিন ভাগে বিভক্ত। অশ্রুতে পানির যে অংশ আছে তা আসে চোখের ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড নামের একটি অংশ থেকে। চোখের এ পানিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা একুয়াস বলেন। তবে এ পানি চোখে আসলে তা সহজেই শুকিয়ে যায়। চোখের পানি যেনো সহজ শুকিয়ে না যায় সে জন্য চোখের পাতা থেকে একটি তৈলাক্ত উপাদান যোগ হয় । অন্যদিকে চোখের গবলেট সেল থেকে মিউকাস নামে একটি উপাদান যোগ হয় এ পানিতে। যা কর্নিয়ার ওপর এমনভাবে ছড়িয়ে থাকে যাতে চোখের পানি সহজেই তার ওপর থাকতে পারে।

চোখে ধুলোবালিসহ নানা ধরণের ময়লা বিভিন্ন সময়ে পড়ে বা পড়তে পারে। এই সব ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার করাই হল চোখের পানির প্রথম কাজ। চোখে ময়লাই কেবল পরে না বরং উড়ে এসে জুড়ে বসার ইচ্ছা নিয়ে আসে নানা রোগ জীবাণু। এ রোগ জীবাণু যেন চোখের ক্ষতি করতে না পারে বা চোখের মধ্য দিয়ে দেহে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য চোখে রয়েছে ল্যাক্টফেরিন নামের জীবাণু নাশক উপাদানসহ আরও জীবাণু নাশক উপাদান।
এ ছাড়া চোখের পানিতে রয়েছে এন্টি বডি। এই এন্টি বডিও জীবাণু প্রতিহত করে। অন্যদিকে চোখের পানি বাতাস থেকে অক্সিজেন নেয় ও তা কর্নিয়াকে সরবরাহ করে। চোখের পানি বের হওয়ার একটি পথ আছে। এই পথ চোখ থেকে নাকে চলে গেছে। চোখের পানির নিষ্কাশন পথকে লেক্রিমাল ড্রেনেজ বলা হয়। তবে চোখের পানির খানিকটা বাতাসে মিলিয়ে যায় আর বাকিটা নাকের এই পথ দিয়ে বের হয়ে যায়।
জীবনে আবেগ ঘন পরিস্থিতির মুখে পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ রকম আবেগ ঘন অব্স্থায় চোখের পানি নির্গমন বাড়ে। একই সাথে কাঁদানে গ্যাসসহ অন্যান্য গ্যাস বা রাসায়নিক পদার্থের কবলে পড়লে তাতে চোখের পানির নির্গমন বাড়ে। চোখে পানি বাড়লে তার নিষ্কাষণও বাড়বে। তাই সে সময় নাক দিয়ে পানি ঝরে। নাকের পানি ও চোখের পানিতে একাকার এরকম একটি কথার সাথে আমরা পরিচিত। এখানে নাকের পানি যে মূলত চোখেরই পানি তা বোধহয় সবাই বুঝতে পেরেছেন। চোখের পানি শোকে দুঃখে বা অতি কান্নায় শুকিয়ে যায় না। সে কথা আলোচনার শুরুতেই একবার বলেছি। চোখের পানি রক্ত হতে তৈরি হয়। আবেগ দেখা দিলে বা অন্য কোন পরিস্থিতে চোখের পানির উৎপাদন দেহ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তারপরও চোখের পানি শুকায়। এই শুকানোর কারণ, চোখের অসুখ। চোখের পানি উৎপাদন করে লেক্রিমাল গ্যান্ড নামের গ্রন্থি তাতে অসুখ হলে বা এ গ্রন্থি ফেলে দিলে চোখের পানি শুকিয়ে যেতে পারে। একইভাবে যদি চোখের পানির তৈলাক্ত উপাদান হ্রাস পায় তবে অশ্রু শুকিয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়া দেহের অনেক রোগের কারণে চোখের পানি শুকিয়ে যেতে পারে। এর মধ্য কিছু আছে চোখের নিজস্ব রোগ আর কিছু আছে দেহের রোগ। কোলাজেন ডিজিজ, আর্থরাইটিস বা থাইরয়েডের অসুখের কারণে চোখের পানি শুকিয়ে যেতে পারে। বয়স হলেও অনেকের চোখের পানি শুকিয়ে যায়। এ ঘটনা বয়সী মহিলা পরুষ সবার ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। চোখের পানি কমে গেলে নানা উপসর্গ দেখা দেবে। এর মধ্যে চোখ লাল হওয়া, চোখে বালি জাতীয় কিছু পড়েছে বলে মনে হওয়া। ক্লান্তি লাগা প্রভৃতি হতে পারে। এই পানি যাদের চোখে কম, তারা পেঁয়াজ কাটতে গেলে চোখে পানি আসবে না। চোখের যে সব উপসর্গের কথা একটু আগে বলা হয়েছে এসিতে গেলে বা বাতাসে গেলে তা বাড়বে। এ ছাড়া এ কারণে চোখে ঘাঁও হতে পারে। ঠিক এ কারণে ভিটামিন এ ঘাটতির থেকে চোখে ঘা দেখা দেয়। এই ঘা শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব ডেকে আনতে পারে। তাই চোখের পানি কমে গেলে তা নিয়ে হেলাফেলা করার কোনো অবকাশ নেই।
সূত্রঃ ইন্টারনেট

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন