হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদাত থেকে শিক্ষা

হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদাত থেকে শিক্ষা

হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদাত থেকে শিক্ষা

খাতামান্নাবীঈন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র, চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতেমা (রা.)-এর পুত্র, হজরত ইমাম হোসেন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে এই পবিত্র মহররম মাসের ১০ তারিখে নির্মমভাবে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। সেদিন প্রকৃত ইসলাম ও সত্যের জন্য হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীর কাছে মাথা নত না করে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। হজরত ইমাম হোসেন (রা.) সেদিন ন্যায় ও সত্যের জন্য চরম আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা অনুকরণীয়। পক্ষান্তরে শহীদে কারবালা হজরত ইমাম হোসেন (রা.) বলে গেছেন- 'আমি শহীদ হলে তোমরা আমার জন্য উহ্! আহ্! করো না, আঁচল ছিঁড়ো না, বরং ধৈর্য ধারণ করে থাকবে।'

কারবালায় হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গ এবং কয়েকজন সাথী সঙ্গীকে বড় নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এ ঘটনা হজরত ওসমান (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনারই একটি ধারাবাহিকতা ছিল। তাকওয়া যখন লোপ পেতে থাকে আর ব্যক্তিগত স্বার্থ যখন সমষ্টিগত স্বার্থের ওপর প্রাধান্য পায়, তখনই এমন হয়।
হজরত ইমাম হাসান ও হোসেন (রা.) সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, 'জান্নাতের যুবকদের সরদার তাঁরা।' তাঁদের উভয়ের জন্য রাসুলুল্লাহ্ (সা.) আল্লাহতায়ালার কাছে এই দোয়া করতেন যে- 'হে আল্লাহ! আমি তাদের ভালোবাসি, তুমিও তাদের ভালোবাস।'
অতএব, যাঁরা রাসুলুল্লাহর দোয়ার কল্যাণ এতটা লাভ করেছেন আর একই সঙ্গে যাঁরা শাহাদাতের পদমর্যাদাও লাভ করেন, এমন মানুষ অবশ্যই আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি অনুসারে জান্নাতে মহান জীবিকা লাভ করবেন এবং তাঁদের হত্যাকারী অবশ্যই আল্লাহর গজব এবং ক্রোধের শিকার হবে। এই মহররম মাসে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে ১০ তারিখে নিষ্ঠুর পাষাণরা রাসুলুল্লাহ্ (সা.)-এর এই প্রিয় দৌহিত্রকে শহীদ করে। যে শাহাদাতের ঘটনা শুনে গা শিউরে ওঠে। এই পাষাণরা এক মুহূর্তের জন্যও চিন্তা করল না যে কাকে আমরা খৰাঘাত করতে যাচ্ছি।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেই সব কুপ্রথা এবং সামাজিক রীতি-নীতিকে মেটাতে এসেছেন যার কারণে মানবিক মূল্যবোধ পদদলিত হয়। তিনি (সা.) কাফেরদের প্রতিও মার্জনা ও ক্ষমার নির্দেশ দিয়েছেন; কিন্তু আল্লাহর এই প্রিয় রাসুলের বড়ই আদরের দৌহিত্র যার জন্য তিনি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন- 'হে আল্লাহ! আমি একে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাস।' এরপর নবী (সা.) এও বলেছেন, যে আমার এই দৌহিত্রকে ভালোবাসে, সে আমাকে ভালোবাসবে, যে আমাকে ভালোবাসে, সে আসলে আল্লাহতায়ালাকে ভালোবাসে, আর আল্লাহকে ভালোবাসার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।'

হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে শিক্ষা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন, তা কিভাবে পদদলিত হয়েছে হজরত হোসেন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনার মাধ্যমে তা ফুটে উঠেছে। হজরত হোসেন (রা.)-এর সৈন্যবাহিনীর ওপর যখন শত্রু নিয়ন্ত্রণ পায়, তখন তিনি ঘোড়াকে সমুদ্রমুখী করে অগ্রসর হওয়ার জন্য ইচ্ছা করেন, তার পরও তাঁকে বাধা দেওয়া হয় এবং তাঁর প্রতি তীর ছোঁড়া এবং সেই তীর হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর চিবুকে বিদ্ধ হয়। বর্ণনাকারী বলেন, 'আমি শাহাদাতের আগে তাঁকে এ কথাই বলতে শুনেছি, আল্লাহ্র কসম, আমার পর আল্লাহর এমন কোনো বান্দাকে তোমরা হত্যা করবে না, যার হত্যার কারণে আল্লাহ তোমাদের প্রতি আরো বেশি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন। হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর জীবনের একটি উদ্দেশ্য ছিল। তিনি কখনো রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের লোভ রাখতেন না, তিনি সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। যে ন্যায়ের জন্য ইমাম হোসেন দণ্ডায়মান হয়েছিলেন অর্থাৎ খিলাফতের নির্বাচনের অধিকার রাষ্ট্রের ও জামায়াতের। কোনো ছেলে পিতাকে উত্তরাধিকার সূত্রে এই অধিকার দিতে পারে না। তিনি বলেন, এই নীতি আজও সেভাবেই পবিত্র, যেভাবে আগে পবিত্র ছিল। হজরত ইমাম হোসেনের শাহাদাত এই অধিকারকে আরো স্পষ্ট করেছে।
সুতরাং ইমাম হোসেনের ত্যাগ, কোরবানি আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রেখে গেছেন। নিজের অধিকার নিজের জীবন বাজি রেখে পৃথিবীতে সত্যের প্রসার করেছেন, সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হজরত ইমাম হোসেন (রা.) সত্য প্রচারের যে আদর্শ রেখে গেছেন তা সব সময় আমাদের আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে। হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণ ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। সত্য, ন্যায় এবং নবুয়তের পদ্ধতিতে আল্লাহর জমিনে সত্যিকারের ইসলামী খিলাফত পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথিরা যে ত্যাগ ও কোরবানি স্বীকার করেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত তা আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। সত্যের পথে এবং অসত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের তা জোগাবে হিম্মত ও প্রেরণা। শুধু একটি দিন তাঁকে স্মরণ করার মাধ্যমে কোনো লাভ নেই। বরং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার বিষয়।
লেখক : কলামিস্ট

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন