কোরআনের দৃষ্টিতে ক্রন্দন জায়েয কিনা?

কোরআনের দৃষ্টিতে ক্রন্দন জায়েয কিনা?

কোরআনের দৃষ্টিতে ক্রন্দন জায়েয কিনা?
وَ تَوَلَّى عَنْهُمْ وَ قالَ يا أَسَفى‏ عَلى‏ يُوسُفَ وَ ابْيَضَّتْ عَيْناهُ مِنَ الْحُزْنِ فَهُوَ كَظيم
এবং তাদের দিক থেকে তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ হায় আফসোস ইউসুফের জন্যে। এবং দুঃখে তাঁর চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গেল। এবং অসহনীয় মনস্তাপে তিনি ছিলেন ক্লিষ্ট।
সূরা ইউসুফের তাফসীরে আমরা দেখতে পাই যে, হযরত ইয়াকুব (আঃ) হযরত ইউসুফ (আঃ) এর জন্য এত পরিমাণ ক্রন্দন করেন যে, তার চোখের মণি সাদা হয়ে যায়। ইউসুফ আয়াত নং ৮৪
যদি হযরত ইয়াকুব (আঃ) হযরত ইউসুফের ভালবাসায় ক্রন্দনের কারণে অন্ধ হয়ে যায় এবং তার পরেও তিনি নিজেকে ক্রন্দন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন না। তাহলে যিনি সকল নবীর পরিশ্রমকে নিজের ও তার আহলে বাইতের (আঃ)জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করেছেন তাহলে তার জন্য ক্রন্দন করা কি কোন গুনাহের কাজ? অবশ্যই না।
হযরত ইউসুফের পোষাকের ফযিলত:
প্রত্যেকটি নবীর জিনীষ সমূহে একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে যেমন:হযরত ইউসুফ (আঃ) তার ভাইদেরকে তার পোষাক দান করে বলেন: আমার এই পোষাকটির পরশে আমার বাবার চোখ ভাল হয়ে যাবে।
অনুরূপভাবে ইমাম হুসাইন (আঃ) ছিলেন রাসুল (সাঃ)এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র যার সম্পর্কে একাধিক হাদীস তিনি বণনা করেছেন। তিনি নিজের নানার দ্বীন রক্ষার্থে কারবালার মরুপ্রান্তরে নিজের রক্ত দান করেছেন তার পরিবারের রক্ত দান করেছেন নিজের পবিত্র কপাল মোবারককে কারবালার মাটিতে সিজদাতে রেখেছিলেন। অবশ্যই সেই মাটির একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে। এখন যদি কেউ সেই মাটির প্রতি সম্মান প্রদশন করে তাহলে অবশ্যই সে সেই পবিত্র স্থানের প্রভাব থেকে উপকৃত হবে।
হযরত ইউসুফের (আঃ)বীপদ ও ইমাম হুসাইনের (আঃ) বীপদ
قَالُواْ تَاللَّهِ تَفْتَؤُاْ تَذْكُرُ يُوسُفَ حَتىَ‏ تَكُونَ حَرَضًا أَوْ تَكُونَ مِنَ الْهَلِكِينَ
তারা বলতে লাগলঃ আল্লাহর কসম আপনি তো ইউসুফের স্মরণ থেকে নিবৃত হবেন না, যে পর্যন্ত মরণপন্ন না হয়ে যান কিংবা মৃতবরণ না করেন।
قَالَ إِنَّمَا أَشْكُواْ بَثىّ‏ِ وَ حُزْنىِ إِلىَ اللَّهِ وَ أَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُون
তিনি বললেনঃ আমি তো আমার দুঃখ ও অস্থিরতা আল্লাহর সমীপেই নিবেদন করছি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি যা জানি,তা তোমরা জান না।
ইয়াকুব (আ.)জানতেন যে তার ইউসুফ (আ.)বেচে আছে কিন্তু তার পরেও তিনি তার বিরহের কারণে ক্রন্দন করতেন এবং তিনি ফিরে আসবেন।
আর যদি কেউ ইউসুফের (আ.)জন্য ক্রন্দন করে তাহলে এটা কোন আশ্চয হবার বিষয় না  কেননা এটা হচ্ছে নবীদের সুন্নাত।
হযরত ইউসুফ (আ.)কি করেছিলেন এবং হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) কি করেছিলেন। আমরা দেখতে পাই যে, হযরত ইউসুফের (আ.) পোষাকের ফযিলত এত বেশী ছিল যে যখন তা ইয়াকুব (আঃ) পাই তার পরশে তার চোখ ভাল হয়ে যায়।এমন কোন মুসলমান নেই যে,এই ঘটনাটিকে জানেনা বা কবুল করে না অবশ্যই রাসুল (সাঃ) ও তার আহলে বাইতের (আঃ)মর্যাদা হযরত ইয়াকুবের (আ.)সেই জামার চেয়ে অনেক বেশী।
কি রাসুল (সাঃ) যে মাটিতে তার পবিত্র কদম মোবারক রেখেছেন এবং তা থেকে তাবাররুক গ্রহণ করেছেন যে মাটিতে ইমাম হুসাইন (আঃ) তার পবিত্র মাটিতে নিজের মাথাকে রেখেছেন কি সেই মাটির কোনই মূল্য না? এটা কি ঠিক,যে প্রভাব এবং ফযিলত হযরত ইয়াকুবের (আ.)জামাতে থাকবে সেই ফযিলত বা প্রভাব কারবালার মাটিতে থাকবে না।
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে,যখন রাসুল (সাঃ) কে খোদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তিনি বলেন:
َ عِنْدَ الْمُنْكَسِرَةِ قُلُوبُهُم‏
ইমাম হুসাইন (আঃ) যিনি খোদার পথে তার সবকিছু উৎসগ করেছিলেন এখন যদি কেউ হুসাইনের (আ.) পথ অনুসরণ করে বা ক্রন্দনের মাধ্যমে তার কথা স্মরণ করে তাহলে খোদাও যা হুসাইন(আঃ) খোদার কাছ থেকে পেয়েছিলেন তার অনুসারীদেরকেও দান করা হবে।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে
يا على انّك قسيم‏ النار و الجنّة
হে আলী (আ.) তুমি হলে জাহান্নাম ও জান্নাতের বন্টনকারী (সাহীফায়ে ইমাম রেযা,পৃষ্ঠা ১২৫)
যদি ইমাম আলী (আঃ)জাহান্নাম ও জান্নাতের বন্টনকারী হয় তাহলে তিনি কাকে জান্নাত দান করবেন এবং কাকে জাহান্নাম দান করবেন। তিনি তাকেই জান্নাত দান করবেন যারা রাসুলের বর্ণিত কিস্তিতে আরোহন করবে।
যেহেতু আলী (আঃ) জান্নাত ও জাহান্নাম বন্টন করবেন সেহেতু তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য জান্নাত ও জাহান্নাম বন্টন করবেন না বরং তিনি সমস্ত মানব জাতীর মাঝে জান্নাত ও জাহান্নাম বন্টন করবেন। এমনকি ঐ সমস্ত ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরও জান্নাত ও জাহান্নাম বন্টন করবেন যারা রাসুলের আগমনের পূর্বেই মারা গেছে। তাদেরকেও তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম বন্টন করবেন।
আমরা রেওয়ায়েতে আরো দেখতে পাই যে, কেন রাসুল (সাঃ) কে বলা হয়েছে আবুল কাসিম?
আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর ছত্র ছায়ায় লালিত পালিত হয়েছেন এবং রাসুল (সাঃ)তার ক্ষেত্রে পিতার ভূমিকা পালন করেছেন।  যিনি প্রথম থেকেই কোরআনের আয়াতকে নাযিল হতে দেখেছেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত আলীর (আঃ)জন্য পিতার ভূমিকা পালন করেন। হযরত আলীর (আঃ) এর উপাধি সমূহের মধ্যে একটি উপাধি হচ্ছে তিনি হচ্ছে জাহান্নাম ও জান্নাতের বন্টনকারী আর এ কারণে হযরত রাসুল (সাঃ) কে আবুল কাসেম বলা হয়।
আমরা বহু আম্বিয়াদের (আঃ)সীরাতে দেখেছি যে তাদের কাছে যখন ইমাম হুসাইনের নাম নেয়া হতো তখন তারা ক্রন্দন করতেন এবং তার হত্যাকারীদের প্রতি অভিসম্পাত প্রেরণ করতেন যেমন হযরত আদম (আঃ)যখন বেহেস্ত থেকে আসেন এবং বহু কষ্ট করেন এ সম্পর্কে নিন্মে উল্লেখিত আয়াত সম্পর্কে তাফসীরে দুররুল ইয়ামিনে বর্ণিত হয়েছে যে,
فَتَلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِماتٍ فَتابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحيم
অতঃপর হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।(সূরা বাকার আয়াত নং ৩৭)
জিব্রাইল (আঃ) হযরত আদমের (আঃ)কাছে আসেন এবং বলেন  যদি আপনি আপনার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত তাহলে এই নামগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার পূর্বের স্থানে ফিরে যেতে পারবেন। তখন তিনি পান্জাতনের নামের ওসিলা দিয়ে দোয়া করতে বললেন যারা ছিলেন খোদার প্রথম সৃষ্টি এবং নিকটতম ব্যাক্তিত্ব। হযরত আদম (আঃ) তাদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন হে আদম এভাবে বলুন
ُ قُلْ يَا حَمِيدُ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ يَا عَالِي بِحَقِّ عَلِيٍّ يَا فَاطِرُ بِحَقِّ فَاطِمَةَ يَا مُحْسِنُ‏ بِحَقِ‏ الْحَسَنِ وَ الْحُسَيْنِ وَ مِنْكَ الْإِحْسَان‏(বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৪, পৃষ্ঠা ২৪৫)
যখন হযরত আদম (আঃ)সব নামগুলোর ওসিলা করে খোদার কাছে দোয়া চাইতে লাগলেন যখন ইমাম হুসাইনের নাম আসে তখন তিনি জিব্রাইল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন যে,হে জিব্রাইল এই নামে এমনকি আছে যে আমার অন্তর ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। তখন জিব্রাইল (আঃ) বলেন এর একটি ঘটনা রয়েছে।
মারহুম সুসতারী তার গ্রন্থে লিখেছেন যা কিছু কাবালার সাথে সম্পৃক্ত তার সাথে দুঃখ বেদনার ছাপ পরিলক্ষিত হয় যেমন:মহরম,আশুরা,যুলজানাহ, ফুরাত,নেইনাওয়া।
এই বলে হযরত জিব্রাইল (আঃ) তারপরে বলেন:হে আদম (আঃ) যদি আপনি জান্নাতের বিরহে ক্রন্দন করছেন তাহলে সেই দিন হযরত যায়নাব কি করবে? তিনি হুসাইনের (আঃ) বিরহে ক্রন্দন করবেন। হুসাইন(আঃ) যিনি হচ্ছেন বেহেস্তের যুবকদের সর্দার যাদের কারণে জান্নাতকে খোদা তৈরী করেছেন। এই হুর গেলেমান যাদের অভিযোগ হচ্ছে কেন তাদেরকে হুসাইনের (আঃ)আযাদাররা লক্ষ্য করেনা কেনইবা লক্ষ্য করবে কারণ যার কারণে এই জান্নাত তৈরী করা সেই হুসাইনকে (আঃ)তারা পেয়ে গেছে। কিন্তু সেই হুসাইনকে (আঃ)জালিমেরা শত কষ্ট দানের মাধ্যমে শহীদ করেছেন। এমনকি এক বৃদ্ধ ছিল যার কাছে কিছুই চিল না সে তার হাতের লাঠির মাধ্যমে ইমাম হুসাইনের (আঃ) শরীরে আঘাত করে। তখন সবাই ইমাম হুসাইনকে (আঃ) নিয়ে ঠাট্টা করছিল এবং কষ্ট দিচ্ছিল। হাজারেরও বেশী তার শরীরে আঘাত করা হয়েছিল। তার কপাল ফেটে যায় তিনি চাচ্ছিলেন তার কাপালকে পরিষ্কার করতে তখন তার শরীরে আবার তীর মারা হয়।
তাই আমরা দেখতে পাই যে,ইমাম সাজ্জাদ (আঃ) যখন কোন কসাইকে দেখতেন যে সে কোন পমুকে জবাই করতে যাচ্ছে তকন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করতেন সে কসাই তুমি কি এই পশুটিকে পানি পান করিয়েছ? তখন সে তার প্রতিউত্তরে বলে যে হে ইমাম (আঃ) আমরা কখনও পশুকে পানি পান না করিয়ে জবাই করি না । তখন ইমাম (আঃ) বলেন হায় খোদা তোমার বান্দরা আমার বাবাকে তৃষ্ণনাত অবস্থায় শহীদ করেছিল।
কারবালার ময়দানে প্রায় ২০ হাজার এজিদি সৈন্য এসেছিল যে তারা তাদের বাড়ির জন্য উপহার নিয়ে যাবে। চিন্তার বিষয় হচ্ছে যদি ২০ হাজার এজিদি সৈন্য তাদের বাড়ির জন্য উপহার নিযে যাওয়ার জন্য আনে তাহলে হুসাইনের খিমাতে আর কি  অবশিষ্ট থাকবে। তাই ইমাম হুসাইন (আঃ) নির্দেশ দেন যে, সমস্ত মাল সম্পদ সমূহ একদিকে রেখে দিতে যেন যদি এজিদি সৈন্যরা আসে তাহলে যেন আহলে বাইতে রাসুলের (আঃ)  উপরে মাল সম্পদ লুন্ঠনের জন্য হামলা না করে। কিন্তু তার পরেও আমরা দেখতে পাই যে,ইমাম হুসাইন (আঃ) এর শাহাদতের পরে এজিদি সৈন্য বাহিনী আহলে বাইতদের (আঃ)মাথার চাদর কেড়ে নেয় ছোট সকিনার কানের দুল ছিড়ে নেয়, তাবুতে আগুন লাগিয়ে দেয়, ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে হত্যা করে। কিন্তু তার পরেও তাদের অন্তর পরিতৃপ্ত হয়নি তারা আহলে বাইতদেরকে (আঃ)দড়িতে বেধে বিভিন্ন বাজারে বাজারে ঘুরিয়েছে এবং কারবালা  থেকে কুফা, কুফা থেকে শামে এজিদের দরবারে নিয়ে গেছে। সূত্রঃ ইন্টারনেট
 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন