যিয়ারত -এ আশুরা'র রীতিনীতি

হযরত ইমাম সাদেক (আ.) হতে বর্ণিত: যখনই ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারত করার ইচ্ছা করবে নিজেকে (মাহযুন) ব্যথিত, (গামনাক) শোকাবহ, মাথার চুল এলোমেলো, ধূলিময় বা ধুলোমাখা, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থা করে নাও, কেননা তিনি এরূপ অবস্থায়ই শহীদ হন।

যিয়ারত -এ আশুরা'র রীতিনীতি
হযরত ইমাম সাদেক (আ.) হতে বর্ণিত: যখনই ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারত করার ইচ্ছা করবে নিজেকে (মাহযুন) ব্যথিত, (গামনাক) শোকাবহ, মাথার চুল এলোমেলো, ধূলিময় বা ধুলোমাখা, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থা করে নাও, কেননা তিনি এরূপ অবস্থায়ই শহীদ হন।  

ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারত:
হযরত ইমাম সাদেক (আ.) হতে বর্ণিত: যখনই ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারত করার ইচ্ছা করবে নিজেকে (মাহযুন) ব্যথিত, (গামনাক) শোকাবহ, মাথার চুল এলোমেলো, ধূলিময় বা ধুলোমাখা, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থা করে নাও, কেননা তিনি এরূপ অবস্থায়ই শহীদ হন। অতঃপর তোমরা নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা (দোয়া) চাইতে পারো। আর ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারত করতে গেলে সাধারণ খাওয়া পরিবেষণ করবে। কখনই দস্তরখানে বিরিয়ানি (ভুনা গোস্ত) ও হালুয়া জাতীয় সুন্দর খাওয়া রাখবে না। বরং রুটি লবণ অর্থাত দুধ বা দই রাখবে।

ইমাম সাদেক (আ.) হতে অপর এক বিশ্বস্ত হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে: তিনি মোফাজ্জল বিন ওমরকে বলেন: "ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারত কর কিন্তু তার চেয়ে ভাল যিয়ারত না করা; আর যিয়ারত কর না কিন্তু তার চেয়ে উত্তম হচ্ছে তাঁর যিয়ারত করা"। মোফাজ্জল বললেন: (খুব কঠিন কথা) আপনিতো আমার পিঠ (এর হাড়) ভেঙ্গে ফেলেছেন। ইমাম (আ.) বললেন: খোদার কসম, তোমরা যখন নিজেদের পিতা -মাতার কবর যিয়ারত করতে যাও তোমাদের অবস্থা শোকার্ত ও দুঃখিত থাকে। কিন্তু যখন ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারতে যাও সাথে দস্তরখান (বিভিন্ন ধরণের খাওয়া) নিয়ে যাও। বরং তোমাদেরকে এলোমেলো চুলে ধুলোমাখা অবস্থায় যাওয়া উচিত।

শেখ কুলাইনি বর্ণনা করেন: ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদাতের পর তাঁর (কালবিয়্যা) স্ত্রী ইমাম হুসাইনের (আ.) জন্য মাতমের ব্যবস্থা করেন এবং খুব কান্না করলেন তাঁর সাথে অন্যান্য নারীরা ও খেদমতকার'রাও অনেক ক্রন্দন করলেন যে, তাঁদের অশ্রু শুকিয়ে গেছে আর অশ্রু ঝরছিল না। তখন কোথাও থেকে সেই সম্মানিত নারীর জন্য উপহারস্বরূপ "জুনি" অর্থাত মোরগ বিশিষ্ট খাওয়া পাঠানো হল যা খেয়ে ইমাম হুসাইন (আ.) এর উপর কান্নার জন্য কিছুটা শক্তি অর্জন হয়। যখনই সেই মহীয়সী নারী তা দেখলেন জিজ্ঞেস করলেন এটা কি ? বলা হল উপহারস্বরূপ অমুক লোক আপনার জন্য পাঠিয়েছে যাতে করে তার মাধ্যমে ইমাম হুসাইনের (আ.) জন্য মাতম করতে আপনাকে সাহায্য করে। তিনি বললেন: "لَسنا فِی عُرسٍ فَما نَصنَعُ بِها" আমরাতো বিয়ের অনুষ্ঠানে আসিনি, এ খাওয়া দিয়ে আমরা কি করবো ? তখন তার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।

মশহুর যিয়ারতে আশুরা
যিয়ারতে আশুরা মারুফা (মশহুর) যা কাছে থেকে এবং দূর হতে ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য পড়া হয়ে থাকে যা নিম্নে বর্ণনা করা হল:
শেখ আবু জাফর তুসি তার "মিসবাহ" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন:
মোহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন বুযাইগ, সালেহ বিন উকবা হতে যিনি তার বাবা থেকে এবং তার বাবা হযরত ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আ.) হতে বর্ণনা করেন: যে ব্যক্তি দশ'ই মহরম হুসাইন বিন আলী (আ.) এর যিয়ারত করতে ইচ্ছুক যাতে তাঁর কবরে ক্রন্দনাবস্থায় যেতে পারে এবং রোজ হাশরের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে সাক্ষাত করতে পারে যার সওয়াব দু'হাজার হজ্ব, দু'হাজার ওমরা ও দু'হাজার জেহাদের, যার সওয়াব আল্লাহ'র রাসুল (সা.) ও তাঁর আহলে বাইত (আ.) এর সাথে হজ্ব, ওমরা ও জেহাদ করার মত। রাউয়ি (বর্ণনাকারী) বলে: আমি ইমামকে (আ.) বললাম আমি আপনার উপর উতসর্গ হই, তাদের সওয়াব কতটুকু যারা কারবালা থেকে দুরে অন্যান্য শহরে থাকে এবং এই দিনে (দশ'ই মহরম) ইমাম হুসাইন (আ.) এর কবরে যাওয়া তাদের জন্য সম্ভবপর নয়। ইমাম (আ.) বললেন: যদি এমন হয় তাহলে মরুভূমির দিকে বেড় হয়ে যাক অথবা নিজের বাড়ির ছাদে উচ্চ স্থানে চলে যাক এবং ইমাম হুসাইন (আ.) এর কবরের দিকে ইশারা করুক সালাম দিয়ে এবং তাঁর হত্যাকারীদের প্রতি লানত পড়ুক। অতঃপর দু'রাকাত নামায আদায় করুক। আর এসব কাজ দিনের প্রথম দিকে করতে হবে অর্থাত সূর্য যাওয়ালের পূর্বে। তারপর ইমাম হুসাইনের (আ.) উপর ক্রন্দন করুক এবং ঘরের লোকজনদেরকে ইমামের (আ.) উপর কান্না কাটা করতে বলবে। তারপর নিজেদের ঘরে ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য আযাদারির ব্যবস্থা করবে এবং শোক প্রকাশ করবে আর ইমামের (আ.) মুসিবতের জন্য একজন অপর জনকে তাজিয়াত বা সমবেদনা জানাবে। আর পরস্পরকে সমবেদনা জানানোর সময় বলবে:

اَعظَمَ اللَّهُ اُجُورَنَا بِمُصَابِنَا بِالحُسَینِ عَلَیهِ السَّلَام وَ جَعَلَنَا وَ اِیَّاکُم مِنَ الطَُالِبِینَ بِثَارِهِ مَعَ وَلِیِّهِ الإِمَامِ المَهدِی مِن آلِ مُحَمَّدٍ عَلَیهِمُ السَّلَام
 

"ইমাম হুসাইন (আ.) এর মুসিবতের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের আজ্‌র ও প্রতিদানকে সমুন্নত করুন এবং আমাদেরকে ও তোমাদেরকে আলে মোহাম্মদ (সা.) থেকে ইমাম হুসাইন (আ.) এর ওয়ালি ইমাম মাহদী (আ.ফা) এর সাথে তাঁর রক্তের দাবীদার করে দিন"।
 
মূল: মাফাতিহুল জিনান, শেখ আব্বাস কুম্মি।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন