হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফত ও তার প্রশাসনিক পদ্ধতি

হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফত ও তার প্রশাসনিক পদ্ধতি

হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফত ও তার প্রশাসনিক পদ্ধতি
হিজরী ৩৫ সনের শেষ ভাগে হজরত আলী (আ.)-এর খেলাফত কাল শুরু হয়। প্রায় ৪ বছর ৫ মাস পর্যন্ত এই খেলাফত স্থায়ী ছিল। হযরত আলী (আ.) খেলাফত পরিচালনার ব্যাপারে হযরত রাসুল (সা.)-এর নীতির অনুসরণ করেন।
তাঁর পূর্ববর্তী খলিফাদের যুগে যেসব (ইসলামী নীতি মালার) পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল, তিনি সেগুলোকে পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।খেলাফত
প্রশাসনে নিযুক্ত অযোগ্য লোকদের তিনি দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেন।  
তাঁর এসব পদক্ষেপে প্রকৃতপক্ষে এক বৈপ−বিক আন্দেলন ছিল, যা পরবর্তিতে প্রচুর সমস্যারও সৃষ্টি করেছে। হযরত ইমাম আলী (আ.) খেলাফতের প্রথম দিনে জনগণের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়ে ছিলেন সেখানে তিনি বলেনঃ হে জনগণ! জেনে রেখো নবুয়াতের যুগে যে সমস্যায় তোমরা ভুগেছিলে আজ আবার সেই সমস্যাতেই জড়িয়ে পড়লে। তোমাদের মধ্যে একটা ব্যাপক পরির্বতন ঘটবে। যে সকল মহৎ ব্যক্তিরা এতদিন পিছিয়ে ছিলেন তাঁরা এখন সামনের সারিতে চলে আসবেন। একইভাবে যেসব অযোগ্য লোক এতদিন সামনের সারিতে অবস্থান নিয়েছিল আজ তারা পিছনে চলে যাবে। (সত্য ও মিথ্যা বিদ্যমান এবং এতদুভয়ের প্রত্যেকেরই অনুসারীও রয়েছে। তবে সবারই উচিত সত্যকে অনুসরণ করা) মিথ্যার পরিমাণ যদি অধিকও হয়, সেটা এমন নতুন কিছু নয়। সত্যের পরিমাণ যদি কমও হয়, হোক না! অনেক সময় কমওতো সবার চেয়ে অগ্রগামী হয়ে থাকে। আর উন্নতির আশাও এতে রয়েছে। তবে এমনটি খুব কমই দেখা যায় যে, যা একবার মানুষের হাতছাড়া হয়ে গেছে তা পুনরায় তার কাছে ফিরে এসেছে”।
এ ভাবে হযরত আলী (আ.) তাঁর বৈপ−বিক প্রশাসনকে অব্যাহত রাখেন। কিন্তু বৈপ−বিক আন্দোলন সমূহের ¯^vfvweK পরিণতি হচ্ছে, এই আন্দোলনের ফলে যাদের ¯^v_© বিঘ্নিত হয়, তারা এ ধারার বিরোধী হয়ে ওঠে। আমরা দেখতে পাই হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের বৈপ−বিক নীতি বহু ¯^v‡_©‡š^lx মহলকে আঘাত করেছিল।তাই শুরুতেই সারা দেশের যত্রতত্র থেকে আলী (আ.)-এর খেলাফতের বিরোধী সূর বেজে ওঠে। বিরোধীরা তৃতীয় খলিফার রক্তের প্রতিশোধের ষড়যন্ত্র মুলক শ্লোগানের ধুঁয়ো তুলে বেশ কিছু রক্তাক্ত যুদ্ধের অবতারণা করে। এ জাতীয় গৃহযুদ্ধ হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সমগ্র খেলাফতকালব্যাপী অব্যাহত ছিল। শীয়াদের দৃষ্টিতে ব্যক্তিগত ¯^v_© উদ্ধার ছাড়া এসব যুদ্ধের সূচনাকারীদের অন্য কোন উদ্দেশ্যই ছিল না।
তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের শ্লোগান ছিল সম্পূর্ণরূপে গণপ্রতারণামূলক একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। এমনকি কোন ভুল বোঝা বুঝির এখানে অবকাশ নেই।
হযরত আলী (আ.)-এর যুগে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ যা জংগে জামাল নামে পরিচিত, তা শুধুমাত্র শ্রেণী বৈষম্যগত মত পার্থক্যের জঞ্জাল বৈ আর কিছুই ছিল না। ঐ মতর্পাথক্য দ্বিতীয় খলিফার দ্বারা বাইতুল মালের অর্থ বন্টনের শ্রেণীগত বৈষম্য সৃষ্টির ফলে উদ্ভত হয়েছিল। হযরত ইমাম আলী (আ.) খলিফা হওয়ার পর ঐ সমস্যার সমাধান ঘটান এবং তিনি জনগণের মধ্যে সমতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে বাইতুল মালের’ অর্থের সুষম বন্টন করেন।  
আর এটাই ছিল হযরত রাসুল (সা.)-এর জীবনার্দশ। কিন্তু হযরত আলী (আ.)-এর এ পদক্ষেপ তালহা ও যুবাইরকে অত্যন্ত †µvavwš^Z করেছিল।যার ফলে তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীতা করতে শুরু করেন। তারা যিয়ারতের নাম করে মদীনা ছেড়ে মক্কায় গেলেন।উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা তখন মক্কায় অবস্থান করছিলেন।তারা এটা ভাল করেই জানতেন যে, ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে উম্মুল মুমেনীন আয়েশার সর্ম্পকের টানা পোড়ন চলছে। এ অবস্থাকে তারা আপন ¯^v‡_© কাজে লাগান এবং নবীপত্মী আয়েশাকে খুব সহজেই হযরত আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে নিজপক্ষে টেনে নিতে সমর্থ হন। অতঃপর তৃতীয় খলিফার হত্যার বিচারের দাবীর শ্লোগানে আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবশেষে জংগে জামাল’ নামক এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা করেন।  
অথচ এই প্রসিদ্ধ সাহাবীদ্বয় তাল্‌হা ও যুবায়ের বিপ−বীদের দ্বারা ওসমানের বাড়ী ঘেরাওকালীন মুহুর্তে মদীনাতেই ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় খলিফা ওসমানকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষার ব্যাপারে এতটুকু সাহায্যও তারা করেননি।
 এমনকি খলিফা ওসমান নিহত হওয়ার পর মুহাজিরদের পক্ষ থেকে সর্ব প্রথম তিনিই হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর হাতে বাইয়াত’ গ্রহণ করেন।  
ওদিকে নবীপত্নী আয়েশাও ¯^qs ওসমানের বিরোধীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি ওসমানকে হত্যার ব্যাপারে সব সময়ই বিরোধীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন। নবীপত্নী আয়েশা ওসমানের নিহত হওয়ার সংবাদ শোনা মাত্রই তার প্রতি অপমান সূচক শব্দ উচ্চারণ করেন এবং আনন্দ প্রকাশ করেন। তৃতীয় খলিফাকে হত্যার ব্যাপারে মূলত রাসুল (সা.)-এর সাহাবীরাই জড়িত ছিলেন। তারা মদীনার বাইরে বিভিন্ন স্থানে চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে জনগণকে খলিফার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন।
হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের যুগে দ্বিতীয় যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল, তা’হচ্ছে সিফফিনের যুদ্ধ’। দীর্ঘ দেড়টি বছর এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। এ যুদ্ধটি ছিল কেন্দ্রীয় খেলাফত প্রসাশন দখলের জন্যে মুয়াবিয়ার চরম লালসার ফসল। তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের ছলনাময়ী শ্লোগানের ছত্রছায়ায় তিনি এ যুদ্ধের অবতারণা করেন। এ যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষেরও বেশী লোক অন্যায়ভাবে নিহত হন। এ যুদ্ধে মুয়াবিয়াই ছিলেন প্রথম আক্রমনকারী। এটা কোন আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধ ছিল না। বরং এটা ছিল মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে একটি আক্রমনাত্মক যুদ্ধ। কারণ,প্রতিশোধ গ্রহণমূলক যুদ্ধ কখনই আত্মরক্ষামূলক হতে পারে না। এ যুদ্ধের শ্লোগান ছিল তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ। অথচ তৃতীয় খলিফা তার জীবনের শেষ দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক অরাজকতা ও বিশৃংখলা দমনে মুয়াবিয়ার কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠান। মুয়াবিয়াও তার সেনাবাহিনীসহ সিরিয়া থেকে মদিনার দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু মুয়াবিয়া উদ্দেশ্যমুলক ভাবে পথিমধ্যে এত বেশী দেরী করেন যে, ততদিনে তৃতীয় খলিফা বিপ−বীদের হাতে নিহত হন। এ সংবাদ পাওয়া মাত্রই মুয়াবিয়া তার বাহিনী সহ সিরিয়ায় ফিরে যান। এর পর সিরিয়ায় ফিরে গিয়ে তিনি তৃতীয় খলিফার হত্যার বিচারের দাবীতে বিদ্রোহ শুরু করেন।
সিফ্‌ফিন’ যুদ্ধের পর নাহরাওয়ান’ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.)-এর বেশ কিছু সাহাবীও এ যুদ্ধে জড়িত ছিলেন। একদল লোক যারা সিফফিনের’ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল, তারাই পরবর্তীতে আবার মুয়াবিয়ার প্ররোচণায় হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তারা তদানিন্তন ইসলামী খেলাফত বা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকে। তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারী বা সমর্থকদের সন্ধান পাওয়া মাত্রই তাদেরকে হত্যা করত। এমন কি গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিরে গর্ভস্থ সন্তানকে বের করে তাদের মাথা কেটে হত্যা করত।
সিফফিন যুদ্ধের পর মুয়াবিয়ার প্ররোচণায় সংঘটিত এ-বিদ্রোহও হযরত ইমাম আলী (আ.) দমন করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই একদিন কুফা শহরের এক মসজিদে নামাযরত অবস্থায় ঐসব খাওয়ারেজদের’ হাতেই তিনি শাহাদৎ বরণ করেন। (সূত্র : ইন্টারনেট)
 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন