কারবালায় গড়ে ওঠা পৃথক দুটি শিবির

কারবালায় গড়ে ওঠা পৃথক দুটি শিবির

কারবালায় গড়ে ওঠা পৃথক দুটি শিবির
একটিতে আনন্দ-উল্লাস আর অপরটিতে ইবাদাত-বন্দেগিপূর্ণ এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ ৷ এভাবে দিন যাচ্ছে আর ইমামের শত্রু শিবিরে বিভিন্নরকম ঘটনা ঘটছে ৷ ইবনে সাআদের দল যেন অপেক্ষা করতে পারছে না ৷ তারা যতো দ্রুত সম্ভব ঘটনা ঘটিয়ে পুরস্কার গ্রহণের চিন্তায় ব্যস্ত ৷ কিন্তু শত্রুপক্ষীয় মহাবীর হুর ইবনে ইয়াযিদ রিয়াহি হঠাত্‍ অদ্ভুত এক আচরণ শুরু করে দেয় ৷ সে অবিশ্বাস্যরকমভাবে একবার এদিকে আবার ওদিকে তাকাতে থাকে ৷ ভীষণ এক অস্থিরতা তাকে পেয়ে বসেছে ৷ যেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা ভাবছে সে কিংবা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে ৷ হ্যাঁ, একধরনের সন্দেহের দোলাচলে দুলছে সে ৷ একদিকে ইমাম হোসাইন ( আ ) জনগণকে মানবিক মূল্যবোধ রক্ষায় সত্য-ন্যায়ের পতাকাতলে হাতছানি দিয়ে ডাকছে , অপরদিকে তাঁকে হত্যা করার মধ্যে রয়েছে পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ ৷ কি করবে না করবে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে হঠাত্‍ সে চলে যায় কুফার সেনাপতি ওমর ইবনে সাআদের কাছে ৷ হুর তাকে জিজ্ঞেস করে-হে ওমর ! তুমি কি সত্যিই হোসাইনের সাথে যুদ্ধ করবে ? ওমর জবাব দেয়-হ্যাঁ,খোদার কসম নৃশংসতম যুদ্ধ করবো ৷ হুর শিহরিত হলো ৷ তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল ৷ তার পাশের একজন বলে উঠলো-এই হুর!তোর কী হয়েছে? তোকে কখনো এমন পেরেশান হতে দেখি নি! তোকে তো আমি সবসময় বীর-মহাবীর হিসেবেই দেখেছি ৷ হুর বললো-দোযখ এবং বেহেশতের মধ্য থেকে কোনো একটিকে নির্বাচন করা উচিত ৷ সেই নির্বাচনের মোক্ষম সময় এখন ৷ এই বলেই চিত্কা্র করে উঠলো সে-খোদার শপথ ! আমাকে টুকরো টুকরো করে ফেললেও বেহেশত ছাড়া অন্য কিছুই আমি বেছে নেবো না ৷
কিছুক্ষণ পর কুফার এই মহাবীর কাঁপতে কাঁপতে ধীরে ধীরে ইমাম হোসাইন ( আ ) এর শিবিরের দিকে যায় ৷ অশ্রুসজল চোখে নম্রকণ্ঠে বলে-হে খোদা ! তোমার পথে ফিরে এসেছি ৷ আশা করি তুমি আমার তওবা কবুল করবে ৷ হে খোদা ! তোমার বন্ধু এবং রাসূলের সন্তানের অন্তরকে আমি সন্ত্রস্ত করেছি, আমার এই মহাপাপ তুমি ক্ষমা করে দিও ৷ এরপর ইমামের সামনে গিয়ে বললো-'হে রাসূলে খোদার সন্তান ! তোমার জন্যে আমার জীবন উত্স৷র্গ হোক ৷ আমি হুর , আমি সেই হুর যে তোমার পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল ৷ খোদার কসম , বিশ্বাস করতে পারি নি তোমার সাথে এরকম আচরণ করা হবে ৷ আমি এখন আমার কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত ৷ সেইসাথে আমি এখন তোমার পথে আমার জীবন উত্স৷র্গ করার জন্যে প্রস্তুত৷ আল্লাহ কি আমার তওবা কবুল করবেন ?
ইমাম অত্যন্ত দয়ার্দ্র কণ্ঠে বললেন,'হ্যাঁ, আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী ৷ আল্লাহর রহমত তোমার ওপর বর্ষিত হোক ৷ হুর বললো , যুদ্ধের ময়দানে সর্বপ্রথম আমাকে যাবার অনুমতি দিন ৷
ইমাম তাকে তার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলেন৷ ওমর ইবনে সাআদ ইমামের শিবির লক্ষ্য করে প্রথম তীর নিক্ষেপ করে ৷ তার একাজের সাক্ষীও সে রেখে দেয়৷ হুর বীরবিক্রমে ইয়াযিদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে থাকেন ৷ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ে অবশেষে হুর শাহাদাত লাভ করেন ৷

কারবালায় এরকম আরো কটি চিত্র আমরা লক্ষ্য করবো ৷ যেমন আবেস ইবনে শাবিব শাকেরী ৷ তিনি ইমামের কাছে এসে বলেন , বর্তমান পৃথিবীতে তুমিই আমার কাছে সবচে প্রিয়তম ব্যক্তি ৷ হে পুন্যকারীদের সন্তান ! তুমি স্বাক্ষী থাকো , আমি তোমার এবং তোমার নানা মহানবী ( সা ) এর পথে আন্তরিকতার সাথে আপন প্রাণ উত্সমর্গ করলাম ৷ এই বলে অনুমতি নিয়ে তিনি যুদ্ধে যান ৷ আবেসকে চিনতে পেরে ওমর ইবনে সাআদের পক্ষের একজন বলে উঠলো-আমি যুদ্ধের ময়দানে আবেসের যুদ্ধ কৌশল দেখেছি ৷ সে অত্যন্ত সাহসী এক বীরযোদ্ধা ৷ একথা শুনে ওমর ইবনে সাদ অসংখ্য সেনাকে তার সাথে লড়বার আদেশ দেয়৷ অবশেষে একাকী সবার সাথে লড়ে শেষ পর্যন্ত তিনিও শাহাদাতবরণ করেন ৷ ওমর ইবনে সাআদের চাচাতো ভাই হাশেম ইবনে উতবা ইমামের খেদমতে এসে বললেন ,আমি আপনার সহযোগিতায় আমার প্রাণ বাজি রেখে এসেছি ৷ ইমাম তাঁর জন্যে দোয়া করলেন ৷ হাশেম যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে হাঁক ছাড়লো-আমি আমার চাচাতো ভাই ওমর ইবনে সাআদ ছাড়া অন্য কারো সাথে লড়তে আসি নি ৷ হে ওমর ! তুই কীভাবে দ্বীনের ইমামকে হত্যা করার জন্যে কোমর বেঁধে লেগেছিস ? ইমাম নবীজীর সন্তান ৷ কী অদ্ভুত কথা,ফোরাতের পানি রাসূলে খোদার খান্দান ব্যতীত সবার জন্যে উন্মুক্ত করেছিস ! ওমর ইবনে সাআদ চাচাতো ভাই হাশেমের সাথে লড়তে পারবে না জেনে কৌশলে তার মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজে বিরত থেকে তার সেনাদেরকে সামনে ঠেলে দেয়৷ সেনারা চারদিক থেকে হাশেমকে ঘিরে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে ৷

ওহাব ইবনে আব্দুল্লাহ তাঁর মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে কারবালায় আসে ৷ তার মা তাকে যুদ্ধে যাবার জন্যে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে বল্লেন-বাবা! কিসের অপেক্ষায় আছো ৷ ওঠো , রাসূলে খোদার পরিবারের সমর্থনে এগিয়ে যাও ৷ ওহাব যুদ্ধ করতে করতে দু'হাত হারায় ৷ মা তা দেখে বলে উঠে দাঁড়াও! রাসূলে খোদার হেরেম রক্ষা করো ৷ ইমাম হোসাইন ( আ ) কাছে এসে বললেন-হে মা ! তোমার তাঁবুতে ফিরে যাও৷ আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করবেন ৷ এভাবে ইসলাম রক্ষার্থে , নবীজীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে , সত্‍ কাজের আদেশ এবং অসত্‍ কাজের নিষেধের দায়িত্ব পালনে নির্মমভাবে শাহাদাত্বকরণ করেন ইমাম হোসাইন ( আ ) সহ তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ ৷ তাঁদের এই ঐতিহাসিক আত্মদানের মধ্য দিয়ে রচিত হয় ইতিহাসের সবচে নির্মমতম ও বেদনাঘন মহান আদর্শ ৷ যে মহা আদর্শের নায়ক হলেন নবীজীর প্রিয় সন্তান ইমাম হোসাইন ( আ ) ৷ আর প্রতিপক্ষে ছিল ইসলামের ইতিহাসের সর্বনিকৃষ্ট চরিত্র ও কাপুরুষ ইয়াযিদ ৷ এটি এমন একটি অভিশপ্ত নাম যে নামটির উচ্চারণে মুসলমানমাত্রই দ্বিধাগ্রস্ত ৷ পক্ষান্তরে ইমাম হোসাইনের নামের সাথে মিল রেখে মুসলমানরা তাদের সন্তানদের নাম রাখছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে৷ এখানেই সুস্পষ্ট হয়ে যায় সত্য-মিথ্যা ৷ এখানেই সূচিত হয় মুহররম বিপ্লবের বিজয় ৷ ইসলাম ধর্মকে ভেতর থেকে নিষ্প্রাণ ও বিকৃত করার যে প্রক্রিয়া উমাইয়া শাসকরা শুরু করেছিল ইসলামী খেলাফতের আসনে ইয়াজিদের আরোহন ছিল এই বিকৃতিকে পাকাপোক্ত করার চূড়ান্ত ব্যবস্থা ৷ আর এ সময়ই ইসলামকে চিরতরে বিকৃত করার প্রচেষ্টা নস্যাতের জন্যে এগিয়ে আসেন বিশ্বনবী (সাঃ)'র সুযোগ্য দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) ৷ একদিকে এজিদের নেতৃত্ব মেনে নেবার জন্যে প্রবল চাপ ও অন্যদিকে মুসলমানদের ইমাম হিসেবে তাঁর প্রতি কুফা নগরীর জনগণের ব্যাপক সমর্থন ঘোষণার প্রেক্ষাপটে তিনি জনগণকে ‍এজিদের তাগুতি শাসনের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ করার প্রয়াস পান এবং কুফার দিকে অগ্রসর হন ৷
কিন্তু ইমাম হোসাইন (আঃ) পথিমধ্যে এজিদের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বার বার বাধাপ্রাপ্ত হন ৷ অবশেষে কারবালার প্রান্তরে উমর বিন সাদের নেতৃত্বে ইয়াজিদের চার হাজার সেনা ৭২ জন সঙ্গীসহ ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর পরিবার পরিজনকে হয় ইয়াজিদের আনুগত্য স্বীকার নতুবা যুদ্ধ এ দুইয়ের যে কোনো একটি পথ বেছে নেয়ার আহ্বান জানায় ৷ ইমাম হোসাইন (আঃ) চূড়ান্ত যুদ্ধের আগে মহান আল্লাহর দরবারে নিবিষ্টচিত্তে শেষবারের মতো নৈশ এবাদতে মশগুল হবার জন্যে একটি দিন সময় চেয়ে নেন৷ এরপরের ঘটনা সবারই কম-বেশী জানা আছে ৷ দশই মহররম তারিখে ইমাম হোসাঈন (আঃ) ও তাঁর ৭২ জন সঙ্গী-সাথী শাহাদত লাভের কথা নিশ্চিত জেনেও বীর বিক্রমে ইয়াজিদের তাগুতী সেনাদের সাথে লড়াই করে শহীদ হন৷ তাঁদের আত্মত্যাগ ইসলাম ও মানবতার মর্যাদা রক্ষা করতে সমর্থ হয় এবং তাঁরা ইতিহাসে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাগরণের চিরন্তন প্রতীক ও ইসলাম ধর্মের প্রকৃত চেতনার রক্ষক হিসেবে অমরত্ব লাভ করেন ৷ ইমাম হোসাঈন (আঃ)ও তাঁর সঙ্গীদের বীরত্ব ও পবিত্র খুন ইসলামের চিরসবুজ বৃক্ষে পুণরায় প্রাণের সঞ্চার করে ৷ তাইতো আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বলেছেন, আঁজলা ভরে আনলো কি প্রাণ
কারবালাতে বীর শহীদান? হ্যাঁ, ইসলামকে ভেতর থেকে নিষপ্রাণ করার ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া ছাড়াও ইমাম হোসা‍ইন ও তাঁর সঙ্গীরা প্রাণের অফুরন্ত জোয়ার সৃষ্টি করে গেছেন মুক্তিকামী মানুষের প্রাণপ্রবাহে ৷ ইমাম হোসা‍ইন (আঃ)'র এ বিপ্লব যুগে যুগে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনগুলোর জন্যে আধ্যাত্মিক দিশারী হিসেবে কাজ করছে৷ ইরানে সংঘটিত ইসলামী বিপ্লবসহ বর্তমান যুগের বিশ্ব-ইসলামী জাগরণও এর ব্যতিক্রম নয়৷ একইসাথে কারবালার শহীদানদের আত্মত্যাগ শাহাদতের সংস্কৃতিকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মহিমা ও সাফল্যের প্রাণস্পর্শ ৷ এছাড়াও কারবালার বীরত্ব গাঁথার প্রতিটি পরতে খুঁজে পাওয়া যায় পবিত্র কোরআনের আলোকোজ্জ্বল শিক্ষার প্রাণবন্ত ছোঁয়া ৷ আলোকঔজ্জ্বল্যে চিরভাস্বর সেইসব কিছু দিক আমরা এখন তুলে ধরার চেষ্টা করবো ৷ পবিত্র কোরআন মানুষকে সৌভাগ্য ও মর্যাদা ও পবিত্রতার দিকে আহ্বান করে ৷ আর এজন্যেই কোরআন মানুষকে আহ্বান জানায় অন্যায় ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ৷ ইমাম হোসাঈন (আঃ)ও পবিত্র কোরআনের এ শিক্ষার আলোকেই এটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে মানুষ যেন কোনো অবস্থাতেই জালেম ও দূর্নীতিবাজ শাসকদেরকে মানুষের স্বাধীনতা, সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করার অনুমতি না দেয়৷ ইমাম হোসাঈন (আঃ) কারবালার বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের হারিয়ে যাওয়া সম্মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিলেন এবং তাতে সফল হয়েছিলেন বলেই তাঁর বিপ্লব যুগ ও স্থানের গন্ডী পেরিয়ে কালোত্তীর্ণ ও চিরন্তন মর্যাদা লাভ করেছে ৷ ঠিক এ কারণেই পবিত্র মদীনা শহরে ইয়াজিদের প্রতিনিধি যখন ইমাম হোসাঈন (আঃ)কে ইয়াজিদের আনুগত্য স্বীকারের আহ্বান জানায় তখন তিনি পবিত্র কোরআনের সুরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করে শুনিয়ে দেন যাতে খেলাফতের ওপর নবী বংশের অধিকার এবং বনি উমাইয়াদের শাসনের আইনগত ভিত্তিহীনতা ফুটে উঠে ৷ এ আয়াতে বলা হয়েছে, হে নবী পরিবার বা রাসূলের আহলে বাইত, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তো চাচ্ছেন তোমাদের হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণ পবিত্র রাখতে ৷ সত্যের পথে নির্ভিক থাকা ও একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করা পবিত্র কোরআনের আরেকটি শিক্ষা ৷ ইমাম হোসাঈন (আঃ) এমন সময় ইয়াজিদের তাগুতি শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়য়েছিলেন যখন তত্কামলীন সমাজের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ইয়াজিদের ভয়ে সন্ত্রস্ত ছিলেন ৷ এমনকি তারা ইয়াজিদের মোকাবেলা না করতে ও এ সংগ্রামে নেমে বেঘোরে প্রাণ না দিতে ইমাম হোসাঈন (আঃ)কে পরামর্শও দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু ইমাম তাঁর লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল ও পুরোপুরি আস্থাশীল ৷ তিনি তথাকথিত শান্তিকামীদের উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনের সুরা হুদের এ বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, আমি আমার সাধ্যমত সংস্কার করতে চাই, আমার কার্যসাধন আল্লাহরই সাহায্যে, আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী ৷
ইমাম হোসা‍ইন ইয়াজিদের স্বৈর ও তাগুতি শাসন মেনে নিতে অস্বীকার করে যখন বিপ্লবী উদ্দেশ্য নিয়ে মদীনা ত্যাগ করেন তখন তাঁর অবস্থা ছিল অনেকটা সূরা কাসাসে বর্ণিত ২১ নম্বর আয়াতের মতো৷ এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ ‘মূসা বললো, হে আমার প্রতিপালক তুমি জালেম সমপ্রদায়ের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করো ৷ 'পবিত্র কোরানের দৃষ্টিতে সম্মান ও মর্যাদা শুধু ঈমানদারদেরই প্রাপ্য এবং সসম্মানে মৃত্যুবরণ করা অমরত্বেরই নামান্তর ৷ অন্যদিকে কোরআন অবমাননা ও লাঞ্ছনার কাছে নতি স্বীকার করাকে পর্যায়ক্রমিক মৃত্যু বলে মনে করে ৷ আর এজন্যেই পবিত্র কোরআনের এ নীতির ভিত্তিতেই ইমাম হোসা‍ইন (আঃ) বলেছিলেন, অপমান আমাদের স্পর্শ করতে পারে না ৷ সূরা মুনাফিকুনের অষ্টম আয়াতেও বলা হয়েছে, সম্মান একমাত্র আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সাঃ) ও বিশ্বাসী বা মুমিনদের জন্যে নির্ধারিত ৷ যে কোনো সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রধান শর্ত হলো দূর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিরোধ এবং সত্‍ কাজের বিস্তার৷ পবিত্র কোরআনের সমাজে দৃষ্টিতে সত্‍ কাজের উত্সারহ ও অসত্‍ কাজের নির্দেশ না থাকলে তা দূর্নীতি এবং ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায় ৷
ইমাম হোসাইন (আঃ) এ কারণেই কারবালার মহাজাগরণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৷ তিনি ইয়াজিদের বাহিনীকে অপবিত্রতার দৃষ্টান্ত বলে মনে করতেন এবং নিজ কন্যার কাছে ইয়াজিদী শক্তির পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে সুরা মুজাদিলার ১৯ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করেছেন৷ এ আয়াতে বলা হয়েছে, শয়তান তাদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে এবং শয়তান তাদের মন থেকে আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে ৷
ইমাম হোসাইন (আঃ)'র বিপ্লবের আরো একটি বড় দিক হলো ধর্মের পুণরুজ্জীবন, নামাজ ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোর বিকাশ বা বিস্তৃতি ৷ ইমাম হোসাইন (আঃ)'র অনুসারীরা জিহাদের পাশাপাশি প্রার্থনা, নামাজ ও মহান আল্লাহর ওপর ভরসার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন ৷ ইমাম হোসাঈন (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীরা সব সময়ই, এমনকি আশুরার দিনে তুমুল সংঘাতের সময়ও জামাতে নামাজ আদায় করেছেন ৷ আশুরার রাত থেকে সূর্য্য উদয় পর্যন্ত তাঁরা নামাজ, দোয়া, তওবা ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল ছিলেন ৷ যারা আল্লাহর পথে নির্ভিক ও হাসিমুখে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে জীবন বিলিয়ে দেয়, পবিত্র কোরান তাঁদেরকে বেহেশতে সুসংবাদ দেয় এবং তাঁদেরকে আল্লাহর মনোনীত বিশেষ বান্দা বলে ঘোষণা করেছে ৷ ইমাম হোসা‍ইন (আঃ)ও তাঁর সঙ্গীদরকে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন এবং তাঁদেরকে শ্রেষ্ঠ সঙ্গী বলে অভিহিত করেছিলেন ৷
শাহাদতের অমিয় সুধা পানের জন্যে ব্যাকুল ইমাম ও তাঁর সঙ্গী ও এমনকি তাঁর কিশোর পুত্র এবং ভাতিজার কাছেও আল্লাহর পথে শাহাদত ছিল মধুর চেয়েও মিষ্টি ৷ আর এ কারণেই বলা যায়, কারবালার বিপ্লব মুসলিম সমাজের শিরায় 

সূত্রঃ ইন্টারনেট
 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন