ইমামগণ (আ.) ও ওলামাদের দৃষ্টিতে গাদীরে খুম

ইমামগণ (আ.) ও ওলামাদের দৃষ্টিতে গাদীরে খুম

ইমামগণ (আ.) ও ওলামাদের দৃষ্টিতে গাদীরে খুম
তাইমিয়াহ, হযরত আলী, আবু বকর, মহানবী, রেজা, হাসান, আম্মার, ইমাম সাদিক, আল্লাহ, ইমাম, ওলামা
মাকরিযী এ বিষয়টিকে অন্যভাবে বর্ণনা করে এ বিষয়টিকে অন্যখাতে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন, তিনি বলেন: মোয়েজুদ্দৌলাহ আলী বিন বুওয়াইহ’র যুগে ইরাকে এ ঈদ সর্বপ্রথম ঘোষণা করা হয় এবং শিয়া এ শাসক ৩৫২ হিজরীতে এ ঈদের উদ্ভাবন ঘটান।
কিন্তু মাকরিযী এহেন মন্তব্য আদৌ সঠিক নয়। কেননা মাসউদির ভাষ্য অনুযায়ী আলী (আ.) এর শিয়ারা এবং তাঁর সন্তানরা এ দিবসটিকে বিশেষ সম্মানের সাথে উদযাপন করতেন। মাসউদি ৩৪৬ হিজরিতে -অর্থাৎ মাকরিযী যে সনে এ বিষয়টির উদ্ভব হয়েছে বলে দাবী করেছেন তা হতে ৬ বছর পূর্বে- ইন্তেকাল করেন।
তৃতীয় শতাব্দির প্রখ্যাত মনীষী ফুরাত বিন ইবরাহিম ইমাম জাফার সাদিক (আ.) হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। যে হাদীসটি তিনি (আ.) তাঁর পূর্বপুরুষগণ হতে বর্ণনা করেন: আল্লাহর রাসূল (স.) বলেছেন:
یوم غدیر خم أفضل أعیاد أمتی
অনুবাদ: ‘গাদীরে খুমের ঈদ (ঈদে গাদীর) আমার উম্মতের ঈদসমূহের মধ্য হতে সর্বোত্তম ঈদ’।

ইমাম আলী (আ.) একদা –যেদিন গাদীর দিবস তথা ১৮ই জিলহজ্ব ছিল শুক্রবার- জনগণের উদ্দেশ্যে খোতবাদানকালে তাঁর খোতবার একাংশে বলেন:
ان الله عزوجل جمع لکم معشر المؤمنین فى هذا الیوم عیدین عظیمین کبیرین ...
অনুবাদ: ‘মহান আল্লাহ, আজ তোমারা মু’মিনদের জন্য একদিনে দু’টি বৃহৎ ও মহান ঈদকে একত্রিত করেছেন।

হযরত আমিরুল মু’মিনীন এ দীর্ঘ খোতবায় এ দিবসে ঈদের দিনের উপযুক্ত কাজ আঞ্জাম ও আনন্দিত থাকার প্রতি আহ্বানা জানিয়েছেন। বিস্তারিত জানার জন্য ইমাম (আ.) উক্ত খোতবার প্রতি রুজ্জু করুন।

ফুরাত বিন ইবরাহিম নিজস্ব সনদে ফুরাত বিন আহনাফ হতে, তিনি ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আমি ইমাম (আ.) কে বললাম: আপনার প্রতি উৎসর্গ হই, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, জুমআর দিন, আরাফাতের দিনের চেয়ে উত্তম আর কোন ঈদ রয়েছে কি? তিনি আমাকে বললেন:

نعم ، أفضلها و أعظمها و أشرفها عندالله منزلة، هو الیوم الذى أکمل الله فیه الدین ، و أنزل على نبیه محمد : ألیوم اکملت لکم دینکم الخ ...

অনুবাদ: হ্যাঁ, মরতবা ও মানযেলাতের দিক থেকে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম, সর্ববৃহৎ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ হল ঐ দিনটি, যেদিন মহান আল্লাহ্ তাঁর দিনকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন এবং আল ইয়াওম আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম... (আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম...) শীর্ষক আয়াতটি তাঁর প্রিয় নবীর উপর অবতীর্ণ করেছিলেন।

উসুলে কাফিতে বর্ণিত হয়েছে যে, হাসান বিন রাশেদ ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, গাদীর দিবসকে তিনি ঈদ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং নিজের কথার শেষাংশ বলেছেন:

فإن الأنبیاء صلوات الله علیهم کانت تأمر الأوصیاء بالیوم الذى کان یقام فیه الوصی أن یتخذ عیدا
অনুবাদ: নিশ্চয়ই আল্লাহর নবীগণ (তাঁদের সকলের উপর দরুদ বর্ষিত হোক) নিজের স্থলাভিষিক্তদেরকে ওয়াসি তথা স্থলাভিষিক্ত মনোনয়নের দিনটিকে আনন্দের সাথে উদযাপনের নির্দেশ দিতেন।
হাসান বলেন: আমি বললাম: যদি সেদিন কেউ রোজা রাখে তবে সে কিরূপ সওয়াব পাবে? তিনি (আ.) বললেন: ৬০ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে।
উপরোক্ত রেওয়াতের সমর্থনে আরো একটি রেওয়ায়েত রয়েছে যা খতিব বাগদাদী আবু হুরাইরা হতে বর্ণনা করেছেন। উক্ত রেওয়ায়েতে আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন: যে ব্যক্তি ১৮ই জিলহজ্বে রোজা রাখবে, তার জন্য ৬০ মাস রোজা লিপিবদ্ধ করা হবে, আর এ দিনটি হচ্ছে গাদীরের দিন।
অপর একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর নবী (স.) হযরত আলী (আ.) কে এ দিবসে মুসলমানদের রোজার রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ সম্পর্কে অসংখ্য রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে তন্মধ্যে কয়েকটি রেওয়ায়েত নিম্নরূপ:

ইমাম সাদিক (আ.) হতে মুফাজজাল ইবনে উমার কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েত, ইমাম সাদিক (আ.) হতে আম্মার ইবনে হুরাইয আবদি কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েত, ইমাম সাদিক (আ.) হতে আবুল হাসান লাইসী কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েত ও তাঁর (আ.) হতে যেয়াদ ইবনে মুহাম্মাদ কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েত।

২৫৯ হিজরীতে ফাইয়াজ বিন উমার মুহাম্মাদ বিন তুসী (তখন তার বয়স ছিল ৯০ বছরের উর্ধ্বে) বলেন: আবুল হাসান আলী ইবনে মুসা আর রেজা (আ.) কে গাদীরের দিনে দেখলাম যে, তার ঘনিষ্ট কিছু লোক তাঁর নিকটে বসে আছে। ইমাম (আ.) তাদেরকে ইফতারির আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং খাদ্য, পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী এমনকি আংটি ও জুতাও তাদের বাড়ীতে পাঠিয়ে ছিলেন... এ সময় তিনি গাদীর দিবসের ফজিলত সম্পর্কে আমাদেরকে বললেন।

মুখতাসারু বাসায়েরুদ দারাজাত গ্রন্থে মুহাম্মাদ বিন আলা হামাদানী ওয়াসেত ও ইয়াজবি বিন জুরাইহ বাগদাদীর সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা বলেন: আমরা একত্রে ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর ছাত্র আহমাদ বিন ইসহাক কুম্মি’র (মৃত্যুকাল ২৬০ হিজরী) সাথে সাক্ষাতের জন্য কোম শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। কোম শহরে পৌঁছে তার দরজার কড়া নাড়লাম। একজন ইরাকি কিশোরী এসে দরজা খুলে দিল। আহমাদ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বললো: তিনি ঈদ পালনে ব্যাস্ত রয়েছেন। কেননা আজ ঈদের দিন (১৮ই জিলহজ্ব গাদীরের দিন)। আমরা বললাম: সুবহানাল্লাহ শিয়াদের চারটি ঈদ রয়েছে; ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, ঈদে গাদীর ও জুমআর দিন...।

আল্লামা আমিনী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ আল গাদীরে, আহলে সুন্নাতের শত শত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হতে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। যেগুলো ইসলামের প্রথম শতাব্দিতে গাদীরে খুমের দিনটি ঈদ হিসেবে পালিত হওয়ার পক্ষে সমর্থন জানায়।

এ মূল্যবান গ্রন্থের একটি অধ্যায়ের প্রতি রুজ্জু করাই যথেষ্ট, যাতে শেইখাইন (আবু বকর ও উমার) হযরত আলী (আ.) মহানবী (স.) কর্তৃক মুসলমানদের অভিভাবক তথা মাওলার পদে মনোনীত হওয়ার পর তাকে মোবারক বাদ জানিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লামা আমিনী শেইখাইন কর্তৃক হযরত আলী (আ.) কে মোবারকবাদ জ্ঞাপনের বিষয়টিকে ৬০টি বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হতে বর্ণনা করেছেন।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, ইবনে তাইমিয়াহ’র ঈদে গাদীর সম্পর্কে মন্তব্য সঠিক নয় এবং এর স্বপক্ষে কোন যুক্তিসম্মত ও ইতিহাস ভিত্তিক দলিল তার নিকট নেই। উপরন্তু শক্তিশালী বিভিন্ন দলিল তার মন্তব্যের বিপরীত বিষয়টিকেই প্রমাণ করে।

উল্লেখ্য যে, ইবনে তাইমিয়াহ’র মতে: ‘এ দিন রোজা রাখার স্বপক্ষে কোন দলিল নেই, পূর্ববর্তীরা চাই তারা আহলে বাইত হোক বা অন্য কেউ, এ দিনে কেউই আনন্দ উৎসব পালন করেনি’।  সূত্রঃ ইন্টারনেট

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন